আমার উদ্যোক্তা ও শিক্ষা জীবনের গল্প : জান্নাতুন নাঈম !

আমার উদ্যোক্তা ও শিক্ষা জীবনের গল্প : জান্নাতুন নাঈম !
Spread the love

আমার উদ্যোক্তা ও শিক্ষা জীবনের গল্প : জান্নাতুন নাঈম !

আমার উদ্যোক্তা ও শিক্ষা জীবনের গল্প ! আমরা সবাই সফল হতে চাই ৷ কিন্তু ব্যর্থ হতে চাইনা ৷ অথচ ব্যর্থতা ছাড়া কখনোই সাফল্য অর্জন করা যায় না ৷ কারন, যিনি ব্যর্থ হন তিনিই শিখতে পারেন ৷ যিনি ব্যর্থ হননা তিনি কখনোই শিখতে পারেননা, মজবুত হয়ে উঠতে পারেননা ৷ তাইতো যারা ব্যর্থ হতে থাকেন আর বার বার সেই ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে থাকেন তারাই এক সময় জয়ী হন, সফল হন ৷ আমিও তাদের মত একজন ৷ যে বার বার ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত ৷ এই পর্বে আমি আমার সেই উদ্যোক্তা ও শিক্ষা জীবনের গল্প আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করবো ৷

আমার উদ্যোক্তা ও শিক্ষা জীবনের গল্পঃ

আমি জান্নাতুন নাঈম ৷ চাঁদপুর জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে ৷ গ্রাম হলেও আমাদের গ্রামটা অনেকটা উন্নত একটি গ্রাম ৷ আমার বাবা একজন শিক্ষক ৷ আর মা একসময় একজন ব্যাংকার ছিলেন ৷ তিনি অগ্রণী ব্যাংকে জব করতেন ৷ এ ছাড়াও মায়ের আরেকটা পরিচয় ছিল ৷ তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ৷ কিন্তু তিনি সেই স্বীকৃতি কখনো তার নিজ পরিবেশের বাহিরে অন্য কোথাও , অন্য কোন ভাবে পাননি ৷ হাতে গোনা কিছু মানুষ তার উদ্যোগের স্বাক্ষী ছিলেন ৷ আমি বর্তমানে একটি সরকারি কলেজে মাস্টার্স শেষ বর্ষের একজন রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্রী ৷

আমার শিক্ষা জীবনঃ

আমার জন্ম চাঁদপুর জেলায় হলেও ৫-৬ বছর বয়স থেকে এসএসসি পর্যন্ত আমার সময় কেটেছে অন্য জেলায় ৷ ছোট বেলায় পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা আর সাঁতার কাটায় মগ্ন থাকতাম বেশি ৷ তারপর এস.এস. সি. শেষ করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হই চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজে ৷ সেখানে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করি ৷ কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ হোস্টেলের পরিবেশে আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি ৷ প্রতিটি মুহুর্তে একা লাগতো নিজেকে ৷ কারন, নিজের রুম থেকে কখনোই বের হতামনা ৷

আরও পড়ুনঃ কুকিজ বানিয়ে সফল নারী উদ্যোক্তা মোসাম্মত মাহ্জাবীন !

কারো সাথে বসে বসে আড্ডা দেওয়া , গল্প করা এসব করতামনা ৷ আর আমার রুমমেটরা প্রত্যেকেই যার যার পড়াশুনা , টিউশন, প্রাইভেট পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতো ৷ তাই সেই পরিবেশের সাথে মানাতে পারিনি নিজেকে ৷ হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়ি ৷ তারপর গ্রামের একটি কলেজে পুনঃরায় পড়াশুনা শুরু করি ৷ কারন, আমি হারতে চাইনা ৷ আমাকে যে কোন ভাবেই হোক পড়াশুনা শেষ করতেই হবে ৷ তারপর চলে আসলো আমার উচ্চ মাধমিক পরীক্ষা ৷

উচ্চ মাধমিক পরীক্ষার মুহুর্তঃ

পরীক্ষার ঠিক দু’মাস আগে ফরম ফিলাপের পরে কলেজ থেকে আমাকে জানানো হয় আমার সাবজেক্ট পরিবর্তন হয়ে গেছে ৷ আমার ইতিহাস সাবজেক্টটি পরিবর্তন হয়ে অর্থনীতি এসেছে ৷ আমি পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ি ৷ বার বার পড়াশুনায় বাধা আসতেছে কিভাবে সেটা অতিক্রম করবো বুঝতে পারছিলামনা !! চিন্তায় পড়ে গেলাম ৷ তারপর ভাগ্যকে মেনে নিয়ে আমি অর্থনীতি সাবজেক্টে টানা দু’মাস সময় দেওয়ার চেষ্টা করি ৷  দু’মাস পর এইচ.এস.সি পরীক্ষা ঘনিয়ে এল ৷ হঠাৎ বিদায় অনুষ্ঠানের দিন কলেজ থেকে বলা হলো আমি যেন পরের দিন কলেজে এসে স্যারদের সাথে দেখা করি !

ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল ৷ চিন্তায় পড়ে গেলাম ৷ আবার কিছু হলো নাকি !!  তারপর পরের দিন গিয়ে যা শুনলাম তাতে আমার পায়ের তলার মাটি সরে যায় ৷  কলেজ থেকে বলা হলো, আমি এখন কোন সাবজেক্টের উপর পরীক্ষা দিতে আগ্রহী ! ইতিহাস নাকি অর্থনীতি ৷  আমার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিলনা ৷ চোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু ঝরে পড়ছে ৷ চিন্তায় পড়ে গেলাম কি করবো !  একদিকে টানা দুই বছর আমি ইতিহাস সাবজেক্টটি পড়েছি ৷  অন্যদিকে পরীক্ষার আগ মুহুর্তে যখন আমার সব সাবজেক্টগুলো রিবিশন দেওয়ার সময় তখন আমাকে অর্থনীতি সাবজেক্টটি নতুন করে টানা দু’মাস পড়তে হয়েছে ৷ বাকি সাবজেক্টগুলো আর পড়ার সুযোগ পাইনি ৷ এখন আমি কি করবো !
আমার উদ্যোক্তা ও শিক্ষা জীবনের গল্প : জান্নাতুন নাঈম !
আমার উদ্যোক্তা ও শিক্ষা জীবনের গল্প : জান্নাতুন নাঈম !

হঠাৎ স্যার বলে উঠলেন , তোমাকে ইতিহাস সাবজেক্টে’ই পরীক্ষা দিতে হবে ৷ প্রবেশপত্রে তোমার ইতিহাস সাবজেক্ট’ই এসেছে ৷ আমি আবারও চিন্তায় পড়ে গেলাম ৷ কারন, অর্থনীতি সাবজেক্টটি আসার পর থেকে আমি ইতিহাসের সকল বই, নোট সবকিছু আমি আমার অন্য বন্ধুদেরকে দিয়ে দেই ৷ এখন আমার কাছে কিছুই নেই ৷ টুকটাক কিছু লেখা অন্য কাগজে আছে ৷ কিন্তু মেইন লেখার নোটটা দিয়ে ফেলি বন্ধুদেরকে ৷ তারপর আমি তাদেরকে কল করে সবকিছু জানাই ৷ আর অনুরোধ করি আমার বইগুলো আর নোটগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য ৷ কিন্তু দিল না ৷ বাসায় এসে আম্মুকে সব জানাই ৷ আম্মু বলে দিল পরীক্ষা আর দিতে হবেনা ৷ তারপর অনেক কান্নাকাটি করে আম্মুকে বুঝিয়ে পরীক্ষা দেই এবং এইচ.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই ৷

আমার স্নাতক জীবনের লড়াইঃ

এইচ.এস.সির রেজাল্ট আসার পর বাবাকে বলি আইন নিয়ে পড়বো ৷ চাঁদপুর ‘ল’ কলেজে পড়বো ৷ বাবা রাজি হলোনা ৷ আশে পাশের মানুষজনও আমার বাবাকে বলতে থাকে মেয়েদেরকে এত বেশি পড়ানোর দরকার নেই ৷ এখন বিয়ে দিয়ে দেন ৷ আমার বাবাও মানুষের সেই কথাকেই প্রাধান্য দিতে শুরু করেন ৷ তারপর যতবার ই বাবাকে বলেছি পড়বো , বাবা না করে দিত ৷ অন্যদিকে আমি নিজে যে ভর্তি হবো, পড়াশুনা করবো সেই অবস্থানও ছিলনা আমার ৷ অনার্সের জন্য ট্রাই করতে চেয়ে ছিলাম ৷ কিন্তু আমার পড়াশুনায় সাপোর্ট দেওয়ার মত কেউ ছিলনা বলে আর অনার্সে ট্রাই করতে পারিনি ৷

একদিন আম্মুকে বলে গ্রামের একটি কিন্টারগার্ডেন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করি ৷ পাশাপাশি কিছু টিউশন পাই ৷ তাই মোটামুটি আমি অর্থনৈতিকভাবে খানিকটা স্বচ্ছল হই ৷ মনে মনে ভাবলাম, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল ৷ আইন নিয়ে যেহেতু পড়তে পারিনি, অনার্সও করতে পারিনি কিন্তু ডিগ্রিতে এখন ভর্তি চলছে ৷ তাই ডিগ্রিতে অন্ততঃ ভর্তি হয়ে যাই ৷ আম্মুকে বললাম , আমি ডিগ্রীতে ভর্তি হবো ৷ পড়াশুনা করবো ৷

আরও পড়ুনঃ সৃজনশীল নারী উদ্যোক্তা নাহিমা খন্দকার তরু !

আমি এভাবে হেরে যেতে চাই না ৷ আম্মু রাজি হয়ে গেল ৷ তারপর আম্মুকে সাথে নিয়ে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের একটি কলেজে স্নাতকে ভর্তি হই বাবার অগোচরে ৷ টানা একটা বছর আমি বাবার অগোচরে শিক্ষকতা, টিউশন ও পড়াশুনা করি ৷ কারন, বাবা থাকতেন চাকুরি সূত্রে অন্য জেলাতে আর আমরা নিজ জেলাতে থাকতাম ৷ এক বছর পর আব্বু জানতে পারে আমি ডিগ্রীতে পড়াশুনা করছি ৷ তখন তিনি আমার পড়াশুনা মেনে নেন এবং পড়াশুনার খরচ চালাতে রাজি হন ৷ তারপর আমি পড়াশুনায় সময় দিতে গিয়ে ১ বছর পর শিক্ষকতা ছেড়ে দেই ৷

স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শেষের দিকে চলে আসে আমাদের পারিবারিক জীবনে কালবৈশাখী ঝড় ৷ আমার পড়াশুনা বন্ধের পেছনে বহু মানুষ দাঁড়িয়ে যায়, বহুভাবে চক্রান্ত করে ৷ এমনকি আমার দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে আমার উপর আক্রমণ করা হয় , আমার দু’টো হাত মুচড়ে দেওয়া হয় যাতে পরীক্ষাটা দিতে না পারি ৷ এমনকি গৃহবন্দী করেও রাখতে চেয়ে ছিল আমার কিছু প্রতিবেশীরা ৷ কিন্তু আমি সেই সময়টায় কারো কাছে হারতে চাইনি ৷ তাই তাদেরকে ভয় না করে , মনে সাহস যুগিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে জোর করেই মুমূর্ষ অবস্থায় পরীক্ষাটা দিয়ে ফেলি ৷ রেজাল্টও এসে ছিল ফার্স্ট ক্লাস ৷

আমার মাস্টার্স জীবনঃ 

স্নাতক শেষ করার পর ২০১৮ সালে আমি পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসি ৷ তারপর পরিবারকে জানাই আমি মাস্টার্সে ভর্তি হবো ৷ কিন্তু বাসা থেকে কেউ রাজি হচ্ছিলনা ৷ শুধুমাত্র আম্মু চাইতো আর আমার ছোট বোন চাইতো আমি মাস্টার্স শেষ করি ৷ আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আম্মুর অবদান আমাদের উপর অনেক বেশি ৷ তাই আম্মুর অনুমতি হলেই যথেষ্ট হতো ৷ তারপর আম্মুর অনুমতি নিয়েই মাস্টার্সে ভর্তি হই নারায়ানগঞ্জের একটি সরকারি কলেজে ৷ ঢাকা থেকেই ক্লাস করতাম আমি ৷ প্রিলিমিনারি এক বছর শেষ করে এখন আমি মাস্টার্স শেষ বর্ষের শেষ পর্যায়ে ৷ কিন্তু আমার আম্মু, আমার ছোট বোন আর আমার শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাড়া মাতৃকুল-পিতৃকুল থেকে কিছু আত্নীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা কেহই চাননা আমি মাস্টার্স পরীক্ষাটা দেই ৷ কারন, তাদের অনেকের সন্তানরা, এমনকি কেউ কেউ শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ে গেছে ৷

তাই যত রকমের চক্রান্ত করা দরকার সবটাই করা হয়েছে ৷  এমনকি সেই চক্রান্তের স্বীকার হয়ে আমাদেরকে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে আসতে বাধ্য করেছে ৷ তবুও আমি হাল ছাড়িনি ৷ এখনো আশাবাদী ৷ নিশ্চই আল্লাহ কোন না কোন উপায়ে আমাকে সাহায্য করবেন ৷ যাতে আমি মাস্টার্স পরীক্ষাটা দিতে পারি ৷

আমার উদ্যোক্তা ও শিক্ষা জীবনের গল্প : জান্নাতুন নাঈম !
উদ্যোক্তা ও শিক্ষা জীবনের গল্প : জান্নাতুন নাঈম !

আমার ফ্রিল্যান্সিং ও উদ্যোক্তা জীবনঃ

২০১৮ সালে ঢাকায় আসার পর চিন্তা করলাম একটা মুহূর্ত সময়ও নষ্ট করা যাবেনা ৷ গ্রামে কোন কিছু করা এবং শেখার সুযোগ পাইনি ৷ তাই ঢাকায় এসে সেই সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবেনা ৷ তাই ২০১৮ সালে নিজ উদ্যোগে পরিবারের অন্য সদস্যদের অগোচরে মায়ের অনুমতি নিয়ে আমি ৫ হাজার টাকার মুলধন নিয়ে বিজনেস শুরু করি ৷ আমার বিজনেসটি মুলতঃ দেশীয় তাঁত জাতীয় পণ্যের ৷ আমার বিজনেস পেইজ Style Icon Fashion . কিন্তু বিজনেসটা শুরু করার পর আমি চূড়ান্ত পর্যায়ে হতাশ হয়ে যাই ৷ চারিদিক থেকে অনেকেই আমাকে ম্যাসেজ করতে থাকে আর বলতে থাকে আমার বিজনেস পেইজ সাজাতে হবে , লোগো করতে হবে ৷ তা না হলে সেল হবেনা ৷ বিজনেস চলবেনা ৷

আরও পড়ুনঃ একজন নারী উদ্যোক্তা শাম্মী ফেরদৌসী !

তারপর তাদেরকে রিকোয়েস্ট করি আমাকে একটি লোগো করে দেওয়ার জন্য এবং আমার বিজনেস পেইজটা সাজিয়ে দেওয়ার জন্য ৷ কিন্তু তারা যে পরিমানে ডিজাইনের আর পেইজের চার্জ চেয়েছিল তা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিলনা ৷ যেখানে একটা লোগো ডিজাইন করতে ১৫ হাজার টাকার নিচে কেউ চায়নি সেখানে বিজনেস কন্টিনিউ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি ৷ তারপর ১ সপ্তাহের মাথায় বিজনেসটা বন্ধ করে দেই ৷ বাসায় খুব কান্না কাটি করি এবং মনের মধ্যে তখন জিদ চেপে যায় ৷ তখন মনে হয়েছে আমাকে যে কোন মুল্যেই গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে হবে ৷ যাতে নিজের কাজগুলো অন্ততঃ নিজে করতে পারি ৷

আমার গ্রাফিক্স ডিজাইন প্রশিক্ষণের মুহুর্তঃ

বিজনেস বন্ধ হওয়ার পর আমার ছোট ভাই আম্মুকে বিভিন্ন ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করে যাতে আম্মু আমাকে একটা কম্পিউটার কিনে দেয় ৷ সে চাইতো আমি ফ্রিল্যান্সিং করি ৷ কারন, সে নিজেও একজন ফ্রিল্যান্সার ৷ কিন্তু আমার কখনো ফ্রিল্যান্সিং করার ইচ্ছে ছিলনা ৷ আমি সব সময় চাইতাম আইনজীবী হবো ৷ আর দেশীয় তাঁত নিয়ে , তাঁতীদের নিয়ে কাজ করবো ৷ কিন্তু তার ইচ্ছে আমি যেন ফ্রিল্যান্সিং করি ৷ অনেকটা প্রফেশনটাকে আমার জীবনে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছিল ৷ কিন্তু আমি শুধু শেখার উদ্দেশ্যে আর আমার বিজনেসের বিভিন্ন প্রয়োজনে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইনটা শিখতে চেয়ে ছিলাম ৷

আরও পড়ুনঃ কিশোর উদ্যোক্তা রাফি ইসলাম রিশাদ ! 

তারপর আম্মু নিজে থেকে তার টাকা দিয়ে আমাকে একটি কম্পিউটার কিনে দেয় ৷ বাবাকে বলে ছিলাম গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রশিক্ষণ নিব ৷ কিন্তু ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করে শেখার অবস্থা ছিলনা আমার ৷ পরক্ষণেই হঠাৎ একটি পেইজ নজরে পড়ল ৷ তারা স্কলারশিপে প্রশিক্ষণের সুযোগ দিচ্ছেন ৷ তবে শর্ত হলো পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হবে ৷ তারপর পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হবে ৷ এরপর আমি আম্মুকে সাথে নিয়ে সেই প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দেই ৷ ৯০% স্কলারশিপ পাই ৷ তারপরও ৬ হাজার টাকা দিয়ে আমাকে গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর প্রশিক্ষণ নিতে হয় ৷ এই টাকাটা আমার বাবা দেন ৷

তারপর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই শুরু হয় আমার গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর প্রশিক্ষণ ৷ টানা প্রায় সাড়ে ৪ মাস আমাদের প্রশিক্ষণ চলে ৷ শুরু হয় আমার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার ৷ অনেকটা জোর করে ৷ তবে টানা ১ বছর দিন – রাত এক করে আমি লোগো নিয়ে কাজ করেছি ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে ৷ যেমন- ফ্রিল্যান্সার, ডিজাইনক্রাউড, ফাইবার ইত্যাদি ৷ বেশ কয়েকটি ডিজাইন উইনও করেছি ৷ ফ্রিল্যান্সিংয়ের ব্যপার হলো শুধু কাজ করলে হবেনা ৷ নিয়মিত প্রশিক্ষণও নিতে হবে , শিখতে হবে , জানতে হবে ৷ তাই আমি নিয়মিত কাজের চেয়ে শেখার দিকে সময় দিয়েছি বেশি ৷ এখনও দিচ্ছি ৷

আমার ফ্রিল্যান্সিংয়ে অনীহা থাকার কারনঃ

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে প্রয়োজন রাত – দিন কম্পিউটারে থেকে কাজ করা ৷ যিনি যত বেশি সময় দিয়ে কাজ করতে পারবেন, শিখতে পারবেন তিনি তত বেশি সফল হবেন সেটাই স্বাভাবিক ৷ কারন, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে একটা কাজ পাওয়া চারটিখানি কথা নয় ৷ এখানে রয়েছে প্রতিযোগীতা ৷ আর আমার সমস্যা হলো আমি এমনিতেই বাসা থেকে খুব বেশি বের হইনা ৷ তার উপর ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করলে মোটেও বের হবোনা ৷ এতে আমি শারিরীকভাবে অসুস্থ্য হয়ে যাব ৷ কিন্তু বিজনেস করলে মোটামুটি বাহিরের পরিবেশের সাথে আমি মিশতে পারবো, আলো – বাতাস পাবো ৷  অনিচ্ছা থাকলেও কাজের সূত্রে বাহিরে যেতে পারবো ৷ তাই বিজনেসটাই আমার জন্য পারফেক্ট মনে হয়ে ছিল ৷

তারপরও আমি বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজগুলোও বিজনেসের পাশাপাশি করছি ৷ তবে বেশিরভাগ কাজ ই ফেইসবুকের মাধ্যমে করছি ৷ বাংলাদেশীদের কাজগুলো মূলতঃ বেশি করছি ৷ আমার আইটির পেইজের নাম TechPro InDesign.

আমার উদ্যোক্তা ও শিক্ষা জীবনের গল্প : জান্নাতুন নাঈম !
উদ্যোক্তা ও শিক্ষা জীবনের গল্প : জান্নাতুন নাঈম !

ডিজিটাল মার্কেটিং ও অন্যান্য প্রশিক্ষণঃ

গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরও আমি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি ৷ এ ছাড়াও অফিশিয়াল কোর্স অর্থাৎ Microsoft word, Exel,  PowerPoint এর উপরেও প্রশিক্ষণ নিয়েছি ৷ যদিও বিভিন্ন সমস্যার কারনে পুরোপুরি প্রশিক্ষণটা শেষ করতে পারিনি ৷  প্রশিক্ষণের মুহূর্তেই চলে আসতে হয়েছে গ্রামে । পাশাপাশি এসইও – এর উপরও কিছুটা প্রশিক্ষণ নিয়ে রেখেছি ৷

পুনঃরায় বিজনেসে ফিরে আসাঃ

২০১৮ সালে বিজনেস বন্ধ হওয়ার পর পুনঃরায় ১ বছর পর আবারও আমি বিজনেস শুরু করি ২০১৯ সালের জুন মাসের ৮ তারিখ ৷ এখন আমার পেইজের লোগো থেকে শুরু করে ভিজিটিং কার্ড , পেইজ সাজানো সবকিছু আমি নিজেই করেছি ৷ বর্তমানে আমি দেশীয় বিভিন্ন তাঁতের পণ্য নিয়ে বিজনেস করছি ৷ পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং ও ব্লগিংও করছি ৷

ব্লগ ওয়েবসাইট খোলার কারনঃ

ছোট বেলা থেকেই আমার লেখালেখি করতে ভালো লাগে ৷ পড়ার চেয়ে লেখায় অভ্যস্ত ছিলাম বেশি ৷ আমি যেহেতু একজন ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তা ৷ তাই অনেক সময় অনেকেই আমাকে নক করেন ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানার জন্য ৷ এ ছাড়াও যেহেতু এফ কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি তাই পন্য সম্পর্কে অনেক কিছুই আমাদেরকে জানতে হয় ৷ অনেক পড়াশুনাও করতে হয় ৷ আর সেই সাথে আমি খুব প্রকৃতি পছন্দ করি, ঘুরতে ভালোবাসি ৷ তাই চিন্তা করলাম আমি আমার একটা ওয়েবসাইটে এই বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে পারি ৷ যাতে অন্যরাও জানতে পারে ৷

আরও পড়ুনঃ একজন সফল কিশোরী উদ্যোক্তা জুম্মা জাফরিন !

পাশাপাশি আমার সমসাময়িক যারা উদ্যোক্তা আছেন তাদের উদ্যোক্তা জীবনের গল্পটাও শেয়ার করার কথা ভেবেছি ৷  যাতে অন্যরাও অনুপ্রেরনা পায় এবং উদ্যোক্তারাও এগিয়ে যায় ৷

আমি বর্তমানে গ্রামে রয়েছি ৷ এখানে যেমন নেটের সমস্যা তেমনি বিদ্যুতেরও সমস্যা ৷ একবার ওয়াইফাই নেট চলে গেলে ২৪ ঘন্টা ৩৫ ঘন্টায়ও আসেনা ৷ মাসের অনেকটা সময় ই নেট থাকেনা ৷ আবার সারাদিন লোড শেডিংও লেগে থাকে ৷ তার মধ্যে থেকেও আমি আমার ওয়েবসাইটে লেখালেখি করার চেষ্টা করছি ৷ প্রতিটি বাধাকে অতিক্রম করে নিজের কাজগুলো নিয়মিত করার চেষ্টা করছি ৷

পরিশেষে, 

আমার উদ্যোক্তা ও শিক্ষা জীবনে অনেক বাধা এসেছে । তাই বলে হাল ছাড়িনি কখনো । জীবনে অনেক বাধা আসবে, সংগ্রাম আসবে, প্রতিকূল পরিস্থিতি আসবে ৷ অনেক সময় অনেক কিছু হারাতেও হবে তাই বলে ভাববেননা আপনি হেরে গেছেন, আপনি শেষ হয়ে গেছেন ৷ আপনাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে প্রতিনিয়ত ৷ মনে রাখবেন, আপনার খারাপ সময় কখনোই আপনার দূর্বলতা নয় ৷ বরং একেকটা শক্তি , সাহস ৷ আমি কখনো আমার খারাপ সময়কে, আমার লড়াইকে, আমার সংগ্রামকে, আমার প্রতিকূল পরিস্থিতিকে আমার দূর্বলতা মনে করিনা ৷

আরও পড়ুনঃ একজন সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তা বাম্পী রায় !

যারা দূর্বলতা মনে করেন এটা তাদের ই ব্যর্থতা, তাদের ই সমস্যা ৷ আমার নয় ৷ বরং আমি আমার জীবনের প্রতিটি খারাপ সময়কে আমার জীবনের একেকটা শক্তি, সাহস মনে করি ৷ ঘুরে দাঁড়ানোর হাতিয়ার মনে করি ৷ নিজেকে যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলার উপকরন মনে করি ৷ এই খারাপ সময়গুলো আমাকে অনেক কিছু শিখেয়েছে, বুঝিয়েছে এবং এখনো শিখেয়ে যাচ্ছে, বুঝিয়ে যাচ্ছে ৷ আজ না হয় কাল কিংবা বছর খানেক পর বা কয়েক বছর পর হয়তো আমি আমার লক্ষ্যে পৌছতে পারবো ইনশাআল্লাহ ৷ তার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি অবিরত ৷

আমার বিশ্বাস আমার চেষ্টা , আমার পরিশ্রম আমাকে কখনোই খালি হাতে ফেরত দিবেনা ৷  নিশ্চই মহান আল্লাহ আমার পরিশ্রমের মুল্য, চেষ্টার মুল্য ঠিক ই একদিন দিবেন ৷

 

আমার বিজনেস পেইজঃ Style Icon Fashion.
আইটি পেইজঃ TechPro InDesign
ব্লগ পেইজঃ Jannatun Naime.
Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/
Top

You cannot copy content of this page