শুভলং ঝর্ণার নৈস্বর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য !

শুভলং ঝর্ণার নৈস্বর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য !
Spread the love

শুভলং ঝর্ণার নৈস্বর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য !

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যের পসরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাঙ্গামাটি জেলার পাহাড়ি ঝর্ণা “শুভলং ঝর্ণা”৷ শুভলং ঝর্ণার চারপাশ জুড়ে রয়েছে নৈস্বর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ৷ এই ঝর্ণার নির্মল জলধারা ভ্রমণপিপাসুদের মনে এক ভিন্ন অনুভূতির কাঁপন তোলে ৷ অপরূপ সৌন্দর্য্যের এ ঝর্ণার নয়ানাভিরাম দৃশ্য স্বচোক্ষে না দেখলে কল্পনায় তার ছবি আঁকা কি কখনো সম্ভব ? মোটেই নয় ৷ তার জন্য প্রয়োজন স্বচোক্ষে তার রুপ মাধুরীতে মুগ্ধ হওয়া ৷

শুভলং ঝর্ণার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যঃ

অনাবিল সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি ৷ তাই ভ্রমণপিপাসুদের কাছে রাঙ্গামাটি হলো অতি প্রিয় একটি নাম ৷ আর তার ই বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে নির্মল জলধারা “শুভলং ঝর্ণা”৷ পাহাড়ের বুকে ভরা পূর্ণিমা রাতে হ্রদের পানিতে মৃদু ঢেউয়ের উপর যে জ্যোৎস্নার ঝলকানি রূপমাধুরীতে ভরে উঠে তা যে কাউকেই মুগ্ধ করবে এক নিমিশেই ৷ তাইতো প্রতিদিনই শত শত পর্যটক ছুটে আসেন এই শুভলং ঝর্ণায় ৷

আরও পড়ুনঃ নেত্রকোণা জেলার দর্শনীয় স্থান দুর্গাপুরের বিরিশিরি !

বর্ষা ঋতুতে এ ঝর্ণা হয়ে ওঠে নবযৌবনা ৷ এর আকর্ষণীয় দিক হলো এই ঝর্ণার পানি একক ধারায় না পড়ে তার উঁচু অবস্থান থেকে ছোট ছোট কয়েকটি ধারায় একই সমান্তরালে নেমে আসে ৷ যার ফলে ঝর্ণা থেকে উপচে পড়া পানির ধারাটি অপূর্ব নয়ানাভিরাম সৌন্দর্য্যের জন্ম দেয় ৷ যা এক নিমিশেই মুগ্ধ করে সকল পর্যটকদের ৷ ঝর্ণার পানি উপর থেকে পড়ার সময় খুব সীমিত জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে ৷ যার ফলে এই ঝর্ণাধারা উপভোগ করতে পারবেন খুব কাছ থেকেই ৷

পাহাড়ের বুক বেয়ে পাথুরে মাটিতে আঁচড়ে পড়া ঝর্ণাধারার অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য মুগ্ধ করবে যে কাউকেই ৷ তবে আপনি চাইলে এ ঝর্ণার শীতল পানিতে স্নান করে শরীর জুড়িয়ে নিতে পারেন ৷ কাঁচের মত স্বচ্ছ ও স্নিগ্ধ এ জলধারা আপনার সকল ক্লান্তিকে মুছে দিবে এক নিমিশেই ৷ যদিও শুস্ক মৌসুমে ঝর্ণার এই জলধারা শুকিয়ে যায় ৷ তবে বর্ষার সময় তার পুরোনো যৌবন আবারও ফিরে পায় ৷ যা দেখে ভ্রমণপিপাসুদের হৃদয়ে শিহরণ সৃষ্টি করে এবং পর্যটকদের বেশ আকৃষ্ট করে ৷

শুভলং ঝর্ণার নৈস্বর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য !
ছবিঃ শুভলং ঝর্ণার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য !

শুভলং ঝর্ণার অবস্থানঃ

রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে শুভলং বাজারের পাশেই অবস্থিত শুভলং ঝর্ণা ৷ পাহাড়ের বুক ছিড়ে আঁচড়ে পড়া এই ঝর্ণাধারা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে অবিরাম প্রবল জলধারা পতিত হয় কাপ্তাই লেকে ৷ তারপর এক নিমিশেই মিশে যায় কাপ্তাই হ্রদের বুকে ৷ যা মুগ্ধ করে সকল পর্যটকদের ৷ স্রোতধারার এই শীতল কলতান উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে দেয় চারপাশ ৷ যেন সবুজ অরন্যের বুকে প্রাণের ছোঁয়ার পরশ অ্যাঁকেছে কেউ ৷

কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকার ফকিরাপুল মোড় ও সায়দাবাদে রাঙ্গামাটি যাওয়ার অসংখ্য বাস কাউন্টার রয়েছে ৷ এই সকল বাসগুলো সকাল ৮টা থেকে ৯টা এবং রাত ৮টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১১টার মধ্যে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় ৷ আপনি চাইলে এই বাসগুলোর মাধ্যমে রাঙ্গামাটি পৌছতে পারেন ৷ বাস ভাড়া হতে পারে যথাক্রমে এসি বাসের জনপ্রতি সীট ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা ৷ আর নন-এসি সীট ভাড়া হতে পারে জনপ্রতি ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে৷

আরও পড়ুনঃ কাপ্তাই লেক এর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য !

তারপর রাঙ্গামাটি শহর থেকে শুভলং ঝর্ণায় যেতে হলে নৌ পথে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার রিজার্ভ করে যেতে হবে ৷ সেক্ষেত্রে রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার থেকে কিংবা পর্যটন এলাকা থেকে ট্রলার রিজার্ভ করতে পারেন ৷ এগুলোর ভাড়া হতে পারে আকার অনুযায়ী বিভিন্ন রকম ৷ তবে ভাড়া সাধারণত আকার অনুযায়ী ১২০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে ৷ সময় লাগতে পারে মূল শহর থেকে শুভলং ঝর্ণায় দেড় ঘন্টার মত ৷

শুভলং ঝর্ণার নৈস্বর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য !
ছবিঃ শুভলং ঝর্ণার নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্য !

থাকবেন কোথায়ঃ

রাঙ্গামাটি শহরের পুরাতন বাস স্ট্যান্ড ও রিজার্ভ বাজার এলাকায় বেশ কিছু হোটেল রয়েছে ৷ তবে হোটেলে উঠার আগে একটু বিবেচনা করে নিবেন ৷ যেমন- আপনি যেই হোটেলে উঠতে চাচ্ছেন সেটি কাপ্তাই লেকের পাশে কিনা ! যদি কাপ্তাই লেকের আশে পাশের হোটেল হয় তাহলে একই সাথে হোটেল থেকে উপভোগ করতে পারবেন কাপ্তাই লেকের মনরোম প্রাকৃতিক দৃশ্য ও হিমেল হাওয়া ৷ এছাড়াও থাকার জন্য রাঙ্গামাটিতে সরকারী ও বেসরকারী অসংখ্য হোটেল ও গেষ্ট হাউজ রয়েছে ৷ আপনি চাইলে সেখানেও থাকতে পারেন ৷ আপনাদের জানার সুবিধার্থে আমি বেশ কিছু হোটেলের নাম বিস্তারিত উল্লেখ করার চেষ্টা করছি !

      • হোটেল সুফিয়াঃ এখানে প্রায় ২৭টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছে ৷ প্রতিটি একক রুমের ভাড়া ৯০০ টাকা ৷ দ্বৈত রুমের ভাড়া ১২৫০ টাকা ৷ এছাড়াও এখানে ৩৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণহীন রুম রয়েছে ৷ প্রতিটি রুমের ভাড়া ৬০০ টাকা ৷ এই হোটেলটির অবস্থান ফিসারী ঘাট, কাঁঠালতলী, রাঙ্গামাটি ৷
      • পর্যটন হলিডে কম্প্লেক্সঃ এখানে প্রায় ১২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছে ৷ প্রতিটি রুমের ভাড়া ১৭২৫ টাকা থেকে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে ৷ এছাড়াও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণহীন রুম রয়েছে ৭টি ৷ প্রতিটি রুমের ভাড়া ৮০৫ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে ৷ এই হোটেলটির অবস্থান হেংগিং ব্রিজ রোড, রাঙ্গামাটি ৷
      • হোটেল গ্রীন ক্যাসেলঃ এই হোটেলে প্রায় ৭টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছে ৷ প্রতিটি রুমের ভাড়া ১১৫০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত ৷ এছাড়াও ১৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রনহীন রুম রয়েছে ৷ প্রতিটি রুমের ভাড়া ৭৫০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত ৷ এই হোটেলটির অবস্থান রিজার্ভ বাজার, রাঙ্গামাটি ৷

এছাড়াও আরো বেশ কিছু হোটেল রয়েছে ৷ যেমনঃ হোটেল আল মোবা, হোটেল জজ, হোটেল মাউন্টেন ভিউ, রংধনু গেস্ট হাউজ, পর্যটন মোটেল, হোটেল ডিগনিটি, হোটেল ড্রিমল্যান্ড, হোটেল সাফিয়া, হোটেল প্রিন্স, মতি মহল, হোটেল জুম প্লেইস, হিল তাজ রিসোর্ট ইত্যাদি ৷

শুভলং ঝর্ণার নৈস্বর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য !
ছবিঃ শুভলং ঝর্ণা !

খাবেন কোথায়ঃ

শুভলং এলাকায় থাকা-খাওয়ার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই ৷ তাই আপনাকে দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে হবে রাঙ্গামাটি শহরে ৷ এখানে বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে ৷ তবে খাবারের পূর্বে খাবারের প্রাইস ভালোভাবে জেনে নিবেন ৷ অনেক সময় দেখা যায় দেশী মুরগীর অর্ডার দিলে তারা কক মুরগী দিয়ে দেন ৷ এছাড়া কাপ্তাই লেকের কাচকি ভূূনা বা ফ্রাই দারুন মজা হয় ৷ তাই মিস করবেননা কোন ভাবেই !

আরও পড়ুনঃ চাঁদপুর জেলার দর্শনীয় স্থান মিনি কক্সবাজার !

ভ্রমণের কিছু গুরুত্বপূর্ন টিপস ও সতর্কতাঃ

      • শুভলং ঝর্ণার অপরুপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে যেতে পারেন ভরা বর্ষা মৌসুমে বা তার পরের সময় ৷
      • শীতের সময় সাধারণত ঝর্ণায় খুব কম পানি থাকে ৷
      • ভ্রমণ করতে চাইলে ছুটির দিন ব্যতীত গেলে খরচ তুলনামূলক কম হবে ৷
      • ট্রলার/বোট রিজার্ভ করার সময় ঠিকমত দরদাম করে নিন এবং কি দেখবেন, কোথায় যাবেন তা ভালোভাবে বলে দিন ৷
      • লেকের আশেপাশে যে কোন হোটেল ঠিক করতে পারেন ৷ এতে লেকের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন খুব সহজেই ৷
      • সাঁতার না জানা থাকলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখুন ৷
      • পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন ৷
      • স্থানীয় মানুষদের সাথে সর্বদা শালীন আচরণ করুন এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখুন ৷

পরিশেষে, ভ্রমণ যেমন আমাদের আত্মিক বিনোদনের খোরাক, ভালো থাকার একটুখানি উপায় তেমনি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও আমাদের বিনোদনের একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান ৷ তাই ভ্রমণকালে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা যাবেনা ৷ কারণ, পরিবেশ যেমন আমাদের তেমনি পরিবেশের ভালো-মন্দের দায়িত্বও আমাদের ৷

Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/
Top

You cannot copy content of this page