জুয়েলারি নিয়ে উদ্যোক্তা বিনতুর এগিয়ে চলার গল্প ! উদ্যোক্তাদের গল্প সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তার গল্প by Jannatun Naime - February 28, 2022February 28, 20220 Spread the love জুয়েলারি নিয়ে উদ্যোক্তা বিনতুর এগিয়ে চলার গল্প ! জুয়েলারি নিয়ে এগিয়ে চলছেন নারী উদ্যোক্তা তানিমা ইসলাম বিনতু। যিনি হাতের তৈরি জুয়েলারি এবং টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে কাজ করছেন বেশ কিছু দিন যাবৎ। বর্তমানে তিনি নিজের হাতে তৈরি করছেন নানা রকম নান্দনিক গহনা। পাশাপাশি অনলাইনেও বিজনেস করছেন টাঙ্গাইলের শাড়ি নিয়ে। এই পর্বে আমরা জানবো তার উদ্যোগ এবং বিজনেস নিয়ে তার এগিয়ে চলার গল্প। উদ্যোক্তা তানিমা ইসলাম বিনতুঃ আমি তানিমা ইসলাম বিনতু। একজন ইন্টার পড়ুয়া শিক্ষার্থী। পাশাপাশি নিজের হাতে তৈরি করছি নানা রকম নান্দনিক গহনা এবং ব্যাবসায়ী জীবন শুরু করেছি হাতের তৈরি গহনা ও টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে। আমার উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হয়ে উঠার কারনঃ এসএসসি পরীক্ষার পর থেকেই নিজেকে স্বাবলম্বী করার ইচ্ছে জেগে ছিল আমার। তাই নিজের ইচ্ছে পূরন করার জন্যই আজ আমি একজন উদ্যোক্তা। আমার মনে হতো নিজে কিছু করার মাঝে যেই শান্তি আছে তা আর অন্য কিছুতে নেই। আমার সবসময় এই কথা মনে হতো যে, আমার আসলেই কিছু করা উচিত। নিজের পরিচয় তৈরি করা উচিত। যেহেতু, সবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি তাই চাকরি করা এই মূহুর্তে কোন ভাবেই সম্ভব না। তাই বিকল্প হিসেবে তখন ব্যবসার কথা মাথায় আসে। তারপর থেকেই বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়ানো এবং ভাই -বোন এবং নিজের চাহিদাগুলো পূরণ করার জন্যই হয়ে গেলাম ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। ছবিঃ জুয়েলারি ! আমার উদ্যোগঃ আমি হাতের তৈরি গহনা অনেক পছন্দ করি। একদিন নিজের জন্য একটি জুয়েলারি বানানোর পর অনেক ভালো লেগে যায় আমার। তখন থেকেই হাতের তৈরি গহনা নিয়ে কাজ শুরু করি। তারপর থেকে এক পা, দু’পা করে এগিয়ে চলছে আমার উদ্যোগ। হাতের তৈরি গহনার সাথে সংযোজন করি টাঙ্গাইলের শাড়ি। এভাবেই শুরু হয় আমার উদ্যোগ ও ব্যবসায়ীক জীবনের পথ চলা। আমার উদ্যোগের নাম – Bintu’s Dream ও Bintu’s jewellery হাতের তৈরি গহনার বর্তমান চাহিদাঃ বর্তমানে হাতের তৈরি গহনার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ফ্যাশন সচেতন নারীরা চায় ইউনিক ডিজাইনের গহনা। এই গহনাগুলো আমার নিজের তৈরি করা হয় বলে নিজের ইচ্ছে মতো যেকোন ডিজাইন তৈরি করা যায়। সবাই চায় নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে। তাই নারীদের পছন্দের তালিকায় সব সময় ই থাকে গহনা। আমার হাতের তৈরি এই গহনাগুলো ইউনিক ডিজাইন হওয়ায় আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই সাড়া পাচ্ছি। ভবিষ্যতে আল্লাহ চাইলে চারিদিকে ছড়িয়ে যাবে আমার গহনা ইনশাআল্লাহ। হাতের তৈরি গহনার ভবিষ্যত চাহিদাঃ গহনা ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছেন। হাতের তৈরি গহনা সব সময়ের জন্যই খুব ই জনপ্রিয়। এর অনেক চাহিদাও রয়েছে। ভবিষ্যতে এর চাহিদা আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, মানুষ দিন দিন অনেক বেশি সৌন্দর্য সচেতন হচ্ছে। ছবিঃ টাঙ্গাইল শাড়ি ! টাঙ্গাইল শাড়ির বর্তমান চাহিদাঃ বর্তমানে টাঙ্গাইল শাড়ির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ফ্যাশন সচেতন নারীরা চায় ইউনিক ডিজাইনের শাড়ি। তাই টাঙ্গাইল শাড়ির ইউনিক ডিজাইনের জন্য বর্তমানে সারা দেশব্যাপী টাঙ্গাইল শাড়ি অনেক বিখ্যাত। টাঙ্গাইল শাড়িতে আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই সাড়া পাচ্ছি। ভবিষ্যতে আল্লাহ চাইলে আরো সাড়া পাবো ইনশাআল্লাহ। টাঙ্গাইল শাড়ির ভবিষ্যত চাহিদাঃ শাড়ি ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছেন। টাঙ্গাইল শাড়ি সব সময়ের জন্যই অনেক জনপ্রিয়। এই ইউনিক ডিজাইনের জন্য ভবিষ্যতে এর চাহিদা আরো বেড়ে যাবে বলে আসা করা যাচ্ছে। যাদের সার্পোট পেয়েছিঃ আমার বড় বোন ছাড়া পরিবারের কারোর সার্পোট ই আমি পাই নি। আমার বোনের উৎসাহ না পেলে কাজগুলো কখনোই করতে পারতাম না। কারন, প্রথম অবস্থায় আমার এগুলো সম্পর্কে কোন আইডিয়া ছিল না। অনেক ভুল করতাম। তখন আমার বোন সব সময় আমাকে সার্পোট দিয়েছে। আর বলতো, “ভুল থেকেই শিখতে হয়। লেগে থাক তুই পারবি ইনশাআল্লাহ।” এভাবেই আপু আমাকে সার্পোট করেছে। তারপর আস্তে আস্তে সবার ই সার্পোট পেয়েছি। ছবিঃ জুয়েলারি ! উদ্যোক্তা জীবনের বাধা-বিপত্তিঃ উদ্যোগ শুরু করেছিলাম ২০২০ সালে। তার ই কিছুদিন পর হঠাৎ করে আমার মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। আমার সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। মা কে নিয়ে হাসপাতাল-বাড়ি করতে করতে ডিপ্রেশনের চরম পর্যায়ে চলে যাই। নিজের স্বপ্নগুলো সব ভুলে যাই। মাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ আমার মা মারা যান। তখন পুরোপুরি ডিপ্রেশনে চিলাম। আমার বোনের সার্পোটে সেখান থেকে বের হয়ে আসি। সব ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে এসে ২০২১ সালের ২৪শে এপ্রিল পুনঃরায় উদ্যোগ শুরু করি। এছাড়াও প্রোডাক্ট ডেলিভারি, প্যাকেজিং এগুলোতেও অনেক ঝামেলায় পড়েছি গ্রামে থাকার কারণে। দীর্ঘ ১০ মাসের আমার উদ্যোক্তা জীবন আলহামদুলিল্লাহ ভালোই কেটেছে। ইনশাআল্লাহ সামনে আরো ভালো যাবে। আলহামদুলিল্লাহ এখন পরিবারের সকলের সার্পোটে এগিয়ে যাচ্ছি। কাজ করতে করতে সকল বাধা বিপত্তি জয় করা সম্ভব এটাই বিশ্বাস করতাম। আপনার মাঝে যদি এই ইচ্ছে শক্তি থাকে তাহলে আপনি সকল বাধা বিপত্তি পার করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। একদিন আপনিও আপনার গন্তব্যে নিশ্চিত পৌছাতে পারবেন। আমার উদ্যোগের প্রাপ্তিঃ আমার উদ্যোগের সেরা প্রাপ্তি হলো আমার স্বপ্ন পূরণ করা। দিন শেষে শান্তির নিশ্বাস নিতে পারি। আমি স্বাবলম্বী এটাই আমার প্রাপ্তি। তাছাড়া নিজের আপনজনদের জন্য কিছু করতে পারি এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কিছুই হতে পারে না। ভবিষ্যত পরিকল্পনাঃ আমার এই ছোট্ট উদ্যোগ নিয়ে আমার একটি ছোট্ট পরিচয় যেন তৈরি করতে পারি এটাই আমার চাওয়া। আমাকে মানুষ যেন চিনে আমার কাজ দিয়ে। আমার স্বপ্ন আমি যেন আমার কাজ কে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারি। লেখকঃ তানিমা ইসলাম বিনতু উদ্যোগঃ Bintu’s Dream ও Bintu’s jewellery