একজন সফল ব্যবসায়ী নাদিয়া সুলতানার এগিয়ে চলার গল্প ! উদ্যোক্তাদের গল্প ব্যবসায়ীদের গল্প by Jannatun Naime - March 6, 2022March 6, 20220 Spread the love একজন সফল ব্যবসায়ী নাদিয়া সুলতানার এগিয়ে চলার গল্প ! একজন সফল ব্যবসায়ী নাদিয়া সুলতানা। যিনি এগিয়ে চলছেন তার বিজনেস নিয়ে। এই পৃথিবীতে সবাই সফল হতে চান কিন্তু সাফল্য যে খুব সহজে ধরা দেয়না তা আমরা অনেকেই মানতে পারিনা। কিন্তু লেগে থাকলে একদিন ঠিকই সফল হওয়া যায়। এই পর্বে আমরা জানবো এমনই একজন সফল ব্যবসায়ী নাদিয়া সুলতানার এগিয়ে চলার গল্প ! ব্যবসায়ী নাদিয়া সুলতানাঃ আমি নাদিয়া সুলতানা বৃষ্টি। গাজীপুরের মেয়ে। কিশোরগঞ্জের বউ। বসবাস করছি ঢাকায়। হিসাববিজ্ঞান নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছি। বর্তমানে একজন গৃহিণী এবং ব্যবসায়ী। ব্যবসা শুরু করার কারনঃ কলেজ পাশ করার পর থেকেই কিছু না কিছু করেছি। বসে থাকা আমার কখনোই পছন্দ ছিলো না। তাই কিন্টারগার্ডেন স্কুলে শিক্ষকতা করেছি, টিউশনিও করিয়েছি। উদোক্তা হওয়ার স্বপ্নটা ছিলো কলেজ পাশ করার পর থেকেই। কিন্তু অনেক কারণে তা হয়ে উঠে নি। বয়সও কম ছিলো। তাই কি নিয়ে শুরু করবো তা বুঝতে পারি নি। কিন্তু ফাইনালি যখন পড়াশোনা শেষ করে বিয়ে হয়ে ২জন ফুটফুটে বাচ্চার মা হলাম তখনই মনে আবার নাড়া দিয়ে উঠল সেই উদোক্তা হওয়ার স্বপ্নটা। কারণ, আমার মনে হয়েছে আমারও কিছু করতে হবে এবং প্রতিটি মেয়েকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত। তাই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই আমার এই বিজনেস। ছবিঃ কটন থ্রি-পিছ ! আমার ব্যবসার পন্যঃ আমি যে বিষয় নিয়ে দক্ষ সেটা নিয়ে কাজ করলেই আমার সামনে এগিয়ে যাওয়াটা সহজ হবে বলে আমার মনে হলো। তাই মেয়েদের পোশাক নিয়ে আমি বরাবরই খুব আগ্রহী। সুতরাং শুরু করে দিলাম মেয়েদের পোশাক নিয়ে কাজ করা। আমার পন্য মেয়েদের সকল ধরনের থ্রী-পিছ, ওয়ান-পিছ। তবে দেশীয় থ্রী-পিছকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। ব্যবসায় প্রথম বিনিয়োগঃ আমি চেয়েছিলাম নিজে কিছু করবো। তারপর নিজের টাকা দিয়েই শুরু করি। আমি আমার বরের কাছ থেকে প্রতি মাসে হাত খরচের টাকা পাই। সেই টাকা খরচ করার পরও হাতে কিছু টাকা থাকতো, তা জমিয়ে রাখতাম। মে মাসে আমার জন্মদিন ছিলো। ২০২১ এর জন্মদিনে আমি আমার বরের কাছ থেকে গিফট পাই টাকা।খামে কিছু টাকা পেয়ে আমি বেশ খুশি হয়েছিলাম। কারণ, টাকা টা আমার দরকারও ছিলো। নিজের জমানো টাকা এবং জন্মদিনের এই উপহারের টাকাই আমার প্রথম বিনিয়োগ। ব্যবসায়িক জীবন শুরু ও প্রথম বিক্রিঃ ৫ই জুন ২০২১ সালে প্রথম যাত্রা শুরু হলো আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের। Nadia’s wardrobe এ প্রথম পোশাক আনা হলো এবং ঘরেই বিক্রি হলো আমার প্রথম পন্য।ক্রেতা হলেন আমার শ্বাশুড়ি মা। আল্লাহর রহমতে ১ দিন পরেই বাসায় মেহমান আসে এবং উনারাই আমার দ্বিতীয় কাস্টমার। উনারা মোটামুটি অনেকগুলো ড্রেস নেন। প্রথম ১/২ চালান ড্রেস আমার মা, শ্বাশুড়ি মা, আমার জা এবং আত্নীয়রাই নিয়ে নেন আলহামদুলিল্লাহ। আমি খুবই খুশি ছিলাম এবং অনেক সাহস পেয়েছিলাম। ছবিঃ কটন থ্রি-পিছ ! ব্যবসার বর্তমান বিক্রি ও চাহিদাঃ প্রথমেই আমি আলহামদুলিল্লাহ বলবো। এই প্রতিযোগীতাপূর্ণ বাজারে আমি টিকে আছি। বিক্রিও মাশাআল্লাহ ভালোই চলছে। পোশাক মানুষের ৫টি মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি। সুতরাং এর চাহিদা সবসময়ই থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমার প্রথম বিনিয়োগ ছিলো ১২৩০০টাকা। প্রথমে অনেক ভয় পেয়েছিলাম তাই বেশি টাকা বিনিয়োগ করেনি। বর্তমানে আমার বিনিয়োগ প্রায় ১,০০,০০০ টাকা। মোট বিক্রি করেছি প্রায় ২,৯৮,৬০০ টাকার মত। ব্যবসায়ের বয়স চলছে এখন ১০ মাস।আলহামদুলিল্লাহ। আমার পন্যের ভবিষ্যৎ চাহিদাঃ মানুষ আজকাল মানসম্মত ও রুচিশীল পোশাক পরতেই পছন্দ করেন। আর দামটাও চান হাতের নাগালের মধ্যে। এ সব কিছুর চাহিদা মেটাতে দেশীয় পোশাকের কোন বিকল্পই নেই। তাইতো দেশীয় পোশাকের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু আমি দেশীয় থ্রী-পিছ, ওয়ান-পিছ নিয়ে কাজ করছি তাই আমার বিশ্বাস আমার পন্যের চাহিদা ভবিষ্যতেও দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। যাদের কাছ থেকে সাপোর্ট পেয়েছিঃ যে কোন কাজ বা ইচ্ছে পূরণে কারো না কারো সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। আমিও আমার সেই শক্তির জায়গাটি পেয়েছি আমার পরিবারের কাছ থেকে। আমার স্বামী, শ্বশুর বাড়ির সকল সদস্য এমনকি আমার ৫ বছরের মেয়েও আমাকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছে। আমার মা-বাবা আর ভাইদের কাছ থেকে পেয়েছি পর্যাপ্ত সমর্থন। ছবিঃ কটন থ্রি-পিছ ! ব্যবসায়িক জীবনের বাধা-বিপত্তিঃ যেকোনো কাজে মেয়েদের পিছুটান থাকে বেশি। সুতরাং বাধাও আসে বেশি। আমার ছোট বাবুর বয়স যখন ৬ মাস তখন শুরু করেছিলাম আমার ব্যবসা। এখন ১৬ মাস চলছে কিন্তু মা ছাড়া ছেলে কিছুই বুঝে না। অনেক কষ্ট হয়ে যায় সবকিছু মেইনটেইন করাটা। তখন অনেকেই বলে ব্যবসা টা বন্ধ রাখতে। আগে পরিবার, বাচ্চা পরে ব্যবসা। এছাড়াও ডেলিভারি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা তো থাকেই। ব্যবসা থেকে প্রাপ্তিঃ এত কম সময়ে অনেক কিছুই পেয়েছি। যা পেয়েছি তা হচ্ছে আমার মানসিক শান্তি। এখন ভাবতেই ভালো লাগে যে, আমি এখন আর বেকার নই। আমি একজন সফল ব্যবসায়ী। এখন আমার স্বপ্ন পূরন হওয়ার পথে। এছাড়াও পেয়েছি অনেক অপরিচিত মানুষের ভালোবাসা। যারা Nadia’s wardrobe থেকে কেনাকাটা করে খুশি।আমাকে তারা ভালোবাসেন। তারা আমার রেগুলার কাস্টমার। আমার সাথে বন্ধুর মত সম্পর্ক তাদের। সব থেকে বড় কথা উই এর মত প্লাটফর্ম-এ নিজের জায়গা করে নিয়েছি ব্যবসায়ী হিসেবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ স্বপ্ন দেখতে কে না ভালোবাসে। আমার পরিকল্পনা বলি আর স্বপ্নই বলি আমি চাই ২০২৫ সালের মধ্যে আমার পন্য ৬৪ টি জেলায় পৌঁছে যাক। এখনও পর্যন্ত অনেক জেলায় পৌঁছে গেছে। বিদেশের মাটিতেও পা রেখেছে Nadia’s wardrobe এর ড্রেস। ইনশাআল্লাহ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও জায়গা করে নিবে আমাদের দেশীয় সব পোশাক। লেখকঃ নাদিয়া সুলতানা বৃষ্টি উদ্যোগঃ Nadia’s wardrobe