ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও আভিজাত্যে জামদানি শাড়ি ! আভিজাত্যে জামদানি by Jannatun Naime - October 15, 2021March 17, 20220 Spread the love ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও আভিজাত্যে জামদানি শাড়ি ! ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও আভিজাত্যের সাথে মিশে আছে জামদানি শাড়ি ৷ বাঙ্গালী নারীর কাছে শাড়ি মানেই জামদানি শাড়ি ৷ জামদানি শুধুমাত্র শাড়িই নয়, এর সাথে মিশে আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, আভিজাত্য ও অহংকার ৷ আর সেই সাথে জড়িয়ে আছে তাঁতশিল্পের শিল্পীদের আঁকা ক্যানভাস ৷ ঐতিহ্যে ও আভিজাত্যে জামদানিঃ জামদানি শব্দটি এসেছে ফারসি শব্দ থেকে ৷ এর অর্থ হলো ‘বুটিদার কাপড়’ ৷ জামদানি হল কার্পাস তুলা দিয়ে তৈরি করা এক ধরনের পরিধেয় বস্ত্র বা পোশাক যা বুনন করতে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় ৷ তার মধ্যে একটি পদ্ধতি হলো, জামদানি বুননের সময় তৃতীয় একটি সুতা দিয়ে জামদানির নকশাকে ফুটিয়ে তুলতে হয় ৷ জামদানি তৈরিতে জামদানি বয়নে সাধারণত ৭০ থেকে ৮০ কাউন্ট সুতা ব্যবহার করা হয় ৷ আর মসলিন বয়নে কমপক্ষে ৩০০ কাউন্ট সুতা ব্যবহার করা হয় ৷ বর্তমানে জামদানি বিভিন্ন স্থানে তৈরি হলেও ঢাকাকেই প্রকৃত অর্থে জামদানির আদি জন্মস্থান বলে গণ্য করা হয় ৷ তাইতো জামদানিকে বলা হয় ‘ঢাকাইয়া জামদানি’ ৷ একটা সময় ছিল জামদানি বলতে শুধুমাত্র শাড়িকেই বুঝানো হতো ৷ প্রকৃতঅর্থে জামদানি কেবল শাড়িই নয় ৷ জামদানিতে রয়েছে ওড়না, জামা, পাঞ্জাবী, টু-পিছ, কুর্তি, পাগড়ি, রুমাল, ঘাগড়া, পর্দা, টেবিল ক্লথ ইত্যাদি ৷ বর্তমানে জামদানিতে নিত্য – নতুন ফিউশন যোগ হয়েছে ৷ তৈরি হচ্ছে জামদানি ল্যাহেঙ্গা, স্কার্ট, শেরওয়ানি, টপস, কটি, গাউনসহ নানা রকম পোশাক ৷ ছবিঃ মডেল শিমুল মজলিশ ! ঐতিহাসিক জামদানির নামকরণঃ জামদানির ইতিহাস থেকে জানা যায়, জামদানি শব্দটি এসেছে ফারসি শব্দ থেকে ৷ ফার্সি ভাষায় জামা অর্থ হলো কাপড় আর দানা অর্থ হলো বুটি ৷ তাই সেই অর্থে জামদানিকে বলা হয় ‘বুটিদার কাপড়’ ৷ জামদানির রয়েছে হরেক রকম নাম ৷ আর সেই নাম নকশা অনুযায়ী হয়ে থাকে ৷ যেমন- জলপাড়, তেরছা, করোলা, পান্না হাজার, সাবুরগা, বলিহার, দুবলাজাল, শাপলা ফুল, ময়ুরপ্যাচপাড়, আঙ্গুরলতা, কলমিলতা, বাঘনলি, ঝুমকা, চন্দ্রপাড়, ঝালর, বুটিদার, পুইলতা, ময়ূরপাখা, প্রজাপতি, কল্কাপাড়, কচুপাতা, জুঁইবুটি, হংসবলাকা, জবাফুল, শবনম ইত্যাদি ৷ জামদানি তৈরির কৌশল ও প্রক্রিয়াঃ প্রথম ধাপঃ জামদানি তৈরি করার সময় শুরুর দিকে রেশমি গুটি থেকে প্রস্তুতকৃত সুতা মূল শাড়ি তৈরি করার জন্য তাঁতে সাজানো হয় ৷ দ্বিতীয় ধাপঃ তারপর গুটি থেকে প্রস্তুতকৃত সুতায় রঙ করা হয় ৷ তৃতীয় ধাপঃ এরপর রঙ করা সুতাগুলোকে বোনার জন্য প্রস্তুত করা হয় ৷ চতুর্থ ধাপঃ সুতাগুলো যাতে নরম না থাকে তাই শক্ত করার জন্য কয়েক ধাপে ভাতের মাড় দিয়ে রোদে শুকানো হয় ৷ এতে সুতা শক্ত হয় ৷ পঞ্চম ধাপঃ তারপর রোদে শুকানো ভাতের মাড় দেওয়া সুতাগুলোকে তাঁতে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয় ৷ ছবিঃ জামদানী শাড়ি ! ষষ্ঠ ধাপঃ এরপর তাঁতে হাত ও মুল শাড়ি রেখে শাড়ির উপর রঙ্গিন সুতা দিয়ে নকশা করা হয় ৷ সপ্তম ধাপঃ নকশা করার সময়ও আরো একবার ভাতের মাড় দেওয়া হয় ৷ যাতে সুতা টান টান বা শক্ত থাকে ৷ অষ্টম ধাপঃ তারপর ধিরে ধিরে দু’জন তাঁতি মিলে শাড়িতে নকশা তোলা শুরু করেন ৷ নবম ধাপঃ হরেক রকম রঙের সুতার বুননে ও নকশায় শাড়িকে সাজানো হয় ৷ এভাবেই ৯টি ধাপ পার করে দু’জন তাঁতি মিলে জামদানি শাড়ি তৈরি করে থাকেন ৷ একেকটি জামদানি শাড়ি তৈরি করতে দুইজন কারিগর প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা শ্রম দেন ৷ তারপরও ডিজাইন ভেদে পুরো একটি শাড়ি তৈরি করতে ৭ দিন থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায় ৷ তাইতো শাড়ির দাম নির্ভর করে শাড়ি তৈরির সময়, কারিগরদের শ্রম, সুতার মান ও নকশার সুক্ষ্মতা বিবেচনায় ৷ তাই শাড়ি ভেদে হ্যান্ডলুম জামদানি শাড়ির দাম শুরু হয় ৪ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা বা তার চেয়েও আরো বেশি হতে পারে ৷ জামদানির প্রকারভেদঃ জামদানি শাড়ি কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে ৷ তবে প্রাথমিকভাবে জামদানিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে ৷ যেমন- হাফ সিল্ক জামদানিঃ হাফসিল্ক জামদানির বৈশিষ্ট্য হলো, এই জামদানির লম্বালম্বি সুতাগুলো হয় রেশমের তৈরি ৷ আর আড়াআড়ি সুতাগুলো হয় তুলার তৈরি। কটন জামদানিঃ কটন জামদানির বৈশিষ্ট্য হলো, এই জামদানি তৈরি হয় সম্পূর্ন তুলার সুতায় ৷ আমাদের জামদানির উদ্যোগ- Style Icon Fashion