ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও আভিজাত্যে জামদানি শাড়ি !

ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও আভিজাত্যে জামদানি শাড়ি !
Spread the love

ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও আভিজাত্যে জামদানি শাড়ি !

ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও আভিজাত্যের সাথে মিশে আছে জামদানি শাড়ি ৷ বাঙ্গালী নারীর কাছে শাড়ি মানেই জামদানি শাড়ি ৷ জামদানি শুধুমাত্র শাড়িই নয়, এর সাথে মিশে আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, আভিজাত্য ও অহংকার ৷ আর সেই সাথে জড়িয়ে আছে তাঁতশিল্পের শিল্পীদের আঁকা ক্যানভাস ৷

ঐতিহ্যে ও আভিজাত্যে জামদানিঃ

জামদানি শব্দটি এসেছে ফারসি শব্দ থেকে ৷ এর অর্থ হলো ‘বুটিদার কাপড়’ ৷ জামদানি হল কার্পাস তুলা দিয়ে তৈরি করা এক ধরনের পরিধেয় বস্ত্র বা পোশাক যা বুনন করতে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় ৷ তার মধ্যে একটি পদ্ধতি হলো, জামদানি বুননের সময় তৃতীয় একটি সুতা দিয়ে জামদানির নকশাকে ফুটিয়ে তুলতে হয় ৷

জামদানি তৈরিতে জামদানি বয়নে সাধারণত ৭০ থেকে ৮০ কাউন্ট সুতা ব্যবহার করা হয় ৷ আর মসলিন বয়নে কমপক্ষে ৩০০ কাউন্ট সুতা ব্যবহার করা হয় ৷ বর্তমানে জামদানি বিভিন্ন স্থানে তৈরি হলেও ঢাকাকেই প্রকৃত অর্থে জামদানির আদি জন্মস্থান বলে গণ্য করা হয় ৷ তাইতো জামদানিকে বলা হয় ‘ঢাকাইয়া জামদানি’ ৷

একটা সময় ছিল জামদানি বলতে শুধুমাত্র শাড়িকেই বুঝানো হতো ৷ প্রকৃতঅর্থে জামদানি কেবল শাড়িই নয় ৷ জামদানিতে রয়েছে ওড়না, জামা, পাঞ্জাবী, টু-পিছ, কুর্তি, পাগড়ি, রুমাল, ঘাগড়া, পর্দা, টেবিল ক্লথ ইত্যাদি ৷ বর্তমানে জামদানিতে নিত্য – নতুন ফিউশন যোগ হয়েছে ৷ তৈরি হচ্ছে জামদানি ল্যাহেঙ্গা, স্কার্ট, শেরওয়ানি, টপস, কটি, গাউনসহ নানা রকম পোশাক ৷

ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও আভিজাত্যে জামদানি শাড়ি !
ছবিঃ মডেল শিমুল মজলিশ !

ঐতিহাসিক জামদানির নামকরণঃ

জামদানির ইতিহাস থেকে জানা যায়, জামদানি শব্দটি এসেছে ফারসি শব্দ থেকে ৷ ফার্সি ভাষায় জামা অর্থ হলো কাপড় আর দানা অর্থ হলো বুটি ৷ তাই সেই অর্থে জামদানিকে বলা হয় ‘বুটিদার কাপড়’ ৷

জামদানির রয়েছে হরেক রকম নাম ৷ আর সেই নাম নকশা অনুযায়ী হয়ে থাকে ৷ যেমন- জলপাড়, তেরছা, করোলা, পান্না হাজার, সাবুরগা, বলিহার, দুবলাজাল, শাপলা ফুল, ময়ুরপ্যাচপাড়, আঙ্গুরলতা, কলমিলতা, বাঘনলি, ঝুমকা, চন্দ্রপাড়, ঝালর, বুটিদার, পুইলতা, ময়ূরপাখা, প্রজাপতি, কল্কাপাড়, কচুপাতা, জুঁইবুটি, হংসবলাকা, জবাফুল, শবনম ইত্যাদি ৷

জামদানি তৈরির কৌশল ও প্রক্রিয়াঃ

প্রথম ধাপঃ জামদানি তৈরি করার সময় শুরুর দিকে রেশমি গুটি থেকে প্রস্তুতকৃত সুতা মূল শাড়ি তৈরি করার জন্য তাঁতে সাজানো হয় ৷

দ্বিতীয় ধাপঃ তারপর গুটি থেকে প্রস্তুতকৃত সুতায় রঙ করা হয় ৷

তৃতীয় ধাপঃ এরপর রঙ করা সুতাগুলোকে বোনার জন্য প্রস্তুত করা হয় ৷

চতুর্থ ধাপঃ সুতাগুলো যাতে নরম না থাকে তাই শক্ত করার জন্য কয়েক ধাপে ভাতের মাড় দিয়ে রোদে শুকানো হয় ৷ এতে সুতা শক্ত হয় ৷

পঞ্চম ধাপঃ তারপর রোদে শুকানো ভাতের মাড় দেওয়া সুতাগুলোকে তাঁতে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয় ৷

ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও আভিজাত্যে জামদানি শাড়ি !
ছবিঃ জামদানী শাড়ি !

ষষ্ঠ ধাপঃ এরপর তাঁতে হাত ও মুল শাড়ি রেখে শাড়ির উপর রঙ্গিন সুতা দিয়ে নকশা করা হয় ৷

সপ্তম ধাপঃ নকশা করার সময়ও আরো একবার ভাতের মাড় দেওয়া হয় ৷ যাতে সুতা টান টান বা শক্ত থাকে ৷

অষ্টম ধাপঃ তারপর ধিরে ধিরে দু’জন তাঁতি মিলে শাড়িতে নকশা তোলা শুরু করেন ৷

নবম ধাপঃ হরেক রকম রঙের সুতার বুননে ও নকশায় শাড়িকে সাজানো হয় ৷

এভাবেই ৯টি ধাপ পার করে দু’জন তাঁতি মিলে জামদানি শাড়ি তৈরি করে থাকেন ৷ একেকটি জামদানি শাড়ি তৈরি করতে দুইজন কারিগর প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা শ্রম দেন ৷ তারপরও ডিজাইন ভেদে পুরো একটি শাড়ি তৈরি করতে ৭ দিন থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায় ৷ তাইতো শাড়ির দাম নির্ভর করে শাড়ি তৈরির সময়, কারিগরদের শ্রম, সুতার মান ও নকশার সুক্ষ্মতা বিবেচনায় ৷ তাই শাড়ি ভেদে হ্যান্ডলুম জামদানি শাড়ির দাম শুরু হয় ৪ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা বা তার চেয়েও আরো বেশি হতে পারে ৷

জামদানির প্রকারভেদঃ 

জামদানি শাড়ি কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে ৷ তবে প্রাথমিকভাবে জামদানিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে ৷ যেমন-

  • হাফ সিল্ক জামদানিঃ হাফসিল্ক জামদানির বৈশিষ্ট্য হলো, এই জামদানির লম্বালম্বি সুতাগুলো হয় রেশমের তৈরি ৷  আর আড়াআড়ি সুতাগুলো হয় তুলার তৈরি।
  • কটন জামদানিঃ কটন জামদানির বৈশিষ্ট্য হলো, এই জামদানি তৈরি হয় সম্পূর্ন তুলার সুতায় ৷

 

আমাদের জামদানির উদ্যোগ-
Style Icon Fashion

Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/
Top

You cannot copy content of this page