১৫ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা তাসফিয়া ইসমাত অথৈ !

১৫ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা তাসফিয়া ইসমাত অথৈ !
Spread the love

১৫ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা তাসফিয়া ইসমাত অথৈ!

১৫ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা তাসফিয়া ইসমাত অথৈ !  যিনি কিনা করোনাকালীন সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজের সৃজনশীল মেধা দিয়ে তৈরি করছেন হ্যান্ডপেইন্টের ক্যানভাস, পাঞ্জাবী ইত্যাদি ।  এই পর্বে আমরা তার কাছ থেকে জানবো তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প ।

১৫ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা তাসফিয়া ইসমাত অথৈঃ

আমি তাসফিয়া ইসমাত অথৈ ।  আমার বাড়ি মাদারীপুর জেলায় ।  আমি মাদারীপুর জেলার একটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নিউ টেনের একজন ছাত্রী ।আমি কাজ করছি হ্যান্ডপেইন্টিং ও ক্যানভাস পেইন্টিং নিয়ে ।

আমার উদ্যোগ শুরু হয় যেভাবেঃ

বাংলাদেশে যখন লকডাউন দেওয়া হয় তখন বাসায় বসে কিছুই করার ছিলনা আমার ।  সবসময় পড়াশোনা করতেও ভালো লাগছিলনা ।  ঠিক তখনই আমি উইতে হ্যান্ডপেইন্টের কাজগুলো দেখি ।  দেখার পর ভাবি কিভাবে, কোন রঙ দিয়ে এগুলো করতে হয় ।  তারপর ইউটিউব ঘেটে সবকিছু খুঁজে বের করি ।  তখন দেখি কাজটা খুবই সোজা ।

আর যেহেতু ছোট বেলা থেকেই আঁকাআকি করতাম তাই এই হ্যান্ডপেইন্ট করাটা ছিল আমার জন্য খুব সোজা ।  তারপর ভাবলাম বাসায় যেহেতু বসেই আছি তাহলে কেন এটা নিয়ে আমি কাজ করছি না ।  চাইলে আমিও তো এটা নিয়ে কাজ করতে পারি ।  কিছু ইনকামও করতে পারি ।

কিন্তু আম্মুকে যে বলব সেই সাহস পাচ্ছিলাম না ।  বাসা খুঁজেও কোনো পাঞ্জাবী পেলাম না ।  যেহেতু বাবা বিদেশে থাকে ।  তারপর হঠাৎ করে মাথায় আসে নানার পাঞ্জাবীর কথা ।  নানা সবসময় এক কালারের পাঞ্জাবি পরেন ।  তারপর একদিন নানুর কাছে গিয়ে একটা নানার পুরাতন পাঞ্জাবী চাই ।  নানু অনেকক্ষণ খোঁজার পর একটা ছেঁড়া পাঞ্জাবী বের করে দেয় ।

১৫ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা তাসফিয়া ইসমাত অথৈ !
হ্যান্ডপেইন্ট ক্যানভাস !

তারপর সেই পাঞ্জাবীটাতেই হ্যান্ডপেইন্ট করি ।  এরপর আম্মুকে না জানিয়েই একটা কালচারাল গ্রুপে পোস্ট করি ।  পোস্টে অনেকেই দাম জানতে চায় ।  আবার পাঞ্জাবীর পুরো ছবিও দেখতে চায় ।  কিন্তু এখানেই বাধে বিপত্তি ।  কারণ পাঞ্জাবীটা ছিল ছেঁড়া ।  আর তখনই আমি আম্মুকে বলি ।  তারপর আম্মু রাজি হয়।

কিন্তু রঙ তুলি জোগাড় করাটাও ছিল অনেক কষ্টের ।  কারণ আমি যেহেতু অনেক আগে থেকে পেইন্টিং করতাম তাই আমার তুলিগুলো হ্যান্ডপেইন্ট করার জন্য উপযোগী ছিল না।

হ্যান্ডপেইন্ট করার সময়গুলোঃ

একদিন আমার ছোট আন্টিকে দেখি মেকআপ করতে ।  আর মেকআপ ব্রাশগুলো ছিল হ্যান্ডপেইন্টের জন্য একদম পারফেক্ট ।  পরে আন্টিকে বলি ।  তারপর আন্টি সবগুলো মেকআপ ব্রাশই আমাকে দিয়ে দেয় ।  আর রংটাও আন্টি আমাকে কিনে দিয়েছে জন্মদিনের গিফট হিসেবে ।

এবার আসা যাক ফ্রেমের কাহিনিতে ।  হ্যান্ডপেইন্টের জন্য একটু বড় সাইজের ফ্রেম লাগে ।  কিন্তু আমার তো নিজের টাকা নেই যে ফ্রেম কিনবো ।  আবার আম্মুকেও বলতে পারছিলাম না ।  তারপর নিজের পরীক্ষার বোর্ড ফ্রেম হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করি ।  কিন্তু একদিন একসাথে অনেকগুলো পাঞ্জাবীর অর্ডার আসে ।  তখন কোনো কিছুই পাচ্ছিলাম না যে সেটাকে ফ্রেম হিসেবে ব্যবহার করব ।  পরে হঠাৎ করে মাথায় আসে আম্মুর পাতিলের কথা ।

তারপর আম্মুর একটা বড় পাতিল নেই ফ্রেম হিসেবে ব্যবহার করার জন্য় ।  এরপর সেই পাতিলকে ফ্রেম বানিয়ে পাঞ্জাবীতে পেইন্ট করি ।  এখনো মাঝে মাঝে পাতিল ব্যবহার করতে হয় ।  আর এভাবেই আমার উদ্যোগের শুরু ।  আমার উদ্যোগের বয়স এখন ৪মাস । কিন্তু এই ৪ মাসে সবার থেকে অনেক ভালোবাসা এবং সাপোর্ট পেয়েছি ।  আমার উদ্যোগের নাম LK Online Shop.

যেভাবে পরিচিতি পেলামঃ

আমি আমার উদ্যোগের শুরু থেকেই উইতে নিয়মিত পোস্ট দিতাম ।  যেহেতু আমার নিজের কোনো আইডি নেই তাই আমার আম্মুর আইডি থেকেই পোস্ট দিতাম।  কিন্তু ম্যাক্সিমামই কনফিউজড হয়ে যেত যে পোস্টের নাম এক আর আইডির নাম আরেক ।  আবার পোস্টে ছবি দিচ্ছি এক কিন্তু আইডিতে ছবি আরেক ।

তারপর এই রহস্যের সমাধান করে একটা পোস্ট দিয়ে সবাইকে জানাই যে এটা আমার আম্মুর আইডি ।  আর আমি সেখান থেকেই পোস্ট দেই ।  তারপর সবাই বুঝতে পারে ।  যদিও অনেকেই আগে থেকে বুঝতে পেরেছিল যে আমি আমার আম্মুর আইডি থেকে পোস্ট দেই ।

আর উইতে আমার একটা ডাকনামও রয়েছে ।  সবাই ছোট/পিচ্চি আপু বলে ডাকে ।  যেহেতু সবার চেয়ে আমি অনেক ছোট ।  আর ছেঁড়া পাঞ্জাবীর ঘটনা জানার পর থেকে অনেকেই ছেঁড়া পাঞ্জাবিওয়ালা আপু বলেও ডাকে আমাকে ।

১৫ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা তাসফিয়া ইসমাত অথৈ !
হ্যান্ডপেইন্ট ক্যানভাসের ছবি!

নিজের উদ্যোগ সাথে স্কুল জীবনঃ

এখন স্কুল খুলে গিয়েছে তাই একটু বেশিই কষ্ট হচ্ছে ।  সকালে প্রাইভেট আবার সাথে স্কুলে যেতে হয় ।  বাসায় এসে রেস্ট নিয়ে গোসল করে আবার স্যারের কাছে পড়তে যেতে হয় ।  আর পড়ার পর রাতের বেলা কাজ করতে বসতে হয় ।  মাঝে মাঝে কাজ শেষ করতে করতে রাত ২-৩টাও বেজে যায় ।  কিন্তু এই কাজটা করতে আমার একটুও কষ্ট লাগেনা ।  কারণ পেইন্টিং আমার পেশা নয়, আমার নেশা ।

আমার উদ্যোগের সাপোর্টারঃ

আমার উদ্যোগের সবচেয়ে বড় সাপোর্টার হলো আমার মা ।  তিনি সবসময় আমাকে সাপোর্ট করেছেন ।  অনেকেই অনেক কথা বলেছেন । উদ্যোগ বন্ধ করতে বলেছেন ।  কিন্তু আমার মা এসব কথা কখনো কানে নেননি ।  এছাড়াও আমার আরেকজন বড় সাপোর্টার হলেন আমার আন্টি ।  যাকে আমি কান্টি বলি । যার কথা না বললেই নয় । তিনি আমাকে সবসময়ই সাপোর্ট করেছেন ।  এছাড়াও উইয়ের সব আপু-ভাইয়ারা আমাকে অনেক সাপোর্ট করতেন ।  আর এদের সাপোর্ট পেয়েই আজ আমি এতদূর আসতে পেরেছি ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ

নিজের উদ্যোগকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই ।  বাংলাদেশের একটা ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চাই নিজের উদ্যোগকে ।  সেই সাথে পড়াশোনা করেও নিজের একটা আলাদা পরচিতি গড়তে চাই ।  ছোটবেলা থেকেই আমার বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবেন ।  কিন্তু আমি একদমই ডাক্তার পছন্দ করতাম না ।  আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি তখন জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ – ৫ এবং সাথে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম ।  তখন সবাই বলেছিল সাইন্স নিতে ।  কিন্তু আমি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম আমি আর্টস নিয়ে পড়ে ব্যারিস্টার অথবা বিসিএস ক্যাডার হবো ।  তখন আমার মা আমার এই ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেন এবং আর্টস নিয়েই পড়ার সুযোগ করে দেন ।

 

লেখকঃ তাসফিয়া ইসমাত অথৈ
উদ্যোগঃ LK Online Shop.

Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/

Leave a Reply

Top

You cannot copy content of this page