১৫ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা তাসফিয়া ইসমাত অথৈ ! উদ্যোক্তাদের গল্প কিশোর উদ্যোক্তার গল্প নারী উদ্যোক্তার গল্প by Jannatun Naime - October 9, 2021October 9, 20210 Spread the love ১৫ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা তাসফিয়া ইসমাত অথৈ! ১৫ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা তাসফিয়া ইসমাত অথৈ ! যিনি কিনা করোনাকালীন সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজের সৃজনশীল মেধা দিয়ে তৈরি করছেন হ্যান্ডপেইন্টের ক্যানভাস, পাঞ্জাবী ইত্যাদি । এই পর্বে আমরা তার কাছ থেকে জানবো তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প । ১৫ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা তাসফিয়া ইসমাত অথৈঃ আমি তাসফিয়া ইসমাত অথৈ । আমার বাড়ি মাদারীপুর জেলায় । আমি মাদারীপুর জেলার একটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নিউ টেনের একজন ছাত্রী ।আমি কাজ করছি হ্যান্ডপেইন্টিং ও ক্যানভাস পেইন্টিং নিয়ে । আমার উদ্যোগ শুরু হয় যেভাবেঃ বাংলাদেশে যখন লকডাউন দেওয়া হয় তখন বাসায় বসে কিছুই করার ছিলনা আমার । সবসময় পড়াশোনা করতেও ভালো লাগছিলনা । ঠিক তখনই আমি উইতে হ্যান্ডপেইন্টের কাজগুলো দেখি । দেখার পর ভাবি কিভাবে, কোন রঙ দিয়ে এগুলো করতে হয় । তারপর ইউটিউব ঘেটে সবকিছু খুঁজে বের করি । তখন দেখি কাজটা খুবই সোজা । আর যেহেতু ছোট বেলা থেকেই আঁকাআকি করতাম তাই এই হ্যান্ডপেইন্ট করাটা ছিল আমার জন্য খুব সোজা । তারপর ভাবলাম বাসায় যেহেতু বসেই আছি তাহলে কেন এটা নিয়ে আমি কাজ করছি না । চাইলে আমিও তো এটা নিয়ে কাজ করতে পারি । কিছু ইনকামও করতে পারি । কিন্তু আম্মুকে যে বলব সেই সাহস পাচ্ছিলাম না । বাসা খুঁজেও কোনো পাঞ্জাবী পেলাম না । যেহেতু বাবা বিদেশে থাকে । তারপর হঠাৎ করে মাথায় আসে নানার পাঞ্জাবীর কথা । নানা সবসময় এক কালারের পাঞ্জাবি পরেন । তারপর একদিন নানুর কাছে গিয়ে একটা নানার পুরাতন পাঞ্জাবী চাই । নানু অনেকক্ষণ খোঁজার পর একটা ছেঁড়া পাঞ্জাবী বের করে দেয় । হ্যান্ডপেইন্ট ক্যানভাস ! তারপর সেই পাঞ্জাবীটাতেই হ্যান্ডপেইন্ট করি । এরপর আম্মুকে না জানিয়েই একটা কালচারাল গ্রুপে পোস্ট করি । পোস্টে অনেকেই দাম জানতে চায় । আবার পাঞ্জাবীর পুরো ছবিও দেখতে চায় । কিন্তু এখানেই বাধে বিপত্তি । কারণ পাঞ্জাবীটা ছিল ছেঁড়া । আর তখনই আমি আম্মুকে বলি । তারপর আম্মু রাজি হয়। কিন্তু রঙ তুলি জোগাড় করাটাও ছিল অনেক কষ্টের । কারণ আমি যেহেতু অনেক আগে থেকে পেইন্টিং করতাম তাই আমার তুলিগুলো হ্যান্ডপেইন্ট করার জন্য উপযোগী ছিল না। হ্যান্ডপেইন্ট করার সময়গুলোঃ একদিন আমার ছোট আন্টিকে দেখি মেকআপ করতে । আর মেকআপ ব্রাশগুলো ছিল হ্যান্ডপেইন্টের জন্য একদম পারফেক্ট । পরে আন্টিকে বলি । তারপর আন্টি সবগুলো মেকআপ ব্রাশই আমাকে দিয়ে দেয় । আর রংটাও আন্টি আমাকে কিনে দিয়েছে জন্মদিনের গিফট হিসেবে । এবার আসা যাক ফ্রেমের কাহিনিতে । হ্যান্ডপেইন্টের জন্য একটু বড় সাইজের ফ্রেম লাগে । কিন্তু আমার তো নিজের টাকা নেই যে ফ্রেম কিনবো । আবার আম্মুকেও বলতে পারছিলাম না । তারপর নিজের পরীক্ষার বোর্ড ফ্রেম হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করি । কিন্তু একদিন একসাথে অনেকগুলো পাঞ্জাবীর অর্ডার আসে । তখন কোনো কিছুই পাচ্ছিলাম না যে সেটাকে ফ্রেম হিসেবে ব্যবহার করব । পরে হঠাৎ করে মাথায় আসে আম্মুর পাতিলের কথা । তারপর আম্মুর একটা বড় পাতিল নেই ফ্রেম হিসেবে ব্যবহার করার জন্য় । এরপর সেই পাতিলকে ফ্রেম বানিয়ে পাঞ্জাবীতে পেইন্ট করি । এখনো মাঝে মাঝে পাতিল ব্যবহার করতে হয় । আর এভাবেই আমার উদ্যোগের শুরু । আমার উদ্যোগের বয়স এখন ৪মাস । কিন্তু এই ৪ মাসে সবার থেকে অনেক ভালোবাসা এবং সাপোর্ট পেয়েছি । আমার উদ্যোগের নাম LK Online Shop. যেভাবে পরিচিতি পেলামঃ আমি আমার উদ্যোগের শুরু থেকেই উইতে নিয়মিত পোস্ট দিতাম । যেহেতু আমার নিজের কোনো আইডি নেই তাই আমার আম্মুর আইডি থেকেই পোস্ট দিতাম। কিন্তু ম্যাক্সিমামই কনফিউজড হয়ে যেত যে পোস্টের নাম এক আর আইডির নাম আরেক । আবার পোস্টে ছবি দিচ্ছি এক কিন্তু আইডিতে ছবি আরেক । তারপর এই রহস্যের সমাধান করে একটা পোস্ট দিয়ে সবাইকে জানাই যে এটা আমার আম্মুর আইডি । আর আমি সেখান থেকেই পোস্ট দেই । তারপর সবাই বুঝতে পারে । যদিও অনেকেই আগে থেকে বুঝতে পেরেছিল যে আমি আমার আম্মুর আইডি থেকে পোস্ট দেই । আর উইতে আমার একটা ডাকনামও রয়েছে । সবাই ছোট/পিচ্চি আপু বলে ডাকে । যেহেতু সবার চেয়ে আমি অনেক ছোট । আর ছেঁড়া পাঞ্জাবীর ঘটনা জানার পর থেকে অনেকেই ছেঁড়া পাঞ্জাবিওয়ালা আপু বলেও ডাকে আমাকে । হ্যান্ডপেইন্ট ক্যানভাসের ছবি! নিজের উদ্যোগ সাথে স্কুল জীবনঃ এখন স্কুল খুলে গিয়েছে তাই একটু বেশিই কষ্ট হচ্ছে । সকালে প্রাইভেট আবার সাথে স্কুলে যেতে হয় । বাসায় এসে রেস্ট নিয়ে গোসল করে আবার স্যারের কাছে পড়তে যেতে হয় । আর পড়ার পর রাতের বেলা কাজ করতে বসতে হয় । মাঝে মাঝে কাজ শেষ করতে করতে রাত ২-৩টাও বেজে যায় । কিন্তু এই কাজটা করতে আমার একটুও কষ্ট লাগেনা । কারণ পেইন্টিং আমার পেশা নয়, আমার নেশা । আমার উদ্যোগের সাপোর্টারঃ আমার উদ্যোগের সবচেয়ে বড় সাপোর্টার হলো আমার মা । তিনি সবসময় আমাকে সাপোর্ট করেছেন । অনেকেই অনেক কথা বলেছেন । উদ্যোগ বন্ধ করতে বলেছেন । কিন্তু আমার মা এসব কথা কখনো কানে নেননি । এছাড়াও আমার আরেকজন বড় সাপোর্টার হলেন আমার আন্টি । যাকে আমি কান্টি বলি । যার কথা না বললেই নয় । তিনি আমাকে সবসময়ই সাপোর্ট করেছেন । এছাড়াও উইয়ের সব আপু-ভাইয়ারা আমাকে অনেক সাপোর্ট করতেন । আর এদের সাপোর্ট পেয়েই আজ আমি এতদূর আসতে পেরেছি । ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ নিজের উদ্যোগকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই । বাংলাদেশের একটা ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চাই নিজের উদ্যোগকে । সেই সাথে পড়াশোনা করেও নিজের একটা আলাদা পরচিতি গড়তে চাই । ছোটবেলা থেকেই আমার বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবেন । কিন্তু আমি একদমই ডাক্তার পছন্দ করতাম না । আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি তখন জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ – ৫ এবং সাথে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম । তখন সবাই বলেছিল সাইন্স নিতে । কিন্তু আমি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম আমি আর্টস নিয়ে পড়ে ব্যারিস্টার অথবা বিসিএস ক্যাডার হবো । তখন আমার মা আমার এই ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেন এবং আর্টস নিয়েই পড়ার সুযোগ করে দেন । লেখকঃ তাসফিয়া ইসমাত অথৈ উদ্যোগঃ LK Online Shop.