১৬ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা নূরে মীম !

১৬ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা নূরে মীম !
Spread the love

১৬ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা নূরে মীম !

১৬ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা নূরে মীম !  যে শুধু উদ্যোক্তাই নয় ।  হাজারো কিশোর-কিশোরীদের অনুপ্রেরনা ।  যিনি কিনা ১৬ বছর বয়সেই শুরু করেছেন তার উদ্যোক্তা জীবন ।  যেই বয়সটি খেলাধুলা আর আড্ডায় কাটানোর বয়স ।  সেই বয়সটিই হয়ে গেল আজ তার উদ্যোক্তা জীবন ।  এই পর্বে আমরা তার কাছ থেকেই জানবো তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প ।

১৬ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা নূরে মীমঃ

আসসালামুআলাইকুম ।  আমি নূরে মীম ।  পাবনা জেলার মেয়ে ।  তবে বাবার চাকুরী সূত্রে নাটোরে থাকি ।  এ বছর নাটোরের একটি স্বনামধন্য স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেব ।  বাবা-মা, ছোট বোন ও আমি এই নিয়েই আমাদের ছোট্ট একটি পরিবার ।  ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের একটি পরিচয় গড়তে চেয়েছিলাম ।  যদিও এখনো আমি অনেক ছোট ।

সবসময় ইচ্ছে হতো নিজে কিছু একটা করবো ।  কারণ, বাবা-মায়ের কাছে আবদার করতে আমার তেমন ভালো লাগতো না ।  স্বপ্ন দেখতাম কোন একদিন হয়তো নিজের একটি পরিচয় হবে ।  তবে এই স্বপ্ন এতো তাড়াতাড়ি বাস্তবে রূপ নেবে তা কখনো ভাবিনি ।  শুরু হলো আমার উদ্যোক্তা জীবন ।

যেভাবে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করিঃ

সময়টা আজ থেকে প্রায় ৫ মাস আগের ।  কোভিডের জন্য যখন ঘরবন্দী ।  স্কুল, প্রাইভেট সবকিছুই তখন বন্ধ ।  ফেইসবুক খুললেই বিভিন্ন সফল উদ্যোক্তাদের গল্প সামনে আসতো ।  তাদের গল্পগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তাম আমি ।  তাদের সাফল্য দেখে খুব ভালো লাগতো আমার ।  অনেককেই দেখতাম অনলাইনে উদ্যোগ গ্রহন করেছেন ।  আবার সফলও হয়েছেন ।

১৬ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা নূরে মীম !
উদ্যোক্তা নূরে মীম !

এগুলো দেখেই আমি উৎসাহিত হতাম নিজে কিছু করার ।  আম্মুকে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের গল্প শোনাতাম ।  আর বলতাম, আমার কিছু একটা করা উচিৎ ।  আম্মু বলতো, কি করবি কর ।  সেখান থেকেই মূলতঃ আমার উদ্যোগ গ্রহণের প্রথম ধাপ শুরু ।

নিজে কি পারি সেটা খুঁজতে লাগলাম ।  তারপর আবিষ্কার করলাম আমি নিজে হোম মেইড সন্দেশ বানিয়ে সেটা অনলাইনে সেল করতে পারি ।  যেই ভাবা সেই কাজ ।  ঈদে পাওয়া ৫০০ টাকা সালামি ও আম্মুর কাছ থেকে ২০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলাম ।  সন্দেশ বানাতে যা যা দরকার সব কিনে আনলাম ।  এই ৭০০ টাকা থেকেই আমার যাত্রা শুরু।  আমি সবসময়ই চাইতাম ইউনিক কিছু করতে, যাতে মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারি ।

আমরা বাঙ্গালীরা সব সময়ই মিষ্টি পাগল ।  মিষ্টি কিছু দেখলে সকলের ই লোভ লাগে ।  তাই বানিয়ে ফেললাম আপেল সন্দেশ ।  খুব ভয় নিয়েই নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটা পোস্ট করি আমার সন্দেশের ছবি দিয়ে ।  আমি কখনো ভাবিনি আমার শুভাকাঙ্খীগন এতো সাড়া দেবে ।  পোস্ট করার কিছুক্ষণ পরেই আমার ১৫ পিস সন্দেশের অর্ডার আসে ।  সেটা সুষ্ঠভাবে ডেলিভারি সম্পূর্ণ করে একটা স্টোরি দিতেই আরো অর্ডার আসতে থাকে ।  এভাবেই নিয়মিত অর্ডার আসতে লাগলো ।  আলহামদুলিল্লাহ সকলের ভালোবাসায় ভালোই রেসপন্স পাচ্ছিলাম ।

পরিচিতি পেলাম যেভাবেঃ

কিছু দিনের মধ্যেই Journey With Mim নামে একটি ফেইসবুক পেইজ ওপেন করে ফেলি ।  তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।  আলহামদুলিল্লাহ নিয়মিত অর্ডার আসতে থাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ।  যেহেতু অর্ডার নেওয়া থেকে শুরু করে সন্দেশ বানানো,প্যাকিং করা, ডেলিভারির জন্য কুরিয়ার করা এগুলো সব আমাকে একা হাতে করতে হয় তাই একটু হিমশিম খেতে হয় ।

তবে গত মাসে স্কুল খুলে দেওয়ার ফলে একটু বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে ।  সকাল ৯ টা থেকে ১০:৩০ পর্যন্ত প্রাইভেট পড়ে ১১ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত স্কুল করে বাসায় আসার পরে আর সময় মেলাতে পারছি না ।  নিজের পড়াশোনা ঠিক রেখে সব কাজ সামলাতে অনেক ধকল পোহাতে হচ্ছে ।

১৬ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা নূরে মীম !
সন্দেশ !

যেভাবে নিজের উদ্যোক্তা জীবন সামলিয়ে এগিয়ে চলছিঃ

লেখাপড়া শেষ করে ভালো একটা চাকুরি করবো এটাই আমার পরিবারের প্রত্যাশা ছিল ।  নিজে কিছু করতে চাইতাম ঠিকই তবে এভাবে নিজের উদ্যোক্তা জীবন শুরু করবো কখনোই ভাবিনি ।  উদ্যোক্তা জীবন কখনোই সুখের নয় ।  আমি আগে ভাবতাম একটা সেল পোস্ট করলেই অর্ডার আসবে ।  আর ঠিকানা মত পাঠিয়ে দিতে হবে, ব্যাস হয়ে গেলো উদ্যোগ ।

কিন্তু আমার সকল ভাবনাই উল্টো হয়ে গেলো নিজে যখন এই পথে আসলাম ।  উদ্যোক্তা জীবনে থাকে অনেক পরিশ্রম, যেটার কারনেই মানুষ একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠে ।  বেশির ভাগ সময়ই আর্জেন্ট অর্ডার আসে ।  ঠিক তখনই তাড়াহুড়ো করে নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে নিজের শ্রম দিয়ে কাস্টমার কে খুশি করতে হয়েছে ।  এই কষ্টগুলো না করলে হয়তো আমি কখনোই এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না ।

মাত্র ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে মাত্র ৫ মাসে আজ ৫০০০০ টাকারও বেশি পন্য বিক্রি করেছি ।  একদম গোড়া থেকে শুরু করে আজ আমি এই পর্যায়ে ৷  এক কেজি সন্দেশ বিক্রি করে আরো দুই কেজি সন্দেশ বানানোর জন্য কাঁচামাল কিনেছি ।  এভাবেই চলছে আমার উদ্যোগ ।  আমার এই উদ্যোগে সবসময় আমার পাশে ছিলো দুইজন ব্যক্তি ।  তারা হলেন আমার বাবা ও মা ।  আমাকে মেন্টালি সাপোর্ট তাঁরাই সবসময় দিয়েছেন ।

তারা না থাকলে কখনোই এই পর্যায়ে আমি আসতে পারতাম না ।  তাদের দু’জনের সাপোর্ট ও ভালোবাসার ফলে আজ আমি বাংলাদেশের ৩১ টি জেলায় নিজের বানানো সন্দেশ পৌঁছাতে পেরেছি । কয়েকবার আমার সন্দেশ দেশের বাহিরেও গিয়েছে ।

সর্বশেষ কথাঃ

সবশেষে বলতে চাই, নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সবসময় নিজের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে লক্ষ্য স্থির করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে ।  আমি চাই বড় হয়ে বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াতে ।  তাদের সকল ইচ্ছে পূরণ করতেই হবে আমাকে ।  আমি চাই আমার পরিবার সবসময় আমাকে নিয়ে গর্ব করুক ।  সবার সামনে যেন আমার বাবা-মা বলতে পারে এইটা আমার মেয়ে ।

 

লেখকঃ কিশোরী উদ্যোক্তা নূরে মীম
উদ্যোগঃJourney With Mim

Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/

Leave a Reply

Top

You cannot copy content of this page