১৬ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা নূরে মীম ! উদ্যোক্তাদের গল্প কিশোর উদ্যোক্তার গল্প সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তার গল্প by Jannatun Naime - October 6, 20210 Spread the love ১৬ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা নূরে মীম ! ১৬ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা নূরে মীম ! যে শুধু উদ্যোক্তাই নয় । হাজারো কিশোর-কিশোরীদের অনুপ্রেরনা । যিনি কিনা ১৬ বছর বয়সেই শুরু করেছেন তার উদ্যোক্তা জীবন । যেই বয়সটি খেলাধুলা আর আড্ডায় কাটানোর বয়স । সেই বয়সটিই হয়ে গেল আজ তার উদ্যোক্তা জীবন । এই পর্বে আমরা তার কাছ থেকেই জানবো তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প । ১৬ বছর বয়সী কিশোরী উদ্যোক্তা নূরে মীমঃ আসসালামুআলাইকুম । আমি নূরে মীম । পাবনা জেলার মেয়ে । তবে বাবার চাকুরী সূত্রে নাটোরে থাকি । এ বছর নাটোরের একটি স্বনামধন্য স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেব । বাবা-মা, ছোট বোন ও আমি এই নিয়েই আমাদের ছোট্ট একটি পরিবার । ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের একটি পরিচয় গড়তে চেয়েছিলাম । যদিও এখনো আমি অনেক ছোট । সবসময় ইচ্ছে হতো নিজে কিছু একটা করবো । কারণ, বাবা-মায়ের কাছে আবদার করতে আমার তেমন ভালো লাগতো না । স্বপ্ন দেখতাম কোন একদিন হয়তো নিজের একটি পরিচয় হবে । তবে এই স্বপ্ন এতো তাড়াতাড়ি বাস্তবে রূপ নেবে তা কখনো ভাবিনি । শুরু হলো আমার উদ্যোক্তা জীবন । যেভাবে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করিঃ সময়টা আজ থেকে প্রায় ৫ মাস আগের । কোভিডের জন্য যখন ঘরবন্দী । স্কুল, প্রাইভেট সবকিছুই তখন বন্ধ । ফেইসবুক খুললেই বিভিন্ন সফল উদ্যোক্তাদের গল্প সামনে আসতো । তাদের গল্পগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তাম আমি । তাদের সাফল্য দেখে খুব ভালো লাগতো আমার । অনেককেই দেখতাম অনলাইনে উদ্যোগ গ্রহন করেছেন । আবার সফলও হয়েছেন । উদ্যোক্তা নূরে মীম ! এগুলো দেখেই আমি উৎসাহিত হতাম নিজে কিছু করার । আম্মুকে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের গল্প শোনাতাম । আর বলতাম, আমার কিছু একটা করা উচিৎ । আম্মু বলতো, কি করবি কর । সেখান থেকেই মূলতঃ আমার উদ্যোগ গ্রহণের প্রথম ধাপ শুরু । নিজে কি পারি সেটা খুঁজতে লাগলাম । তারপর আবিষ্কার করলাম আমি নিজে হোম মেইড সন্দেশ বানিয়ে সেটা অনলাইনে সেল করতে পারি । যেই ভাবা সেই কাজ । ঈদে পাওয়া ৫০০ টাকা সালামি ও আম্মুর কাছ থেকে ২০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলাম । সন্দেশ বানাতে যা যা দরকার সব কিনে আনলাম । এই ৭০০ টাকা থেকেই আমার যাত্রা শুরু। আমি সবসময়ই চাইতাম ইউনিক কিছু করতে, যাতে মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারি । আমরা বাঙ্গালীরা সব সময়ই মিষ্টি পাগল । মিষ্টি কিছু দেখলে সকলের ই লোভ লাগে । তাই বানিয়ে ফেললাম আপেল সন্দেশ । খুব ভয় নিয়েই নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটা পোস্ট করি আমার সন্দেশের ছবি দিয়ে । আমি কখনো ভাবিনি আমার শুভাকাঙ্খীগন এতো সাড়া দেবে । পোস্ট করার কিছুক্ষণ পরেই আমার ১৫ পিস সন্দেশের অর্ডার আসে । সেটা সুষ্ঠভাবে ডেলিভারি সম্পূর্ণ করে একটা স্টোরি দিতেই আরো অর্ডার আসতে থাকে । এভাবেই নিয়মিত অর্ডার আসতে লাগলো । আলহামদুলিল্লাহ সকলের ভালোবাসায় ভালোই রেসপন্স পাচ্ছিলাম । পরিচিতি পেলাম যেভাবেঃ কিছু দিনের মধ্যেই Journey With Mim নামে একটি ফেইসবুক পেইজ ওপেন করে ফেলি । তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । আলহামদুলিল্লাহ নিয়মিত অর্ডার আসতে থাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে । যেহেতু অর্ডার নেওয়া থেকে শুরু করে সন্দেশ বানানো,প্যাকিং করা, ডেলিভারির জন্য কুরিয়ার করা এগুলো সব আমাকে একা হাতে করতে হয় তাই একটু হিমশিম খেতে হয় । তবে গত মাসে স্কুল খুলে দেওয়ার ফলে একটু বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে । সকাল ৯ টা থেকে ১০:৩০ পর্যন্ত প্রাইভেট পড়ে ১১ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত স্কুল করে বাসায় আসার পরে আর সময় মেলাতে পারছি না । নিজের পড়াশোনা ঠিক রেখে সব কাজ সামলাতে অনেক ধকল পোহাতে হচ্ছে । সন্দেশ ! যেভাবে নিজের উদ্যোক্তা জীবন সামলিয়ে এগিয়ে চলছিঃ লেখাপড়া শেষ করে ভালো একটা চাকুরি করবো এটাই আমার পরিবারের প্রত্যাশা ছিল । নিজে কিছু করতে চাইতাম ঠিকই তবে এভাবে নিজের উদ্যোক্তা জীবন শুরু করবো কখনোই ভাবিনি । উদ্যোক্তা জীবন কখনোই সুখের নয় । আমি আগে ভাবতাম একটা সেল পোস্ট করলেই অর্ডার আসবে । আর ঠিকানা মত পাঠিয়ে দিতে হবে, ব্যাস হয়ে গেলো উদ্যোগ । কিন্তু আমার সকল ভাবনাই উল্টো হয়ে গেলো নিজে যখন এই পথে আসলাম । উদ্যোক্তা জীবনে থাকে অনেক পরিশ্রম, যেটার কারনেই মানুষ একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠে । বেশির ভাগ সময়ই আর্জেন্ট অর্ডার আসে । ঠিক তখনই তাড়াহুড়ো করে নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে নিজের শ্রম দিয়ে কাস্টমার কে খুশি করতে হয়েছে । এই কষ্টগুলো না করলে হয়তো আমি কখনোই এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না । মাত্র ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে মাত্র ৫ মাসে আজ ৫০০০০ টাকারও বেশি পন্য বিক্রি করেছি । একদম গোড়া থেকে শুরু করে আজ আমি এই পর্যায়ে ৷ এক কেজি সন্দেশ বিক্রি করে আরো দুই কেজি সন্দেশ বানানোর জন্য কাঁচামাল কিনেছি । এভাবেই চলছে আমার উদ্যোগ । আমার এই উদ্যোগে সবসময় আমার পাশে ছিলো দুইজন ব্যক্তি । তারা হলেন আমার বাবা ও মা । আমাকে মেন্টালি সাপোর্ট তাঁরাই সবসময় দিয়েছেন । তারা না থাকলে কখনোই এই পর্যায়ে আমি আসতে পারতাম না । তাদের দু’জনের সাপোর্ট ও ভালোবাসার ফলে আজ আমি বাংলাদেশের ৩১ টি জেলায় নিজের বানানো সন্দেশ পৌঁছাতে পেরেছি । কয়েকবার আমার সন্দেশ দেশের বাহিরেও গিয়েছে । সর্বশেষ কথাঃ সবশেষে বলতে চাই, নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সবসময় নিজের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে লক্ষ্য স্থির করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে । আমি চাই বড় হয়ে বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াতে । তাদের সকল ইচ্ছে পূরণ করতেই হবে আমাকে । আমি চাই আমার পরিবার সবসময় আমাকে নিয়ে গর্ব করুক । সবার সামনে যেন আমার বাবা-মা বলতে পারে এইটা আমার মেয়ে । লেখকঃ কিশোরী উদ্যোক্তা নূরে মীম উদ্যোগঃJourney With Mim