পেইন্টিং নিয়ে উম্মে হানি অরিনের এগিয়ে চলার গল্প !

পেইন্টিং নিয়ে উম্মে হানি অরিনের এগিয়ে চলার গল্প !
Spread the love

পেইন্টিং নিয়ে উম্মে হানি অরিনের এগিয়ে চলার গল্প !

পেইন্টিং নিয়ে এগিয়ে চলছেন উম্মে হানি অরিন। তিনি বর্তমানে নানা রকম পেইন্টিং নিয়ে কাজ করছেন। তার মধ্যে গ্লাস, ক্যানভাস, ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং এবং গ্লাসে ডেকোরেশন করার জন্য বা রুম ডেকোরেশন করার জন্য ফেয়ারি লাইট নিয়ে কাজ করছেন। এই পর্বে আমরা জানবো তার উদ্যোক্তা জীবনের এগিয়ে চলার গল্প।

উদ্যোক্তা উম্মে হানি অরিনঃ

আমি উম্মে হানি অরিন। আমি একজন গৃহিণী। পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছি গ্লাস পেইন্টিং, ক্যানভাস পেইন্টিং, ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং এবং গ্লাসে ডেকোরেশন করার জন্য বা রুম ডেকোরেশন করার জন্য ফেয়ারি লাইট নিয়ে কাজ করছি।

আমার উদ্যোক্তা হয়ে উঠার কারনঃ

আমার হাজবেন্ড এবং আমার দুই মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। আমরা গত দুই বছর যাবৎ করোনা মোকাবেলায় একদমই ঘরে বসে গিয়েছি। তখন থেকে সারা বিশ্বের অবস্থা কেমন তা আমরা সবাই ই কম-বেশি জানি। তখন চাকরি থাকলেও আমার হাজবেন্ড ঘরেই বসে ছিল। ইনকাম সোর্স তেমন একটা ছিল না। আমাদের জমানো সেভিংস দিয়ে অনেক মাস চলতে হয়েছে। এছাড়াও আমার সব সময় একটা চিন্তা-ভাবনা ছিল যে, আমার আসলেই কিছু করা উচিত। যেহেতু বাচ্চাদেরকে সামলিয়ে বাহিরে গিয়ে কাজ করতে পারছিনা।

পেইন্টিং নিয়ে উম্মে হানি অরিনের এগিয়ে চলার গল্প !
ছবিঃ বোতল পেইন্টিং !

আর আমার বাবারও আর্থিক অবস্থা একটু খারাপ হওয়ার কারণে ফিনান্সিয়ালভাবে আমি তাদের অনেক সাপোর্ট করি। আমার ছোট ভাই-বোনদের স্টাডি কমপ্লিট বা নিজেদের চাহিদা পূরণের জন্য যতটুকু সম্ভব একজন বড় ভাইয়ের মতো পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। যখন ওদের যা কিছু প্রয়োজন হয় তা আমি দেয়ার চেষ্টা করেছি। তাই একজন বড় ভাই হিসেবে যেমন একটা সংসারের জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তা আমি একজন মেয়ে হয়ে যেন করতে পারি তার জন্যই আসলে আমার উদ্যোক্তা জীবনে আসা। আর এখন নিজের সংসারে বাচ্চাদের স্কুল, পড়াশোনা, সংসার এই সবকিছু সামলিয়ে বাহিরে গিয়ে কাজের কথা কোন ভাবেই ভাবতে পারছিনা। তাই আমি উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছি।

আমার উদ্যোগঃ

আমি পেইন্টিং খুবই পছন্দ করি। কিন্তু কখনো এগুলো নিয়ে কাজ করবো কিনা তা ভাবা হয়নি। আমার এক ভাবী পেইন্টিং নিয়ে কাজ করেন। তাছাড়া আমার বড় আপার মেয়ে সেও খুব পেইন্টিং পছন্দ করে। ওদের পেইন্টিংগুলো দেখেই আমার ইচ্ছে জাগলো যে হয়তো আমিও কিছু করতে পারবো পেইন্টিং নিয়ে। তারপর থেকেই শুরু হয় আমার উদ্যোগ নিয়ে পথচলা। আমার উদ্যোগের নাম Kashnuhaa.

পেইন্টিংয়ের বৈশিষ্ট্যঃ

পেইন্টিং নিয়ে শুরু হয় আমার উদ্যোক্তা জীবন। পেইন্টিংয়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হাতের সাহায্যে রঙ-তুলি দিয়ে আর্ট করা। পেইন্টিং যেহেতু সবার খুবই পছন্দ তাই আমি পেইন্টিং নিয়েই কাজ শুরু করি। আমাদের সকলেরই বাসায় টুকটাক গ্লাস, বোতলগুলো ফেলে রাখা হয়। তাই সেই বোতলগুলো ফেলে না দিয়ে বরং পেইন্টিং করলে তা খুব সুন্দর ও ইউনিক দেখায়। গ্লাস-বোতলগুলো অনায়াসে ফুলদানি হিসেবে অথবা শোপিস হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও লাইট নিয়ে কাজ করছি বোতলগুলোতে। লাইট দিয়ে খুব সুন্দরভাবে ডেকোরেশন করা যায়। সেটা যেকোনো বয়সের সবারই খুব পছন্দ। আর রুমগুলোও খুব আলোকিত করে ফেলে।

পেইন্টিং নিয়ে উম্মে হানি অরিনের এগিয়ে চলার গল্প !
ছবিঃ ক্যানভাস পেইন্টিং !

পেইন্টিংয়ের বর্তমান চাহিদাঃ

বর্তমানে পেইন্টিংয়ের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সবাই নিজের ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে নিজের বাড়িটিকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে, গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। তাছাড়া সবাই ইউনিক কিছু পছন্দ করেন। যেহেতু গ্লাস বোতলগুলো তেমন এভেইলেবল না। তাই আমি মোটামুটি ভাল সাড়া পাচ্ছি। ভবিষ্যতে হয়তো আল্লাহ চাইলে চারিদিকে ছড়িয়ে যাবে আমার পেইন্টিং ইনশাআল্লাহ। আর ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিংগুলোর অনেক চাহিদা সব জায়গায়। নিজের রুমে, অফিসে এবং অন্যান্য সব জায়গাতেই সাজানোর জন্য খুবই সুন্দর ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং।

পেইন্টিংয়ের ভবিষ্যৎ চাহিদাঃ

পেইন্টিং ভালোবাসেননা এমন মানুষ খুব কম ই রয়েছেন। আর হাতে তৈরি পেইন্টিং তো সব সময়ের জন্যই খুব জনপ্রিয়। এর অনেক চাহিদাও রয়েছে। হাতে পেইন্ট করা এই সকল ক্যালিগ্রাফি, ক্যানভাস, গ্লাস বোতল সবকিছুরই হয়তো ভবিষ্যতে আরো চাহিদা বেড়ে যাবে। কারন, মানুষ দিন দিন অনেক বেশি সৌন্দর্য সচেতন হচ্ছে।

যাদের সাপোর্ট পেয়েছিঃ

আমার উদ্যোগে আমি সবসময় আমার পরিবারকে পাশে পেয়েছি। সর্বপ্রথম যার কথা বলবো তিনি হলেন আমার হাজবেন্ড। তার উৎসাহ না পেলে হয়তো কাজগুলো করতে পারতাম না। কারণ, প্রথম অবস্থায় আমার বিভিন্ন ধরনের রঙ নিয়ে তেমন আইডিয়া ছিলো না। তখন আমার অনেক বেশি খরচ হতো, রঙ নষ্ট হতো। তাই আমার বেশি বেশি পণ্য সরবরাহ করতে হতো। সেই হিসেবে তিনি আমাকে সবসময় ই সাপোর্ট দিয়েছেন। আর বলতেন, “রং নষ্ট হয় হোক, তুমি চিন্তা করো না। বরং মনযোগ দিয়ে কাজ শিখো। যত ভালো শিখতে পারবে তত মানুষ তা মূল্যায়ন করতে পারবে।” এভাবেই তিনি আমাকে সাপোর্ট দিতেন।

পেইন্টিং নিয়ে উম্মে হানি অরিনের এগিয়ে চলার গল্প !
ছবিঃ ফেয়ারি লাইট পেইন্টিং !

উদ্যোক্তা জীবনের বাধা-বিপত্তিঃ

পেইন্টিংয়ের উদ্যোগ নিয়ে এখনও পর্যন্ত তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি আমাকে। তবে প্রথম অবস্থায় আমি ঢাকার বাইরে ডেলিভারি দেয়ার জন্য অনেক চিন্তা করতাম। যেহেতু আমার ক্যানভাসগুলো একটু বড়। তা ছাড়া গ্লাস নিয়ে কাজ করছি তাই একটু ভয় হতো। তারপর আস্তে আস্তে বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করা শিখে গেলাম এবং ভালো করে কিভাবে প্যাকেজিং করতে হয় সেটা সম্পর্কেও আইডিয়া নিলাম। এখন আমি অর্ডার পেলে ঢাকার বাহিরেও দিতে পারি আলহামদুলিল্লাহ। এটাই আমার উদ্যোগের সবচেয়ে বড় একটা কাজ ছিল যেটা আমি এখন করতে পারি আল্লাহর অশেষ রহমতে। আসলে কেহই কোনো কাজ পূর্বে থেকে শিখে আসে না। কাজ করতে করতেই সকল বাধা-বিপত্তি জয় করা সম্ভব। আর তার জন্য প্রয়োজন মনোবল আর ইচ্ছেশক্তি। আপনার মাঝে যদি ইচ্ছেশক্তি থাকে তাহলে আপনি সব বাধা-বিপত্তেই পার করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। একদিন আপনার গন্তব্যে আপনি নিশ্চিত পৌঁছাতে পারবেন।

আমার উদ্যোগের প্রাপ্তিঃ

আমার উদ্যোগের সেরা প্রাপ্তি আমার স্বপ্ন পূরণ করা। আমার স্বপ্ন, আমার পেইন্টিং দিয়ে মানুষ তার পছন্দের রুমটা সাজাবে। যেখানে আমরা থাকতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি এবং আমাদের অবসর সময় যেখানে বেশি কাটে। যেমন- আমরা যেখানে অফিস করি সেই অফিসের রুমটাকে আমরা চাইলে পরিপাটি রাখতে পারি। দেওয়াল জুড়ে সুন্দর ক্যালিগ্রাফি সাজিয়ে রাখতে পারি। অফিসের টেবিলটাও আমরা চাইলে গ্লাস পেইন্টিং দিয়ে সাজাতে পারি। আজ অনেকেই তা করছেন। আর এটাই ছিল আমার ছোট উদ্যোক্তা জীবনের প্রাপ্তি। যারা আমার কাছ থেকে পেইন্টিং নিচ্ছেন তারা তাদের পছন্দমত নিজেদের ঘরগুলো সাজাচ্ছেন।দিনশেষে, এটাই আমার জন্য প্রাপ্তি। তাছাড়া নিজের বাবা-মায়ের জন্যও কিছু করতে পারি। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছুই হতে পারেনা।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ

আমার এই ছোট্ট উদ্যোগ পেইন্টিং নিয়ে আমার একটি ছোট্ট পরিচয় যেন তৈরি করতে পারি এটাই আমার চাওয়া। আমাকে মানুষ যেন চিনে আমার কাজ দিয়ে। যাতে আমার কাজকে মানুষ ভালবাসে তাই সেভাবেই একটু একটু করে এগোচ্ছি। আমার স্বপ্ন আমি যেন আমার কাজকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। হোম ডেকোরেশন এর বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আমি যেন ভবিষ্যতে আরো কাজ করতে পারি এটাই আমার সপ্ন।

লেখকঃ উম্মে হানি অরিন
উদ্যোগঃ Kashnuhaa

Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/
Top

You cannot copy content of this page