কয়রার কপোতাক্ষ নদের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ! আমার বাংলাদেশ বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান by Jannatun Naime - January 2, 2023January 2, 20230 Spread the loveকয়রার কপোতাক্ষ নদের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ! কয়রার কপোতাক্ষ নদের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে যে কাউকেই ৷ এই নদটি যশোর জেলা হয়ে খুলনার কয়রা উপজেলার বুক চিরে শিবসা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে ৷ এই নদের স্রোত আর গভীরতা নিয়ে রয়েছে নানা গল্প, কবিতা ও ছন্দ ৷ যা পূর্বে বেশ প্রচলিত ছিল কয়রার আমাদী এলাকার মানুষের মধ্যে ৷ বর্তমানে তা কেবলই অতীত ৷ তবুও এর রূপ-বৈচিত্র্য আজও মুগ্ধ করে সকলকে! কপোতাক্ষ নদ নদী নয় নদ ৷ কপোতাক্ষ এর নাম ৷ কপোতাক্ষ বইছে কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনার বুক চিরে ৷ “বহুদেশ দেখিয়াছি বহু নদ-দলে, কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে”৷ মধু কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের অপার তৃষ্ণা মিটেছিল শুধু এই কপোতাক্ষের জলে ৷ পৃথিবীর বহু দেশের বহু নদ-নদী কবি দেখেছেন আপন মনে কিন্তু কোনো দেশের নদ-নদীর জল তাঁর স্নেহের তৃষ্ণা মেটাতে পারেনি কখনো । এক সময় কপোতের চোখের মত স্বচ্ছ পানি ছিল বলে নদের নাম হয়েছিল কপোতাক্ষ ৷ এখন সেই স্বচ্ছতাও নেই, পানির সেই প্রাচুর্যও নেই ৷ কপোতাক্ষের জন্ম কুষ্টিয়ার ইছামতির দক্ষিণ-পূর্বের শাখা নদী ভৈরব থেকে ৷ মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভৈরব নদী আর বৃষ্টির পানি কপোতাক্ষের মূল ভরসা ৷ পানির অভাবে উজানের যশোরে এই নদের নাব্যতা কম ৷ তুলনামূলকভাবে নাব্যতা বেশি খুলনার ভাটিতে ৷ কোট চাঁদপুর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে কপোতাক্ষ খুলনার পাইকগাছায় মিলেছে শিবসা নদীর সাথে ৷ কপোতাক্ষ তার শাখা-প্রশাখা মিলিয়ে কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনার প্রায় ৩ হাজার ৩১৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকার পানি নিস্কাশন করে ৷ প্রায় ২৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদের সর্বনিম্ম প্রশস্ততা ১৭০ মিটারের মত ৷ চারটি জেলার ১৩টি উপজেলার চাষীরা গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের জল সেচ সুবিধা কাজে লাগিয়ে বছরে প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমিতে ফলায় ৩ লাখ টন শস্য ৷ ছবিঃ কপোতাক্ষ নদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক সময় এই নদে প্রবাহিত হতো স্বচ্ছ পানি ৷ তাইতো প্রাণ জুড়িয়ে যেত এই নদের নির্মল বাতাসে ৷ চারিদিকে শস্য শ্যামল সোনালি ফসলের মাঠ আর নদের কূল ঘেরা গাছ-পালার স্নিগ্ধ হাওয়ায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করবে সকলের ই ৷ বর্তমানে এই নদ প্রায় বিলীনের পথে ৷ পানি কম হলে কি হবে, মাছ আর মাছ ধরার আয়োজন কম নয় এই নদে ৷ তবুও জীবনধারাকে বাহুডোরে বেধে আপনগতিতে এভাবেই বয় কপোতাক্ষের ধারা ৷ বর্তমানে কয়রার এই নদীর পাড় ঘেঁসে গড়ে উঠেছে অসংখ্য খাল-বিল ৷ আর সেই বিলে চাষ হচ্ছে নানা জাতের চিংড়ি মাছ ৷ সেই সাথে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কাঁকড়ার খামার ৷ যাবেন কিভাবে রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী ও জনপথের মোড় থেকে ঢাকা টু খুলনার রুটের বিভিন্ন পরিবহনে যাওয়া যায় ৷ এই রুটে এসি- নন এসি উভয় প্রকারের বাস ই চলাচল করে থাকে ৷ আপনি চাইলে যে কোন বাসে করেই যেতে পারেন ৷ বাস ভাড়া হতে পারে সর্বনিম্ম ৫৫০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত ৷ আর সময় লাগতে পারে ৪ থেকে ৭ ঘন্টা ৷ বাসের মধ্যে রয়েছে সোহাগ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ঈগল পরিবহন, টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস, গ্রীন বাংলা ট্র্যাভেলস, সৌখিন ট্র্যাভেলস, এ কে ট্র্যাভেলস, দিগন্ত পরিবহন, এমাদ পরিবহন, দেশ ট্র্যাভেলস ইত্যাদি ৷ ঢাকা থেকে ট্রেনে খুলনা যেতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন অথবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা ট্রেনে করে যাত্রা করতে পারেন ৷ ভাড়া হতে পারে সর্বনিম্ন ৫০৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১,৭৮১ টাকা ৷ ছবিঃ কপোতাক্ষ নদের পাড় তারপর খুলনা থেকে কয়রার বাসে করে যেতে হবে কয়রার বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত ৷ সেখান থেকে অটো কিংবা ভ্যানে করে যেতে পারেন কয়রা বাজার ৷ অথবা হেঁটেও যেতে পারেন ৷ হেঁটে গেলে সময় লাগবে ৫ থেকে ১০ মিনিট ৷ তারপর কয়রা বাজার থেকে অটো কিংবা ভ্যানে করে চলে যাবেন কপোতাক্ষ নদীর পাড় ! থাকবেন কোথায় কয়রায় থাকার জন্য কয়রা বাজারে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল ও সরকারি ডাক বাংলো রয়েছে ৷ তার মধ্যে রয়েছে বিসমিল্লাহ আবাসিক হোটেল, সুন্দরবন আবাসিক হোটেল, আল্লাহর দান আবাসিক হোটেল, কয়রা সুন্দরবন পর্যটক কেন্দ্র ও কয়রা ডাকবাংলো ইত্যাদি ৷ খাবেন কোথায় কয়রায় খাওয়ার জন্য কয়রা বাজারে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে ৷ তার মধ্যে আম্মাজান রেস্টুরেন্ট, রফিক হোটেল এন্ড ডায়রি ফার্ম, খুলনা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, নিরিবিলি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি ৷ এছাড়াও খুলনায় নেমে আব্বাস হোটেল থেকে স্বাদ নিতে পারেন খুলনার বিখ্যাত চুইঝাল !