বৈচিত্র্যময় সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপ ভ্রমণ ! আমার বাংলাদেশ বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান by Jannatun Naime - September 23, 20210 Spread the love বৈচিত্র্যময় সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপ ভ্রমণ ! ভ্রমণ করতে কে না পছন্দ করেন ৷ আর তা যদি হয় সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপ ৷ তাহলে তো কোন কথাই নেই ৷ তাইতো ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে যান বৈচিত্র্যময় সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপে ৷ বৈচিত্র্যময় সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপের অবস্থানঃ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ‘আইসল্যান্ড’ ৷ এটি বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনে অবস্থিত কক্সবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ “সেন্টমার্টিন দ্বীপ” ৷ যার চারপাশে ঘিরে রয়েছে সাগর আর আকাশের নীল । এই দ্বীপে প্রচুর পরিমানে নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়দের ভাষায় এই দ্বীপ কে বলা হয় “নারিকেল জিঞ্জিরা” ৷ সারি সারি নারিকেল গাছ , তীরে বাঁধা নৌকা আর ঢেউয়ের ছন্দ এই দ্বীপকে করেছে অনন্য ৷ এই দ্বীপটি টেকনাফ উপজেলা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে দক্ষিনে গড়ে উঠা একটি ছোট্ট প্রবাল দ্বীপ ৷ মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম উপকূল থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত নাফ নদীর মুখে এই দ্বীপের অবস্থান ৷ নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য অবলোকনের ও ভ্রমনের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা হচ্ছে এই সেন্টমার্টিন দ্বীপ ৷ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য যেন দুই হাত মেলে ঢেলে দিয়েছে এই প্রবাল দ্বীপে ৷ সমুদ্রের বিরামহীন গর্জন আর খোলামেলা বালুকাময় সমুদ্র সৈকত যেন নীল রঙ্গের রাজ্যে পরিণত করেছে সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপ ৷ বৈচিত্র্যময় সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপ বৈচিত্র্যময় সেন্টমার্টিনঃ এই দ্বীপটি “দক্ষিনের স্বর্গ” নামেও বেশ পরিচিতি অর্জন করেছে ৷ এখানে রয়েছে সারি সারি নারিকেল গাছ আর ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে চলা গাঙচিল ৷ সৈকতের স্নিগ্ধ বাতাসে যেন গা জুড়িয়ে যায় ৷ আর সাগর তলার মায়াময় স্নিগ্ধতায় যেন মন জুড়িয়ে যায় এক নিমিষেই ৷ সেন্টমার্টিনের বাহারি ফুল হলো ” ছাগল কুঁড়ি বা সৈকত কলমি “৷ এটি সাধারণত সমুদ্রতীরের লবনাক্ত আবহাওয়ায় জন্মায় ৷ অবহেলায় বেড়ে উঠায় ছাগল কুঁড়িও সৈকতে বিলায় রং- মাধুরীর মাদকতা ৷ এই দ্বীপের বাসিন্দারা বেশির ভাগ ই জেলে ৷ জাল হলো জেলেদের যুদ্ধাস্ত্র আর ট্রলার হলো জেলেদের বাহন ৷ তাইতো দিনের সূর্য আর রাতের তারা দেখে এ দ্বীপের জেলেরা দিক নির্নয় করে ৷ দরিয়ার রং দেখে বুঝে নেয় পানির গভীরতা আর আকাশের মেঘ দেখে বুঝে নেয় আবহাওয়ার গতি – প্রকৃতি ৷ বৈচিত্র্যময় সেন্টমার্টিন দ্বীপটি মূলতঃ পাথুরে অঞ্চল ,অভ্যন্তরীন জলাভূমি , সৈকতভূমি , কাঁদাভূমি ও ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে ব্যষ্টিত ইত্যাদি জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ একটি অঞ্চলে বিভক্ত ৷ এই দ্বীপে রয়েছে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভীদ, ১৮৭ প্রজাতির শামুক – ঝিনুক, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১২০ প্রজাতির পাখি, ৪ প্রজাতির উভয়চর, ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ৷ এই দ্বীপে রয়েছে অসংখ্য অমেরুদন্ডী প্রাণী । তার মধ্যে রয়েছে শিল কাঁকড়া , সন্ন্যাসী শিল কাঁকড়া , স্পঞ্জ , লবস্টার ইত্যাদি ৷ আর মাছের মধ্যে রয়েছে নানান প্রজাতির মাছ । তার মধ্যে প্রজাপতি মাছ , সুঁই মাছ , রুপচাঁদা , লাল মাছ , রাঙ্গা কই , করাল মাছ , উড়ুক্কু মাছ , পরী মাছ ইত্যাদি ৷ উদ্ভীদের মধ্যে রয়েছে গোলাকার পাতার আইপোমিয়া লতা , কেয়া , শ্যাওড়া , সাগরলতা , বাইন গাছ ইত্যাদি ৷ আর বৃক্ষ জাতীয় গাছের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নারিকেল গাছ ৷ এছাড়াও গাছের মধ্যে রয়েছে বাবলা গাছ ,আম গাছ, কড়ই গাছ, শিমুল গাছ, সুপারি গাছ, নারিকেল গাছ ইত্যাদি ৷ বৈচিত্র্যময় সেন্টমার্টিন দ্বীপ সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপে যাবেন যেভাবেঃ সেন্টমার্টিনে যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে ৷ কারন , সেন্টমার্টিনে যাওয়ার বেশির ভাগ শীপ ই টেকনাফ থেকে ছেড়ে যায় ৷ টেকনাফ থেকে ট্রলার কিংবা জাহাজে করে সেন্টমার্টিনে যাওয়া যায় ৷ আর ঢাকা থেকে যেতে চাইলে সরাসরি বাসে করে টেকনাফে গিয়ে তারপর জাহাজ কিংবা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যেতে হয় ৷ থাকবেন কোথায়ঃ সেন্টমার্টিনে থাকার জন্য বেশ কিছু উন্নত মানের ও মধ্যম মানের হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে ৷ এসব হোটেল ও রিসোর্টগুলো মূলতঃ তৈরি করা হয়েছে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ৷ তার মধ্যে বেশ কিছু হোটেল ও রেসোর্টের নাম দেওয়া হলো – ব্লু মেরিন রিসোর্ট ৷ এর অবস্থান, জেটির পাশ দিয়ে পশ্চিম বীচ ৷ হুমায়ুন আহমেদের সমুদ্র বিলাস ৷ এর অবস্থান, পশ্চিম বীচ ৷ অবকাশ পর্যটন লি ৷ এর অবস্থান, পশ্চিম বীচ ৷ শায়রি ইকো রিসোর্ট ৷ এর অবস্থান, গলাচিপা ৷ এস কে ডি রিসোর্ট ৷ এর অবস্থান, বিছানাকান্দি ৷ ডায়মন্ড সি রিসোর্ট ৷ এর অবস্থান, পশ্চিম বীচ ৷ ড্রিম নাইট রিসোর্ট ৷ এর অবস্থান, পশ্চিম বীচ ৷ সিটিভি রিসোর্ট ৷ এর অবস্থান, পশ্চিম বীচ ৷ কোরাল ব্লু রিসোর্ট ৷ হোটেল স্যান্ড শোর ৷ এর অবস্থান, বাজার এলাকা ৷ হোটেল সী ইন ৷ এর অবস্থান, বাজার এলাকা ৷ খাবেন কোথায়ঃ সেন্টমার্টিনের প্রায় প্রত্যেকটি হোটেল ও রিসোর্টে রয়েছে রেস্টুরেন্ট ৷ আপনি চাইলে যে কোন রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন ৷ এ ছাড়াও সব রেস্টুরেন্টের সামনে সাজিয়ে রাখা হয় হরেক রকম জ্যান্ত মাছ ৷ আপনি চাইলে আপনার পছন্দমত মাছ বেছে নিয়ে রেস্টুরেন্টে অর্ডার দিতে পারেন ৷ আর রাতের বেলায় বার বি কিউ পার্টি করতে জ্যান্ত মাছ বাছাই করে ওদের বলে দিলে ওরাই সবকিছু আপনাকে করে দিবে ৷ সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপ ভ্রমণ সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে ডাব ৷ এই ডাব যেমন মিষ্টি, তেমনি সুস্বাদু ৷ তাই তো ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এই ডাবের কদর অনেকগুন বেশি ৷ আর যারা মাছ খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য রয়েছে হরেক রকম মাছ ৷ যেমনঃ কোরাল মাছ, ইলিশ মাছ, রূপচাঁদা মাছ, কালাচাঁদা মাছ, সুন্দরী পোয়া ইত্যাদি ৷ বিদ্যুৎসংযোগ সম্পর্কে ধারণাঃ সেন্টমার্টিনে কোন প্রকার বিদ্যুৎ সংযোগ নেই ৷ শুধুমাত্র জেনারেটরের সংযোগ রয়েছে ৷ তাই হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে সন্ধ্যা থেকে রাতের ১০টা বা ১১টা পর্যন্ত জেনারেটর চালানো হয় ৷ শীতকালে ফ্যানের প্রয়োজন হয়না বলে দিনের বেলায় বিদ্যুতের অভাব অনুভব হয় না ৷ শুধুমাত্র মোবাইল, ক্যামেরা আর ল্যাপটপের সার্জ নিয়ে সমস্যা হয় ৷ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে জরুরি কিছু টিপসঃ সেন্টমার্টিনে যাওয়ার পূর্বে সম্ভব হলে কোন ট্র্যাভেল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে যেতে পারেন ৷ সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপ আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ৷ তাই এমন কিছু করবেননা যেটাতে প্রকৃতির ক্ষতি হয় ৷ যথাস্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলুন ! দয়া করে যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলবেননা ৷ এতে পরিবেশ দূষণ হবে, প্রকৃতির সৌন্দর্য নষ্ট হবে ৷ সেন্টমার্টিনে মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা হতে পারে ৷ তবে টেলিটকে মোটামুটি ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় ৷ তাই সম্ভব হলে টেলিটক ব্যবহার করতে পারেন ৷ কম খরচে সেন্টমার্টিনে থাকতে হলে ছুটির দিন ব্যতিত অন্য যে কোন দিন যেতে পারেন ৷ কারন, ছুটির দিনে পর্যটকদের ভিড় থাকে অনেক বেশি ৷ যার ফলে থাকার রুম পাওয়া কষ্ট হয়ে যায় ৷ বর্তমানে সেন্টমার্টিনে নিয়মিত বিজিবিরা টহল দিচ্ছেন ৷ তাই রাত ১২টার পর বীচ বা জেটি এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ ৷ কোন কিছুতে দালালদের সহযোগীতা নিবেননা ৷ যা করার নিজেরাই সবকিছু করুন ৷ সমুদ্রে নামার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করে নামবেন ৷ জনসমাগম বেশি হলে আগে থেকেই লঞ্চের টিকেট কেটে রাখতে পারেন ৷