যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে ?

যোগাযোগ ব্যবস্থা
Spread the love

যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে ?

যোগাযোগ ব্যবস্থা ! সৃষ্টির সেরা জীব হলো মানুষ ৷ মানুষের আবির্ভাবের পর থেকেই শুরু হয়েছে একে অপরের সাথে যোগাযোগ ৷ তাই প্রথম দিকে মানুষ ইশারায় -ইঙ্গিতে – অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন ৷ তারপর ভাষার পূর্ণ বিকাশ ঘটলে মানুষ একে অপরের সাথে শব্দ বা বাক্যের বিনিময়ে যোগাযোগ শুরু করেন ৷ আর বর্ণমালা আবিস্কারের পর মানুষ লিখিত যোগাযোগ ব্যবস্থারও প্রচলন ঘটান ৷ এছাড়াও যোগাযোগের আরেকটি মাধ্যমেরও প্রচলন ঘটে ৷ তা হলো যাতায়াত ব্যবস্থা ৷

যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রকারভেদ

আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে ৷ যেমন-
১৷ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা (Telecommunication System)
২৷ তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা (Information Communication System)
৩৷ প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বা যাতায়াত ব্যবস্থা ( Direct Communication or Transportation System)

 

টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাঃ

সাধারণভাবে টেলিযোগাযোগ বলতে যে কোন দূরত্বে কোন যন্ত্র বা ডিভাইসের মাধ্যমে যোগাযোগের পদ্ধতিকে বোঝানো হয়েছে ৷ শুরুতে এই যোগাযোগ টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ নির্ভর ছিল ৷ বর্তমানে বিশ্বগ্রামের ধারণা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রযুক্তির উদ্ভব হওয়ার ফলে মানুষের ভৌগোলিক দূরত্বের অবসান ঘটেছে ৷ নিম্মে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ন অংশ উল্লেখ করা হলো –

১৷ ডিজিটাল টেলিফোন নেটওয়ার্কঃ

ডিজিটাল টেলিফোন হলো আধুনিক সকল সুবিধা নিয়ে তৈরি ডিজিটাল ফোন ৷ ডিজিটাল টেলিফোন ব্যবহারের মাধ্যমে পরিপূর্ন সুবিধা পেতে হলেও প্রয়োজন ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ৷ বর্তমানে বেশির ভাগ ল্যান্ডফোনগুলোর নেটওয়ার্কও ডিজিটাল সিস্টেমের ৷ সেই সাথে মোবাইল ফোনগুলোও ডিজিটাল হয়ে থাকে ৷ তাই ডিজিটাল টেলিফোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এখন ভয়েস কলের পাশাপাশি ডেটাও প্রেরণ করা সম্ভব ৷

২৷ মোবাইল কমিউনিকেশনঃ

টেলিকমিউনিকেশন ও তারবিহীন যোগাযোগের একটি রূপ হলো মোবাইল কমিউনিকেশন ৷ মোবাইল ফোন হলো একটি ইলেকট্রিক ডিভাইস ৷ এর দ্বারা মানুষ যে কোন সময় স্থির অবস্থায় কিংবা চলন্ত অবস্থায় যে কোন স্থানে যে কোন সময় যোগাযোগ করা সম্ভব ৷ এই ফোনের মাধ্যমে দেশ বা বিদেশের যেই কোন মোবাইল ব্যবহারকারীর কাছে এসএমএস বা ক্ষুদেবার্তা গ্রহণ ও প্রেরণ করা যায় ৷ সেই সাথে ইন্টারনেট সার্ভিসের মাধ্যমে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ই- মেইল গ্রহণ ও প্রেরণ করা যায় ৷ যেইকোন সময় গান শুনা যায়, ভিডিও দেখা যায় ৷ ভিডিও কল করা যায়, ভয়েস ও ভিডিও চ্যাটিংও করা যায় এবং অডিও ভিডিও রেকর্ড করা যায় ৷ সেই সাথে ব্লুটুথ ও ইনফ্রারেড প্রযুক্তি ব্যবহারে তথ্য আদান – প্রদান করা যায় ৷

৩৷ স্যাটেলাইট

স্যাটেলাইটের শাব্দিক অর্থ হলো উপগ্রহ ৷ আমরা জানি চাঁদকে বলা হয় পৃথিবীর উপগ্রহ ৷ তাহলে স্যাটেলাইট কি নতুন কোন চাঁদকে ইজ্ঞিত করা হয়েছে ? আসলে চাঁদ হলো পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ ৷ আর স্যাটেলাইট হলো মানুষের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহ ৷ যা চাঁদের মতোই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ৷ তবে চাঁদ পৃথিবীকে মাসে একবার প্রদক্ষিণ করে আর কৃত্রিম উপগ্রহগুলো পৃথিবীকে ২৪ ঘন্টা বা একদিনে একাবার করে প্রদক্ষিণ করে ৷ এর কারণ হলো চাঁদ পৃথিবী থেকে প্রায় ২৪০ হাজার মাইল দূরে অবস্থিত তাই তার কক্ষপথটা অনেকটা বড় ৷ যার ফলে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে একমাস ৷ অপরদিকে কৃত্রিম উপগ্রহগুলো তাদের সেবার সুবিধার্থে পৃথিবী থেকে প্রায় ২৩,০০ মাইল দূরত্বে স্থাপন করা হয় ৷ যার ফলে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ২৪ ঘন্টা ৷

তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ

বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে মানুষ এখন ঘরে বসে যে কোন সময় , যে কোন স্থানে নিজের প্রয়োজনীয় তথ্য আদান- প্রদানের মধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন ৷ ইন্টারনেট বিশ্বগ্রামের তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন এক নিরাপদ ধারার সৃষ্টি করেছে যে মানুষ তার প্রয়োজনীয় যে কোন তথ্য তার ব্যক্তিগত ডিভাইসগুলোতে সংগ্রহ করতে এবং তা পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হচ্ছে ৷ নিম্মে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ন কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-

১৷ ইন্টারনেট (Internet)

International Network থেকেই Internet – এর উদ্ভব ৷ ইন্টারনেট হলো আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক বা নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক ৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে কম্পিউটারের মাধ্যমে মানুষ যোগাযোগ করতে পারে ৷ তথ্য আদান – প্রদান করতে পারে এবং কম্পিউটারে নিয়ে আসতে পারে ৷ এই ইন্টারনেট বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে তৈরিকৃত বৃহৎ নেটওয়ার্ক ৷ এর উপাদান হলো ব্যবহারকারী, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, তথ্য, কম্পিউটার ইত্যাদি ৷

২৷ ই-মেইল (E-mail)

ই-মেইল ৷ যার পূর্নরুপ হলো ইলেক্ট্রনিক মেইল ৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইস যেমন- কম্পিউটার, মোবাইল প্রভৃতির মধ্যে ডিজিটাল তথ্য আদান – প্রদান করার ব্যবস্থাকেই ই-মেইল বলে ৷ ইমেইলের ক্ষেত্রে যে বষয়টি গুরুত্বপূর্ন তা হলো আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল ৷ এই আইপির মাধ্যমে তথ্য আদান – প্রদান এবং টেক্সট বার্তার সাথে অ্যাটাচমেন্ট আকারে নানা ফাইল যেমন – ডকুমেন্ট, ছবি, ভিডিও, অডিওসহ যে কোন ফাইল পাঠানো যায় ৷ আর এই ফাইলগুলো বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তের যেই কোন স্থানে পাঠানো যায় ই – মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহারের মাধ্যমে ৷ তাই সকলের নিরাপত্তার সুবিধার্থে গোপন পাসওয়ার্ড দ্বারা সুরক্ষিত রাখা হয় প্রত্যেকের ই-মেইল অ্যাকাউন্টকে ৷

৩৷ টেলিকনফারেন্সিং (Teleconferencing)

টেলিফোন বা মুঠোফোন ব্যবহারের মাধ্যমে কম্পিউটার , অডিও-মডেম-ভিডিও যন্ত্রের সাহায্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন স্থান থেকে কোন সভায় অংশগ্রহণ করাকে বলা হয় টেলিকনফারেন্সিং ৷ এই পদ্ধতিটি অনুষ্ঠিত হয় ভিন্ন ভিন্ন স্থানে থেকে একদল লোকের একসাথে মিলিত হয়ে কার্যবিবরনী, মতামত ও রিপোর্ট পেশ করতে ৷ বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকেই টেলিকফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সভায় একাধিক ব্যক্তি অংশ গ্রহণ করে থাকেন ৷

৪৷ ভিডিও কনফারেন্সিং (Video Conferencing)

বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে ভৌগোলিক দূরত্বে অবস্থানকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে ভিডিওর মাধ্যমে পরস্পরকে সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে পারাকে ভিডিও কনফারেন্সিং বলে ৷ ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য প্রয়োজন ওয়েবক্যাম ও ইন্টারনেটসহ প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ৷ যেমন – স্কাইপ, ইয়াহু, ম্যাসেঞ্জার ইত্যাদি ৷ বর্তমানে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবসা – বাণিজ্য ছাড়াও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতেও ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে ৷

৫৷ বুলেটিন বোর্ড (Bulletin Board)

একটি শক্তিশালী বোর্ড হচ্ছে বুলেটিন বোর্ড, যেখানে কম্পিউটারের সাথে অন্যান্য কম ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটারও টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে যুক্ত থাকে ৷ কম্পিউটার বুলেটিন বোর্ডের ব্যবহার অনেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত কিংবা সুপার শপের মত যেখানে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য, নোটিশ, ক্রয় – বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন, ব্যক্তিগত সংবাদ ইত্যাদি উপস্থাপন করা হয় ৷ বুলেটিন বোর্ডের সেবা পেতে হলে অনেক সময় কিছু মাসিক চার্জও দিতে হয় ৷

প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বা যাতায়াত ব্যবস্থাঃ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ফলে বিশ্বগ্রামে যাতায়াত ব্যবস্থা ব্যাপক সহজ ও উন্নততর হয়ে উঠেছে ৷ অনেক সময় ট্রেন, বাস, স্টীমার-লঞ্চ কিংবা বিমানের টিকেটের জন্য স্বশরীরে অফিস কিংবা কাউন্টারে যেতে হতো ৷ এখন ইন্টারনেটের ফলে ঘরে বসেই এসব টিকেট কেনা যায় ৷ এর ফলে টিকেট কাটতে সময় ও অর্থ দু’টোই সাশ্রয় হয় ৷ নিম্মে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ন প্রযুক্তিগুলো তুলে ধরা হলো –

  • রিজার্ভেশন সিস্টেমঃ

এই সিস্টেম হলো ইলেক্ট্রনিক উপায়ে আসন সংরক্ষণ ব্যবস্থার প্রক্রিয়া ৷ প্লেন, বাস, ট্রেন, হোটেলের নির্ধারিত পরিমান আসন থাকে ৷ সেসকল আসন বরাদ্দ করারও ব্যবস্থা থাকে ৷ প্রচলিত পদ্ধতিতে এই সকল আসন কাগজে ছক কেটে বরাদ্দ করা হয় ৷ কিন্তু দূর দূরান্ত থেকে আসন বরাদ্দ করার পদ্ধতি প্রচলিত পদ্ধতির মাধ্যমে করা যায় না ৷ তাই বিকল্প পদ্ধতি অনুসারে যে সিস্টেম ব্যবহার করে আসন বরাদ্দ করা হয় তা হলো রিজার্ভেশন সিস্টেম ৷

  • জিপিএস

জিপিএস হলো স্যাটেলাইট নির্ভর একমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের যে কোন স্থানের অবস্থান খুব সহজে নির্ণয় করা যায় ৷ যেমন- জিপিএস ব্যবস্থা নির্ভর বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সেবা হলো ট্রেনের অবস্থান সম্পর্কে আগে থেকে জানতে পারা ৷ জনপ্রিয় এই সেবাটি বাংলাদেশের গ্রামীণ ফোন ও রেলওয়ের যৌথ ব্যবস্থাপনায় জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রদান করা হয়ে থাকে ৷

  • জিআইএস

এটি এমন একটি স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার সিস্টেম যা ভৌগোলিক যে কোন স্থাপনার পরিবর্তন বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে কোন স্থানের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ পরিচালনা করে ৷ বিভিন্ন অঞ্চলের অবকাঠামোগত সমস্যা পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ , নগরায়ন ও আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরিতে জিআইএস গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে ৷

সুতরাং যোগাযোগ ব্যবস্থা হচ্ছে তাৎক্ষনিক তথ্য আদান – প্রদানের বিভিন্ন মাধ্যম বা প্রক্রিয়া ৷ হতে পারে সেটা এক মানুষ থেকে অন্য মানুষের মাঝে কিংবা এক যন্ত্র থেকে অন্য যন্ত্রের মাঝে ৷

 

Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/

Leave a Reply

Top

You cannot copy content of this page