একজন নারী উদ্যোক্তা শাম্মী ফেরদৌসী ! উদ্যোক্তাদের গল্প নারী উদ্যোক্তার গল্প সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তার গল্প by Jannatun Naime - October 24, 2021October 24, 20210 Spread the love একজন নারী উদ্যোক্তা শাম্মী ফেরদৌসী ! একজন নারী উদ্যোক্তা শাম্মী ফেরদৌসী ! যিনি চাকুরীজিবী হওয়া স্বত্ত্বেও বেছে নিলেন উদ্যোক্তা জীবন । তিনি বর্তমানে চাকুরির পাশাপাশি কাজ করছেন হোমমেইড ফুড ও অর্গানিক প্রোডাক্ট নিয়ে । এই পর্বে আমরা তার কাছ থেকেই জানবো তার ই উদ্যোক্তা জীবনের গল্প ! একজন নারী উদ্যোক্তা শাম্মী ফেরদৌসীঃ আসসালামু আলাইকুম । আমি শাম্মী ফেরদৌসী । আমার জন্মস্থান ঝিনাইদহ জেলা। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে M.B.A ডিগ্রী অর্জন করেছি। পেশায় আমি একজন চাকুরীজিবী । ছোট বেলা থেকেই আমি খুব পড়ুয়া ছাত্রী ছিলাম। শিক্ষা জীবন এ আমি চার টাই ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি। পরিবার ও স্বচ্ছল ছিল বলে কখনো চাই নি আমি পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু করি । কিন্তু ছোট থেকেই আমার রান্না, সেলাই এর প্রতি ছিল অসম্ভব আগ্রহ। আমি অনেক শাড়ি নিজে সেলাই করেছি । অনেক জামায় কাজ করে পরেছি শখের বশে । আমার কর্ম জীবন ১৪ বছর । আমাদের সময় আসলে এত সুযোগ ছিল না জানার । এখন আমরা তা সহজেই জানতে পারি। আমার কর্মজীবন এর ১৪ বছর পর এসে আমার মনে হয়েছে আমার যে মেধা আছে, দক্ষতা আছে সেগুলো আমি নিজের জন্য ব্যবহার করবো । অন্যের প্রতিষ্ঠানে আমি যেই শ্রম দেই সেটা আমি আমার নিজের প্রতিষ্ঠানে ব্যয় করবো । এ ভাবনা থেকেই আমার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু। কিন্তু চাকরির কারণে আমি সময় বের করতে পারি নি। যখন সারাদেশে লকডাউন শুরু হল । আমার অফিসও বন্ধ হল তখন আমি অনেকটা সময় হাতে পাই । সেই সময় আমি শুরু করি আমার উদ্যোগ । ছবিঃ চমুচা আমার উদ্যোগঃ সময়টা ২০২১ সালের এপ্রিল মাস । আমি রান্নায় ছোট থেকেই ভালো ছিলাম । তাই মনে হল ফুড নিয়ে কাজ শুরু করি । আমি যখন কাজ শুরু করি তখন রোজার মাস ছিল তাই বুন্দিয়া আর টক দই, আর ফ্রোজেন আইটেম আমি তখন অনেক সেল করি । আমি যেহেতু চাকরি করি তাই কারো কাছ থেকে ফাইনান্সিয়াল হেল্প নিতে হয়নি । যদিও আমার পরিবারের কেউই আমার এই কাজটায় সাপোর্ট দেন নি । কারণ, আমি ভালো একটা জব করি । তারপরও আমি খুব আনন্দ নিয়ে আমার কাজগুলো করেছি । এরপর আসল আমের সিজন । আমার শ্বশুর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ হওয়াতে একটু সুবিধা পেয়েছি । আমার শ্বশুরের অনেক বাগান আছে । আমের সময় আমি অনেক আম সেল করি । তারপর মনে হলো মানুষ অনেক সময় টাকা দিয়ে ভেজাল জিনিস কিনে খায় । তাই আমি ভেজালমুক্ত পন্য নিয়ে কাজ করবো । শ্বশুর বাড়ি গ্রামে হওয়াতে বেশি সুবিধা হয়েছে । আমার সব প্রোডাক্ট আমার শ্বাশুড়ী নিজ হাতে তৈরী করে দেন । এইজন্য আমি শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে প্রোডাক্ট দিতে পারি । এভাবেই আসলে আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু । শুধু নিজের ইচ্ছে থেকে । আর এই ইচ্ছেটাকেই বহুদুর নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আমার । আলহামদুলিল্লাহ শুরু থেকেই আমি অনেক রেসপন্স পেয়েছি । এখনও পাচ্ছি । আমি অফিসের কাজ সামলিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছিনা । তবে প্রবল ইচ্ছে শক্তি আছে বলে হয়তো অনেকটা পেরে উঠছি । হোমমেইড ফুড ও অর্গানিক প্রোডাক্টঃ আমার উদ্যোগের নাম Shammi’s kitchen & Organic Food Hat. ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে এর যাত্রা শুরু । বাঙ্গালী সবসময়ই ভোজন রসিক হয় । কিন্তু যান্ত্রিক জীবনে এখন মানুষ চাইলেও অনেক কিছু করতে পারছে না । তারা এখন তৈরি করা প্রোডাক্ট এর উপর বেশি ঝুঁকে পড়েছে । আর খাবারের সাথে যেহেতু মানুষের সুস্থ্য়তা জড়িত তাই এক্ষেত্রে সবাই সচেতন । সবাই বেশি দাম দিয়ে ভালো খাবার খেতে চায় । আসলে আমি এমন একটা বিষয় নিয়ে কাজ করছি যার প্রতিযোগীতা অনেক বেশি । কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রে একটা কথা আছে যাকে চিনি তার কাছ থেকেই কিনি । আমার ক্ষেত্রেও হয়ত তাই হয়েছে । ছবিঃ সিঙ্গারা উদ্যোক্তা জীবনের বাধা বিপত্তিঃ একজন উদ্যোক্তাকে অবশ্যই যে কোন নেতিবাচক কথা বা যে কোন খারাপ পরিস্থিতিকে হজম করার ক্ষমতা রাখতে হবে । আমরা যারা বিভিন্ন জিনিস নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি তাদের পেছনে লাগার মত বা তার কাজে বাধা দেয়ার মত মানুষের অভাব হয়না । প্রতিটি ভালো কাজে বাধা আসবেই । তাই আমাদের সেসব লোকের কথায় কান দেয়া যাবেনা । মন খারাপ করে একদমই ভেঙে পড়া যাবেনা । বরং নিজের কাজের প্রতি বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যেতে হবে। আপনি যখন ভালো কাজ করতে যাবেন সবাই আপনার দোষ ধরবে । পেছন থেকে টেনে ধরবে । আপনাকে উপরে উঠতে কেউ সাহায্য করবে না । সবাই সফলতার গল্প শুনতে চায় । কিন্তু এই সফলতা এক দিনে আসে না । সফলতা অর্জনের পেছনে যে কস্ট থাকে সেটা কেউ শুনতে চায় না । তাই নিজে কিছু করতে চাইলে অন্যের কথায় কান দেওয়া যাবে না । হতাশ হওয়া যাবে না । সততা আর একাগ্রতা নিয়ে নিজ লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে । আসলে উদ্যোক্তা জীবন অনেকটা কঠিন আর চ্যালেঞ্জিং । অনেক প্যারা নিতে হয় হাসি মুখে । নিজের থেকে ক্রেতাদের নিয়ে সারাক্ষণ ভাবতে হয় । কত রাত যে ঘুমহীন কেটে যায় সেটা শুধু যিনি উদ্যোক্তা তিনিই জানেন । আমার উদ্যোক্তা জীবন ৬ মাস । এই ৬ মাসে আমি লাখ টাকার উপরে সেল করেছি । কিন্তু কখনো সেল নিয়ে ভাবতে হয়নি । বরং সার্ভিস নিয়ে সব সময় ভাবতে হয় । যত বেশি সেল তত বেশি সার্ভিস দিতে হয় । অনেক সময় ডেলিভারীর কাজ নিজেরই করতে হত । তাও অন্যরকম একটা আনন্দ আছে । ছবিঃ হোমমেইড খাবার উদ্যোক্তা জীবনে যাদের সাপোর্ট পেয়েছিঃ পরিবারের সহযোগীতা ছাড়া উদ্যোক্তা জীবনে কাজ চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন । আমার উদ্যোগের শুরুতে আমি পরিবারের কাউকেই পাশে পাইনি । কারণ, আমার বর্তমান জায়গা থেকে তারা কেউ চাননি আমি উদ্যোক্তা হই । আমার লেগে থাকার কারনে আজ সবাই আমাকে সাপোট করে । আমার পন্যের প্রথম ডেলিভারিটা আমার হ্যাজবেন্ড করে । ছোট খাট অনেক কাজ ই এখন সে করে দেয় । আর আমার কাজের অর্ধেক কাজ আমার মা করে দেন । আমার শশুর বাড়িরও অনেক সাপোর্ট পেয়েছি আমি । আসলে পরিবার পাশে না থাকলে কখনোই এগুনো যায় না । সবশেষে, বলতে চাই সবার সব ধরনের কাজ করার মানুসিকতা থাকতে হবে ও মান বজায় রাখতে হবে । কোন কাজই ছোট নয়, অবহেলার নয় এই চিন্তা একদিন আপনাকেও পৌঁছে দিতে পারে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে । জীবনে প্রতিবন্ধকতা আসবেই, কিন্তু থেমে থাকলে চলবে না । উপরে উঠার জীদ থাকলে সে সফল হবেই । লেখকঃ উদ্যোক্তা শাম্মী ফেরদৌসী উদ্যোগঃ Shammi’s kitchen & Organic Food Hat