ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল সুন্দরবন !

ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল সুন্দরবন !
Spread the love

ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল সুন্দরবন !

পৃথিবীর বৃহত্তম বন ম্যানগ্রোভ বন ‘সুন্দরবন’ ৷ পুরো বন জুড়ে রয়েছে ছোট ছোট নদী-নালা, খাল-বিল, বিচ, কাদাযুক্ত চর ও সামুদ্রিক স্রোতধারা ৷ এ ছাড়াও রয়েছে গাছপালা, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি ৷

ম্যানগ্রোভ বন বা সুন্দরবনের আয়তনঃ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি ম্যানগ্রোভ বন হচ্ছে সুন্দরবন ৷ এ বনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার ৷ তার মধ্যে বাংলাদেশে সুন্দরবনের মোট আয়তন ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার ৷ এর স্থল ভাগের পরিমান প্রায় ৪১৪৩ বর্গ কিলোমিটার ৷ আর জল ভাগের পরিমান ১৮৭৩ বর্গ কিলোমিটার ৷ বঙ্গোপসাগরের তীরে ৮৯ ডিগ্রী থেকে ৯০ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ ও ২১.০৩ ডিগ্রী থেকে ২২.৩০ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশের মাঝে সুন্দরবন অবস্থিত ৷

সুন্দরবনের অবস্থানঃ

গঙ্গা , মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র এই তিন নদীর অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরুপ সৌন্দর্য্যের বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা , সাতক্ষিরা , বাগেরহাট , পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলায় অবস্থিত এবং সুন্দরবনের বাকি অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত ৷ সুন্দরবনের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর , পশ্চিমে রায়মঙ্গল , হাড়িয়াডাঙ্গা ও কালিন্দি নদী অবস্থিত ৷

উত্তরে বাগেরহাট ও সাতক্ষিরা জেলা ৷ পূর্বে ধলেশ্বর ও হরিণঘাটা নদী, পিরোজপুর ও বরিশাল জেলা অবস্থিত ৷ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে সুন্দরবনের অবস্থান ৷ এই বনে সুন্দরী গাছ । যার নামানুসারে নামকরন করা হয় ‘ সুন্দরবন’ ৷ তাইতো ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে ৷

ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল সুন্দরবন !
ম্যানগ্রোভ বন

সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঃ

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনে রয়েছে ঘাঢ় সবুজের সমারোহ ৷ চারিদিকে শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ ৷ সেই সাথে রয়েছে হরেক রকমের জীব – জন্তু , পাখ – পাখালি আর কীট – পতঙ্গ ৷ আর বঙ্গোপসাগর থেকে ছুটে আসা লবণাক্ত স্নিগ্ধ বাতাস ৷ তাইতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য , অ্যাডভেঞ্চার, ভয় ও শিহরণের মনোমুগ্ধকর স্থান হচ্ছে ‘ সুন্দরবন ‘ ৷ পর্যটকদের কাছে সুন্দরবনের আকর্ষণ তাই কোন অংশেই কম নয় ৷

আগামী ১লা নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুম ৷ চাইলে পরিবার – পরিজন নিয়ে আপনিও ঘুরতে পারেন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই বনে ৷ সময় কাটাতে পারেন হরিণ দেখে , বাঘ খুঁজে , বানর ও কুমিরের সঙ্গে লুকোচুরি করে ৷ তাই মন ভরে দেখতে পারেন সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থান -পক্ষীর চর, করমজল, কচিখালী, কটকা, ডিমের চর, তিনকোনা, হারবাড়িয়া, কোকিলমোনি, হিরণপয়েন্ট, দুবলারচর ও আলোরকোল ৷

এই স্পটগুলোই মুলতঃ পর্যটকদের মূল আকর্ষণীয় স্থান ৷ তার মধ্যে কচিখালীতে আছে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্যের হাতছানি ৷ ভ্রমণ – পিপাসুদের জন্য কচিখালী হলো সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান ৷ সুন্দরবনে রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বনমোরগ , চিত্রল হরিণ , হরেক রকম বানর , শূকর , অজগর , বহু প্রজাতির পাখি , অপরুপ লতাগুল্ম ও বৃক্ষরাজি এবং নদীতে রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ ৷

গাছের মধ্যে রয়েছে কেওড়া , গরান , সুন্দরী , বাইন , গেওয়া , গোলপাতা , পশুর , হেতাল , কাঁকড়া , সিংড়া , ঝানা , খলসা ইত্যাদি ৷ আর নদীতে নানা প্রজাতির মাঝে কুমির ও ভয়াল অজগরসহ প্রায় ৩৩ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে সুন্দরবনে ৷ এছাড়াও শীতকালে অসংখ্য অতিথি পাখির আগমন ঘটে সুন্দরবনের বনাঞ্চলে ৷ সুন্দরবনের এই অপরুপ সৌন্দর্য যে কাউকেই মুগ্ধ করে ফেলতে পারে এক নিমিষেই ৷

এক পরিসংখ্যান মতে , সুন্দরবনে বর্তমানে প্রায় ৪০০ ডোরাকাটা বাঘ ও ৩০ হাজারেরও বেশি চিত্রা হরিণের বসবাস ৷ এ ছাড়াও রয়েছে প্রায় ৩৩০ প্রজাতির গাছ – পালা আর ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৭০ প্রজাতির পাখ – পাখালি,  ১২০ প্রজাতির মাছ, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮টি উভচর প্রাণী ৷

ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল সুন্দরবন !
সুন্দরবনের বানর

সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময় কখনঃ

সুন্দরবন ভ্রমণের মূল সময় হলো শীতকাল ৷ ১লা নভেম্বর থেকেই শুরু হয় সুন্দরবন ভ্রমণের মৌসুম ৷ তাই এই সময় ভ্রমণ করাটা মুখ্যম সময় ৷ অন্য সময়ে বনের ভেতরে, ঘন জঙ্গলে প্রবেশ ভ্যাপশা করলে গরম লাগতে পারে ৷ যা শীতকালে অনুভূত হবে না ৷ তবে ভ্রমণের জন্য শীতকাল ই ভালো ৷

সুন্দরবনে যা যা দেখতে পাবেনঃ

হিরণ পয়েন্টঃ হিরণ পয়েন্টে যা দেখতে পাবেন তা হলো কাঠের তৈরি রাস্তা ৷ এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে দেখতে পাবেন হরিণ, বানর, গুইসাপ, কুমির ও রয়েল বেঙ্গল টাইগার ৷

জামতলা সৈকতঃ জামতলা সৈকতে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে ৷ এই টাওয়ারের মাধ্যমে সুন্দরবনের কিছুটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা যায় ৷ এছাড়াও মাঝে মাঝে হরিণ কিংবা বাঘও দেখা যায় ৷

মান্দারবাড়িয়া সৈকতঃ মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের কিছু অংশ এখনো আবিস্কৃত হয়নি ৷ তবে এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায় ৷

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঃ সুন্দরবনের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ হলো সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ৷ এখানে এসে উপভোগ করতে পারবেন সবুজ-শ্যামল গাছ-গাছালি, বণ্য প্রাণী, পশু-পাখি ইত্যাদি !

মৌয়ালদের মধুসংগ্রহঃ সুন্দরবনের খাঁটি মধু অনেক জনপ্রিয় মধু ৷ এই মধু সংগ্রহ করা হয় সুন্দরবন থেকে ৷ তাইতো সুন্দরবনে এসে দেখতে পাবেন মৌয়ালরা কিভাবে বন থেকে মধু সংগ্রহ করেন ৷

দুবলার চরঃ দুবলার চর হলো সুন্দরবনের একটি ছোট্ট চর ৷ এই চরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদী ৷ আর সেই নদীগুলো মিশে গেছে বঙ্গোপসাগরে ৷ তাই সুন্দরবনে এসে উপভোগ করতে পারবেন ছোট ছোট নদীর বয়ে চলা সৌন্দর্য ৷

কটকা বিচঃ কটকা সী বিচে এসে দেখতে পাবেন লাল কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম ৷ এটি অত্যন্ত সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন একটি বিচ ‘কটকা বিচ’ ৷

ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল সুন্দরবন !
লবণাক্ত বনাঞ্চল সুন্দরবন

যাবেন যেভাবেঃ

ঢাকা থেকে সুন্দরবনে যেতে হলে সরাসরি খুলনায় যাওয়ার বাস, ট্রেন এবং লঞ্চে করে যেতে পারেন ৷ বাসে করে যেতে চাইলে ঢাকার বাস টার্মিনালগুলো থেকে হানিফ পরিবহন, সোহাগ পরিবহন কিংবা ঈগল পরিবহনে করে যেতে পারেন ৷ বাসগুলো নিয়মিত ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ৷ সময় লাগতে পারে প্রায় ৮ ঘন্টা ৷

আর লঞ্চে করে যেতে চাইলে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে খুলনা যাওয়ার যে কোন কোম্পানীর লঞ্চে করে যেতে পারেন ৷

তারপর খুলনা থেকে সুন্দরবনে যেতে হলে প্রথমে মংলায় যেতে হবে ৷ খুলনা থেকে মংলায় যাওয়ার জন্য রয়েছে প্রাইভেট গাড়ি ও বাস ৷ এরপর মংলা ঘাট থেকে ট্রলারে কিংবা লঞ্চে করে দুই ঘন্টা পাড়ি দিয়ে যেতে হবে সুন্দরবনের করমজল ৷

থাকবেন কোথায়ঃ

সুন্দরবনে থাকার জন্য রয়েছে টাইগার পয়েন্টের কচিখালী, হিরণ পয়েন্টের নীলকমল এবং কাটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজ ৷ বাগেরহাটে থাকার জন্য তেমন কোন আবাসিক হোটেল নেই ৷ তবে রেল রোডে রয়েছে মমতাজ হোটেল নামের একটি আবাসিক হোটেল ৷ এই হোটেলে সুযোগ-সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান তুলনামূলক ভাল ৷ তাই খরচ একটু বেশি ৷

মংলায় থাকার জন্য রয়েছে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল ৷ আর সাতক্ষীরা শহরে রয়েছে কিছু সাধারণ মানের হোটেল ৷ খুলনা নগরীতে রয়েছে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল ৷ তার মধ্যে ক্যাসেল সালাম, হোটেল রয়েল, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল সিটি ইন, হোটেল ওয়েস্ট ইন, হোটেল মিলিনিয়াম ইত্যাদি ৷

সুন্দরবন ভ্রমণে করণীয়ঃ

  • সুন্দরবন ভ্রমণকালে নিরাপদ খাবার পানি সঙ্গে রাখুন ৷ কারণ, সুন্দরবনে খাওয়ার পানির কোন উৎস নেই ৷ তাই ভ্রমণকালে অবশ্যই খাওয়ার পানি সঙ্গে রাখবেন ৷
  • প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ঔষধ ও জিনিপত্র সঙ্গেই রাখুন ৷ কারণ, ভ্রমণের সময় কোন কারনে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে সেখানে চিকিৎসা করানোর মত কোন উপায় নেই ৷
  • ভ্রমণের সময় অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ট্যুর অপারেটরের ব্যবস্থা করবেন ৷ তা না হলে সমস্যায় পড়তে পারেন ৷
  • সর্বোপরী নিরাপত্তার জন্য সুদক্ষ ও সশস্ত্র বন প্রহরীদেরকে সাথে রাখুন ৷
Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/

Leave a Reply

Top

You cannot copy content of this page