ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান মনসা মুড়া ! চাঁদপুর জেলা চাঁদপুরের দর্শনীয় স্থান by Jannatun Naime - October 4, 2021January 30, 20220 Spread the love ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান মনসা মুড়া ! বর্তমানে চাঁদপুর জেলার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হলো কচুয়া উপজেলার দর্শনীয় স্থান মনসা মুড়া ৷ কালের বিবর্তনে মনসা মুড়াটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে স্থান পেয়েছে ৷ তাইতো দূর দূরান্ত থেকে প্রায় প্রতিদিনই মানুষজন ছুটে আসে মনসা মুড়া দেখতে ৷ ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান মনসা মুড়ার অবস্থানঃ চাঁদপুর জেলার ঐতিহাসিক নিদর্শন মনসা মুড়াটি কচুয়া উপজেলার ৪নং পূর্ব সহদেবপুর ইউনিয়নের ভুইয়ারা গ্রামে অবস্থিত ৷ এই মুড়াটি সুন্দরী খালের উত্তর পাশে খোলা মাঠে ২১টি বাঁশ ঝাড় নিয়ে গঠিত ৷ লোক মুখে শুনা যায়, এই বাঁশ ঝাড়টির উৎপত্তি হয়েছে সাপের দেবী মনসার সরাসরি তত্ত্বাবধানে ৷ তাইতো এই মুড়াটিকে পরিকল্পিত বাঁশ বাগান বলে মনে করা হয় ৷ মনসা মুড়ার ইতিহাসঃ বহু বছর আগের কথা ! সাপের দেবী মনসা ও তার সঙ্গীরা সুন্দরখালের পাড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন ৷ হঠাৎ মাঝ পথে ক্লান্ত হয়ে যান মনসা ও তার সঙ্গীরা ৷ তাই বিশ্রাম নেওয়ার জন্য খালের পূর্বপাড়ে নৌকা ভেড়ান ৷ বিশ্রাম শেষে চলে যাওয়ার পথে মনসা সেখানে একটি বাঁশের চারা রোপন করে যান ৷ এর পর ধীরে ধীরে অসংখ্য বাঁশ সৃষ্টি হয় ৷ তারপর জন্ম হয় বিশাল একটি বাঁশের ঝাড় ৷ যেটি বর্তমানে মনসা মুড়া নামে পরিচিত ৷ লোক মুখে শুনা যায় , এই ঝাড়ে রয়েছে অসংখ্য সাপ ৷ মানুষের চলাফেরার কারনে দিনের বেলায় বাঁশের রুপ ধারন করা সেই সাপগুলো রাতের বেলায় জীবন্ত হয়ে উঠে ৷ এখানে চাইলেই কেউ বাঁশের পাতা ছিড়তে পারেনা ৷ এতে রয়েছে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ৷ প্রতিরাতে অদ্ভূত কোন এক নারীর কন্ঠ ভেসে আসে এই বাঁশ মুড়া থেকে ৷ তাইতো এই মুড়ার পরতে পরতে রয়েছে আধি ভৌতিকতার নানান উপাখ্যান ৷ তাই এখানে ভয় আর আতংকের মধ্যেও রয়েছে মৃত্যুরও অনেক অনেক উদাহরণ ৷ অলৌকিক ঘটনাঃ জানা গেছে, একদা এক ব্যক্তি মনসা মুড়ার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ৷ হঠাৎ বাঁশের ঝাড়গুলো দেখে তিনি সেখান থেকে প্রয়োজনমত বাঁশ কেটে নেন ৷ তারপর থেকে তিনি বার বার ই স্বপ্নে দেখেন বাঁশ ফেরত দেওয়ার জন্য ৷ তা না হলে তার বংশের কোন লোক ই বাঁচবেনা ৷ লোকটি স্বপ্নে দেখার পরও বাঁশ ফেরত না দেওয়ায় তার নাকে মুখে রক্ত বের হয় । তারপর তিনি মারা যান ৷ এরপর তার পরিবারের সদস্যরা অর্থাৎ তার বংশধররা উক্ত বাঁশ ফেরত দিয়ে আসে ৷ এ ছাড়াও আরেকটি ঘটনা রয়েছে মনসা মুড়া নিয়ে ৷ একদিন স্থানীয় কিছু লোক এক সাপুড়ে বহরের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় ৷ যাতে মনসা মুড়া থেকে সাপ ধরে নেওয়া যায় ৷ যখন সাপুড়ে তার ‘বিন বাঁশি’ বাজাতে শুরু করলে তখন গর্ত থেকে বাঁশের পাতায় পাতায় ছোট ছোট সাপ একের পর এক উঠে আসে ৷ তারপর সাপুড়ে একটি সাপ ধরে পাতিলে রাখার সময় কামড় দিলে সাপুড়ের মৃত্যু ঘটে ৷ এরপর অন্য সাপগুলো যখন সাপুড়ের নৌকার দিকে যেতে শুরু করে তখন সাপুড়ের দল সাপটিকে ছেড়ে দিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায় ৷ তারপর থেকে আর কোন সাপুড়ে সেখান থেকে সাপ ধরার কথা চিন্তাও করেননা ৷ এমনকি বাঁশের একটা পাতাও কেউ ছিড়েননা ৷ বর্তমানে এই স্থানটি দেখতে দূর দূরান্ত থেকে বহু দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন ৷ এটি একটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ৷ এই স্থানটি সম্পর্কে চাঁদপুর জেলার সকল মানুষ পূর্ব থেকেই কম-বেশি জানেন ৷ তারপর ধীরে ধীরে কালের বিবর্তনে এই ইতিহাস ছড়িয়ে পড়েছে সকলের মাঝে ৷ তৈরি হচ্ছে অসংখ্য নাটক, সিরিয়াল ও ছায়াছবি ৷ তাই তো এটি এখন চাঁদপুর জেলার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে বেশ পরিচিত ৷