একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী রাহিমা আক্তারের এগিয়ে চলার গল্প ! উদ্যোক্তাদের গল্প ব্যবসায়ীদের গল্প by Jannatun Naime - March 1, 2022March 1, 20220 Spread the love একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী রাহিমা আক্তারের এগিয়ে চলার গল্প ! একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী রাহিমা আক্তার। যিনি অনলাইনকে কাজে লাগিয়ে ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে বিজনেস করছেন তাতঁ, জামদানি এবং বাটিকের শাড়ি থ্রি-পিছ নিয়ে। এই পর্বে আমরা জানবো তার এগিয়ে চলার গল্প ! ব্যবসায়ী রাহিমা আক্তারঃ আমি রাহিমা আক্তার। এটা অবশ্য আমার সার্টিফিকেটের নাম। সবাই আমাকে জ্যোতি বলেই ডাকে। আমি ঢাকার একটি স্বনামধন্য কলেজের বিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের একজন ছাত্রী। আমি বর্তমানে ঢাকায় বসবাসরত রয়েছি এবং ঢাকাতেই বিজনেস করছি। আমার বিজনেস শুরুর করার কারণঃ স্বপ্ন দেখতে কে না ভালোবাসে। তাই স্বপ্ন পূরণের জন্যই আমার ‘স্বপ্নযাত্রার’ পথ চলা শুরু। ছেলে বেলায় নচিকেতা স্যারের বৃদ্ধাশ্রম গানটা ভীষণ শুনতাম। কিন্তু তখনও এই গানটির অর্থ বুঝতাম না। যখন থেকে গানটির অর্থ বুঝতে পেরেছি তখন থেকেই মনের ভিতর একটা স্বপ্ন লালন করি। অন্যের ফেলে দেওয়া জান্নাতগুলো তুলে এনে খুব যত্ন করে আমার কাছে রেখে দিবো। পৃথিবীর বুকে একটা জান্নাতের বাগান করবো ইনশাআল্লাহ। যদিও আমি ভীষণ ছোট আর ক্ষুদ্র একজন মানুষ। তাই সেটা করতে পারবো কি না জানি না। তবে আমার জান্নাত আমার আম্মু। আম্মু আমাকে সব সময় ই বলতেন “নিয়তেই রয়েছে বরকত, তাই চেষ্টা করলেই তুমি সফল হবা”। ছবিঃ শাড়ি ! আর বলতেন, নিজের একটা পরিচয় তৈরি করো। কারণ, মেয়েদের নাকি নিজের কোন পরিচয় থাকে না। বাবা, ভাই অথবা স্বামীর পরিচয় ই নাকি মেয়েদের পরিচয়। মেয়েদের নাকি নিজের কোন বাড়িও থাকে না। বাবা, ভাই অথবা স্বামীর বাড়িই নাকি মেয়েদের বাড়ি। সমাজের এই নিয়মগুলো কেন জানি আমি মেনে নিতে পারি না। তাই নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতেই ব্যবসায়ীক জীবনের পথ চলা শুরু হয় আমার আলহামদুলিল্লাহ। আর আমি নিজেও আত্মকর্মসংস্থানে বিশ্বাসী ছিলাম। তাই স্বপ্ন দেখতাম নিজে এমন কিছু একটা করবো যাতে আরো অন্য দশটা পরিবার আমার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারে। যদিও এখনো উদ্যোক্তার পথে পা বাড়াইনি। আমার বিজনেসের পন্যঃ আমি বর্তমানে কাজ করছি তাতঁ, জামদানি, বাটিকের শাড়ি, থ্রি-পিছ এবং কূর্তি নিয়ে। সাথে আছে রিবন ওয়ার্ক করা জুট ব্যাগ। আমার পেইজের নাম- shopnojatra-স্বপ্নযাত্রা ! বিজনেস জীবনের প্রথম সেলঃ বিজনেস শুরু করার পর থেকে একটু একটু করে এগিয়ে চলছে আমার ‘স্বপ্নযাত্রা’। শুরুর দিকে হয়তো তেমন একটা সেল ছিল না। তবে এখন আস্তে আস্তে আমার শাড়িগুলো সেল হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। যদিও আমি একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী তবুও একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ। আমার প্রথম সেল হয় ১০ ই ডিসেম্বর ২০২০ সালে। আমার পন্যের বর্তমান চাহিদাঃ তাতঁ, জামদানি এবং বাটিকের শাড়ি, থ্রি-পিছ এবং কুর্তির চাহিদা এখন ব্যাপক। মানুষ দিন দিন বিদেশি পণ্য বাদ দিয়ে দেশীয় পোশাক পরতে আগ্রহী হচ্ছে। তাই দেশীয় পণ্যের চাহিদাও বেড়ে চলেছে। ছবিঃ কাতান শাড়ি ! ভবিষ্যৎ চাহিদাঃ আমাদের সকলের ই উচিৎ দেশীয় পণ্যের উপর বেশি বেশি ফোকাস করা। আমদের দেশীয় তাতঁ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পারলে দিনের পর দিন এই পণ্যের চাহিদা বেড়েই চলবে ইনশাআল্লাহ। যাদের সাপোর্ট পেয়েছিঃ আমার বিজনেসের শুরুর দিকে কারোর ই সাপোর্ট পাইনি। মেয়ে মানুষ হয়ে বিজনেস করবে কেন? এটাই ছিল সবার বক্তব্য। তবে এখন যত দিন যাচ্ছে ততই আমার ফ্যামেলীর সবাই সাপোর্ট দিচ্ছে। একটা মানুষের কথা না বললেই নয়। এই চড়াই-উতরাইের মাঝে একটা মানুষ ভীষণ শক্ত করে আমার হাতটা ধরে বলেছিল, “জ্যোতি তুমি পারবে, তোমাকে পারতেই হবে, যারা বলেছিল তোমার দ্বারা কিছুই হবে না, তাদেরকে উচিত জবাব দিতে হবে তোমার কাজের মাধ্যমে”। আলহামদুলিল্লাহ আমি সত্যিই ভাগ্যবান যে, এমন একটা মানুষ কারণে-অকারণে আমার পাশে ছায়া হয়ে আছে। তার নামটা না হয় এখন সবার সামনে না আনি। জীবনে যদি সফল হতে পারি তাহলেই আমি আমার সেই ছায়া সঙ্গীকে লাইম লাইটে নিয়ে আসবো সবার সামনে। বিজনেস জীবনের বাধা-বিপত্তিঃ এই পথ পাড়ি দিতে আমাকে অনেক কিছু দেখতে হয়েছে। অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাকে। প্রথমে বিশ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করি আমার বিজনেস। কিন্তু আমাকে না জানিয়ে আমার প্রোডাক্টগুলো লসে সেল করে দিয়েছিল আমার কাছের একজন মানুষ। তখন আমার মনোবল নষ্ট হয়ে যায়। তাই হতাশা থেকে বাঁচার জন্য আবারও স্কুলে জব নেই। কিন্তু কোভিড ১৯ এর জন্য স্কুলটাও বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আবারও সেই হতাশা। ছবিঃ শাড়ি ! সেখান থেকে বাঁচতে তারপর উইতে প্রচুর পরিমানে সময় দিতে থাকি। যদিও ৮ই আগষ্ট ২০২০ থেকেই আমি উইতে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু কোন কিছু না বুঝার কারনে তেমন একটিভ ছিলাম না। কিন্তু মাঝে মাঝেই উইয়ের পোস্টগুলো সামনে আসতো। সেগুলো খুব মন দিয়ে পড়তাম আর ভাবতে লাগলাম সবাই উইতে একটিভ থেকে ভালো ফল পাচ্ছে। তাহলেতো আমিও একটু চেষ্টা করতে পারি। তারপর স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে পুরো সময়টায় ই আমি উইতে দিতে থাকি। আমি আবারও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আমার বিজনেস শুরু করি এবং আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন উইয়ের একজন গর্বিত সাবস্ক্রাইবার এবং একজন লাখপতি উদ্যোক্তা। আমার বিজনেসের প্রাপ্তিঃ আলহামদুলিল্লাহ এই কয় দিনে আমি সবার অনেক বেশি আদর, স্নেহ এবং ভালবাসা পেয়েছি। সবার বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। পন্যের অনেকগুলো ভালো রিভিউ পেয়েছি। ইনশাআল্লাহ যত পথ পাড়ি দিবো ততই হয়তো আমার প্রাপ্তির সংখ্যা একদিন অনেকগুন বেড়ে যাবে। ভবিষ্যত পরিকল্পনাঃ “স্বপ্নযাত্রাকে’ নিয়ে আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে যে, স্বপ্নযাত্রা একদিন একটা ব্র্যান্ডে পরিনত হবে ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা জেলায় অন্তত একটা করে আউট লেট করবো ইনশাআল্লাহ। লেখকঃ রাহিমা আক্তার উদ্যোগঃ Shopnojatra-স্বপ্নযাত্রা