নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর নেত্রকোণার কলমাকান্দা জনপদ! আমার বাংলাদেশ বাংলাদেশের জনপদসমূহ by Jannatun Naime - December 21, 2021December 21, 20210 Spread the love নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর নেত্রকোণার কলমাকান্দা জনপদ! অপার নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর নেত্রকোণার কলমাকান্দা জনপদ ৷ চারিদিকে পাহাড় ঘেরা সবুজ বনাঞ্চল আর অসংখ্য নদ-নদীর জলরাশি নিয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হলো এই জনপদ ৷ কলমাকান্দা জনপদের অবস্থানঃ এই জনপদটির নাম নেত্রকোণা জেলার সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত লাগোয়া থানার নাম ৷ এর আয়তন ৩৭৬.২২ বর্গ কিলোমিটার ৷ এটি ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলা ৷ এই উপজেলার উত্তরে রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে রয়েছে নেত্রকোণা সদর উপজেলা, পূর্বে রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা আর পশ্চিমে দূর্গাপুর উপজেলা ৷ এই জনপদে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান আর নানা প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ ৷ ছবিঃ নেত্রকোণার কলমাকান্দা জনপদ ! প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঃ উত্তর সীমানা জুড়ে মেঘালয়ের পাহাড়ের কোল ঘেঁষা নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের জনপদ কলমাকান্দা উপজেলা ৷ বৈচিত্র্যে ভরা এই জনপদে রয়েছে অসংখ্য পাহাড়, টিলা, হাওর, নদী ৷ সোমেশ্বরী, উপদাখালী, গুমাই, গণেশ্বরী কলমাকান্দার বুক জুড়ে বয়ে চলা প্রধান ৪টি নদী ৷ পাহাড়ের পাদদেশে পুরোনো ব্রক্ষ্মপুত্রের পলি-মাটি জমে জমে জন্ম হয়েছে এই কলমাকান্দার ৷ এক সময় প্রচুর কলমিলতা জন্মাতো বলে এই জনপদের নাম প্রথমে রাখা হয় কলমিরকান্দি নাম ৷ তারপর পুনঃরায় এর নামকরণ করা হয় কলমাকান্দা ৷ কলমাকান্দা জনপদের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চলের সবচেয়ে প্রচলিত নাম হচ্ছে ‘ভাটি এলাকা’ ৷ এই ভাটি এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় মাত্র ৩ মিটার উঁচু এলাকা ৷ এখানকার খালি-বিল, নদ-নদী, হাওর-বাওরে কম-বেশি পানি থাকে সারা বছর ৷ জীবন ও প্রকৃতির সাথে তাই জলাভূমির সম্পর্কও রয়েছে নিবিড় ৷ এ যেন এক সুনিবিড়, শান্ত, অপরুপ সৌন্দর্য ও রুপ বৈচিত্র্যময় জনপদ ৷ পুরো জনপদ জুড়ে রয়েছে সবুজে সবুজময় ৷ সেই সাথে রয়েছে চপলা-চঞ্চলা, শান্ত-শীতল নদ-নদী ৷ সারি সারি উঁচু উঁচু পাহাড় আর ঘন সবুজ অরন্য যেন স্নিগ্ধতায় পরিপূর্ন ৷ এখানে রয়েছে অসংখ্য টিলা ৷ যেমন- চেয়ারম্যানের টিলা, মমিনের টিলা, গাজীর টিলাসহ অসংখ্য টিলা ৷ এই টিলাগুলো নানা প্রজাতির সবুজ গাছ-গাছালি ও পাখ-পাখালিতে পরিপূর্ন ৷ যে কেউ একবার এই টিলাগুলোতে উঠলে হারিয়ে যাবে এখানকার প্রকৃতির রাজ্যে ৷ ছবিঃ নেত্রকোণার কলমাকান্দার কৃষি ! কৃষি জনপদঃ এই জনপদে আবাদী জমির পরিমান প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর ৷ এখানে এক ফসলি জমি রয়েছে প্রায় ৫৫ ভাগ, দু’ফসলি জমি রয়েছে ৪০ ভাগ ৷ আর বাকি ৫ ভাগে বছরে ফসলে ফলে ৩ বার ৷ এই জনপদে কৃষি পেশাজীবিদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি ৷ মোট পেশাজীবিদের মধ্যে প্রায় ৫১ শতাংশ কৃষক সরাসরি নিয়োজিত কৃষি কাজে ৷ পরোক্ষভাবে শ্রম দেয় আরো প্রায় ২৬ শতাংশ ৷ কর্মিষ্ঠ কৃষক, উষ্ণ আদ্র আবহাওয়া, পলি মাখা উর্বর জমি আর জল সেচের সুবিধা পেয়ে কলমাকান্দা এখন পরিপূর্ন শস্যের জনপদ ৷ এই জনপদে প্রচুর পরিমানে ধানের ফলন হয় ৷ এ ছাড়াও রয়েছে গবাদি পশু ও হাঁসের খামার ৷ এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় ‘ডিম’ ৷ আর হাওর ও নদীগুলোতে পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ৷ সেই সাথে রয়েছে নানা জাতের মৌসুমি ফসল, তরু-তরকারী, ফলমূল ইত্যাদি ৷ এখানে মিষ্টি আলুরও প্রচুর ফলন হয় ৷ ছবিঃ নেত্রকোণা কলমাকান্দার নদ-নদী ! নদ-নদীঃ কলমাকান্দায় রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী ৷ তার মধ্যে প্রধান ৪টি নদী হলো- গুমাই, সোমেশ্বরী, উপদাখালী ও গণেশ্বরী নদী ৷ গুমাই নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোণা ও সুনামগঞ্জের একটি নদী ৷ এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৪ কিলোমিটার আর প্রস্থ ২০ মিটার ৷ নদীটি নেত্রকোণা জেলার দূর্গাপুর উপজেলা চন্ডীগড় ইউনিয়ন থেকে উৎপত্তি হয়ে কলমাকান্দায় মিশেছে ৷ উপদা মানে উল্টা ৷ আশ্বিন-কার্তিক মাসে এই নদীতে উল্টা স্রোত বহে ৷ তাই এই নদীর নাম রাখা হয়েছে উপদা ৷ বহতা এই নদীর একটি শাখা মিলেছে সুরমা নদীর সাথে ৷ আরেকটি মিলেছে কংস নদীর সাথে ৷ সোমেশ্বরী নদী হলো নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলা জনপদের একটি নদী ৷ বহতা এই নদী কুমুদগঞ্জ বাজার হয়ে কোনাপাড়ার সামনে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কলমাকান্দা জনপদ হয়ে মিলিত হয়েছে ধনু নদীর সাথে ৷ লেংগুরা হলো নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার একটি পাহাড়ী-সীমান্তবর্তী অঞ্চল ৷ এই অঞ্চলে বয়ে চলেছে গণেশ্বরী নদী ৷ বহমান এই নদীটি বর্ষায় থাকে খরস্রোতে পরিপূর্ন ৷ আর শুষ্ক মৌসুম এলে বুক জুড়ে দেখা মেলে বালি আর বালি ৷