গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের গ্রামীণ জনপদ ! আমার বাংলাদেশ বাংলাদেশের জনপদসমূহ by Jannatun Naime - December 16, 20210 Spread the love গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের গ্রামীণ জনপদ ! গাজীপুর জেলার একটি জনপদ হলো শ্রীপুরের গ্রামীণ জনপদ ৷ এই জেলার নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানান মতভেদ ৷ কারো কারো মতে, এই এলাকার নামকরণ হয়েছে রাজা শ্রী পালের নামানুসারে ৷ আবার কেউ কেউ এর কৃতিত্ব দিতে চান প্রকৃতির রুপ ও বৈচিত্র্যকে ৷ কারণ, এই জনপদের পরতে পরতে রয়েছে তার অপূরান শ্রী ৷ শ্রীপুরের গ্রামীণ জনপদের প্রকৃতিঃ শ্রীপুরের গ্রামীন জনপদের চারিদিকে রয়েছে অসংখ্য ফসলের মাঠ ৷ এখানকার ফসলের মাঠগুলো যেন সবুজ নকশীকাঁথা ৷ দু’চোখে বিলায় তাই স্নিগ্ধতার প্রশান্তি ৷ চারিদিকে সারি সারি সোনালী ফসলের মাঠ ৷ আর দিগন্ত জুড়ে সবুজের সমারোহ ৷ এ যেন এক রুপকথার রাজ্য ৷ শস্য শ্যামল এই শ্রীপুরে আবাদী জমি রয়েছে ৩১ হাজার ৪৫৫ হেক্টরের মত ৷ এখানকার মাটি খুবই উর্বর প্রকৃতির ৷ বৈশাখ মাসে উৎপন্ন হয় বোরো, আষাঢ়ে আউশ আর অগ্রহায়ণে আমন ধান ৷ তাই তো দিগন্ত জুড়ে ফসলে ভরে থাকে মাঠের পর মাঠ ৷ এই জনপদটির অবস্থান রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৫৮ কিলোমিটার দূরে ৷ শ্রীপুরের কাঁঠাল ! শ্রীপুরের কাঁঠালঃ শ্রীপুর জনপদের দুই জাতের কাঁঠাল হলো রসা এবং খাজা ৷ এই জনপদের পথে-প্রান্তরে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে কাঁঠাল গাছ ৷ গাছে গাছে কাঁঠালও ধরে প্রচুর পরিমানে ৷ এখানকার কাঁঠালগুলো যেমন বড় তেমনি ওজনে ও স্বাদের খ্যাতি রয়েছে দেশ জুড়ে ৷ তাইতো পরিবারের চাহিদা মিটানোর সাথে সাথে রপ্তানিও করা হচ্ছে সারা দেশে ৷ এখানকার মৌসুমী পেশাজীবিদের জীবিকার অন্যতম উৎস হলো অর্থকরী ফল কাঁঠাল ৷ কাঁঠাল প্রধান এই জনপদের মৌসুমী পেশাজীবিরা কাঁঠাল সংগ্রহ করে থাকেন পুরো মৌসুম জুড়ে ৷ কাঁঠাল সংগ্রহের সময় প্রথমে দড়ি দিয়ে তারা কাঁঠালগুলো বেঁধে নেন ৷ তারপর দা বা কাচি দিয়ে কাঁঠালগুলো সংগ্রহ করেন ৷ তারপর গ্রীষ্মের সময় তারা গাছ মালিকের কাছ থেকে কাঁঠাল কিনে এরপর ভ্যান গাড়িতে করে নিয়ে আসেন কাছে-ধারের হাট-বাজারগুলোতে ৷ শুধু ভ্যান ই নয়, রিকশায় ভরে ভরেও কাঁঠাল আনেন অনেকেই ৷ এখানকার পেশাজীবিরা তাদের গাড়ি ভর্তি কাঁঠালগুলো হাটে এনে বিক্রি করেন পাইকারি দামে ৷ আর পাইকাররা তাদের কাছ থেকে দরদাম করে কিনে নেন সেই সব কাঁঠাল ৷ তারপর সব কাঁঠাল জমা হয় পাইকারদের আড়তে ৷ সেইখান থেকেই এই কাঁঠাল ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৷ শ্রীপুরের মাটির ঘর ! গ্রামীণ জীববৈচিত্র্য ও ঘরবাড়িঃ শ্রীপুরের ঘরবাড়িগুলো তৈরি হয় মাটি দিয়ে ৷ এখানকার গ্রামীণ জীবনের একটি রীতি হলো নাইওরে আসা-যাওয়া ৷ বিয়ের পর বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসাকে এখানে বলা হয় নাইওরে আসা ৷ শ্রীপুরে আসলেই দেখতে পাবেন মাটির তৈরি ঘর – বাড়ি ৷ এখানকার ঘর-বাড়িগুলো যেন শ্রীপুর জনপদের এক অনন্য নিদর্শন ৷ এই সকল ঘরগুলো তৈরি করা হয় আঠালো এঁটেল মাটি দিয়ে ৷ এ মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় একেকটি মাটির ব্লক ৷ তারপর রোদে শুকানো মাটির ব্লকগুলো পর পর সাজিয়ে আঠালো কাদার পুর দিয়ে গেঁথে গেঁথে বানানো হয় একেকটি মাটির ঘর ৷ এই ঘরগুলোতে শীতের সময় থাকে গরম আর গরমের সময় ঠান্ডা ৷ তাই বসবাসের জন্য মাটির ঘর খুবই আরামদায়ক ৷ গ্রামের সৌন্দর্য সচেতন মানুষগুলোর শৈল্পিক এক সৃষ্টি হলো পরিপাটি এই মাটির ঘর ৷ মাটির দেওয়াল ঘেরা এইসব ঘর বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপনার নির্মাণশৈলী ধরে আছে এখনো শ্রীপুর জনপদে ৷ শ্রীপুরের আসল সৌন্দর্য রয়েছে গ্রামে ৷ আপন মাধুরীর সবটুকু ঠেলে প্রকৃতি গড়েছে নৈসর্গিক জীবনের সুন্দর এক ভূবন ৷ চোখ জুড়ানো বনভূমিও রয়েছে এই শ্রীপুর জনপদে ৷ শ্রীপুরের বনভূমি ও নদ-নদী ! শ্রীপুরের বনভূমিঃ এই বনের বিস্তার ৩০ হাজারেরও বেশি একর জায়গা জুড়ে ৷ বিখ্যাত ভাওয়াল গড়ের এই বনভূমি শ্রীপুরকে করেছে আরন্যক জনপদ ৷ সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু এই বনাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে শাল-গজারির ৷ শালবন মানেই তো ঘন বড় বড় সবুজ পাতায় ঘেরা উঁচু উঁচু গাছ ৷ শক্ত-সামর্থ্য এই গাছের পাতা শুকনো মৌসুমে ঝরে পড়লেও সবুজের দারুন স্নিগ্ধতা ছড়ায় বছরের বাদ বাকি সময় ৷ শ্রীপুরের জলভাগ বা নদ-নদীঃ ছোট-বড় মিলিয়ে অনেকগুলো নদী রয়েছে শ্রীপুর জনপদে ৷ সবচেয়ে বেশি নাম ডাক বহতা আর শীতলক্ষ্যা নদীর ৷ শীতলক্ষ্যা নদীর আসল নাম হলো লক্ষ্যা ৷ স্বভাবে শান্ত বলে হয়তো ভালোবেসে সবাই নাম রেখেছে শীতলক্ষ্যা ৷ যুগে যুগে এ নদী যোগাযোগের সেতু বন্ধন অটুট রেখেছে শ্রীপুরের সাথে সকলের ৷ এ নদী তেমন ভাঙ্গনপ্রবণ নদী নয় ৷ ভরা মৌসুমে শীতলক্ষ্যার সর্বোচ্চ জল প্রবাহ থাকে প্রায় ২ হাজার ৬০০ কিউসেক ৷ প্রায় ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী কোথাও কোথাও ৩০০ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত ৷ তাই সমৃদ্ধিও এনে দিয়েছে সবচেয়ে বেশি শীতলক্ষ্যা নদী ৷