সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তা রুলিয়া ও আয়েশা !

সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তা রুলিয়া ও আয়েশা
Spread the love

সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তা রুলিয়া ও আয়েশা !

দুইজন সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তা রুলিয়া ও আয়েশা ৷ তারা সম্পর্কে একে অপরের বন্ধু ৷ তাই দু’জন মিলে শুরু করেন ছোট্ট একটি উদ্যোগ ৷ যার নাম ‘অঙ্গনা‘ ৷ আজকের পর্বে আমরা তাদের কাছ থেকে জানবো কিভাবে তারা তাদের এই উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছেন !

নারী উদ্যোক্তা রুলিয়া ও আয়েশাঃ

পরিচয় পর্বঃ

আসসালামুআলাইকুম। আমি রুলিয়া হক লিজা । আমার হোম টাউন গাইবান্ধা । কিন্তু ছোটবেলা থেকেই বাইরে বড় হয়েছি পড়াশোনার সুবাদে । ছাত্রী হিসেবে বেশ ভালো ছিলাম ।ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স করেছি ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ থেকে । আমার আরো একটা পরিচয় আছে, সেটা হচ্ছে আমি একজন নবীন উদ্যোক্তা । আমি ও আমার বান্ধবী মিলে আমাদের উদ্যোগ । হাঁটিহাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের ছোট্ট উদ্যোগ । আমার বান্ধবীর পরিচয় দিয়ে নেই এবার । সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তার নাম আয়েশা তফেদার । তার বাড়ি ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে । মনোবিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স করে ইডেন কলেজ থেকে । আমরা দু‘জনি বেড়ে উঠেছি গ্রামের বাড়িতে । সে অসাধারণ গুনের অধিকারী একটি মেয়ে ।আমরা গত পাঁচ বছর যাবত একসাথে আছি । দু’জনি রান্না করতে ভীষণ পছন্দ করি ও খাওয়াতে পছন্দ করি । তাই দু’জন একসাথে আছি বলেই হয়তো আমাদের উদ্যোগটা আজকে অনেকদূর এগিয়েছে ।

সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তা রুলিয়া ও আয়েশা
নারী উদ্যোক্তা রুলিয়া হক লিজা

খাবার নিয়ে কেন কাজ করিঃ

আমাদের উদ্যোগের নাম অঙ্গনা । আমাদের পেইজে পাবেন মজার মজার এবং আমাদের সিগনেচার প্রোডাক্ট আমসত্ত্ব, আমের মোরব্বা, নারিকেলের নাড়ু, হরেক রকম সিজনাল আচার, আমাদের স্পেশাল একটা আচার খেজুর তেঁতুল মিক্স আচার, উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত সিদল ও ঢেঁকিতে করা মাসকলাই ডালের গুঁড়ো । অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করেন, আমরা খাবার নিয়ে কাজ করি কেন ! আসলে আমরা দু’জনি রান্না করতে পছন্দ করি । এবং রান্নাটা ভালোই পারি । তাই হয়তো খাবার নিয়ে কাজ করি । আসলে যে যে কাজটা ভালো পারে তার সেটা নিয়েই আগানো উচিত বলে মনে করি । রান্নার প্রতি ভালোলাগা ও ভালোবাসা আমাদের খাবার নিয়ে কাজ করার অন্যতম কারণ ।

উদ্যোক্তা পথ বেছে নেয়ার কারণঃ

লেখাপড়া শেষ করে আর দশজনের মতো চাকুরি করবো এটাই আমার লক্ষ্য ছিল । লাইভ দেখিয়ে আর পেইজ বুস্ট করে ই-কমার্স সেক্টরে বিজনেস করবো এটা কখনো কল্পনাতেই ছিল না । কিন্তু গত বছর করোনার কারণে যেন সবকিছু থেমে গেল । ঠিক তখনই দেখা পেলাম Women and E-commerce forum(WE) কে । বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নারীদের জন্য ই-কমার্স প্লাটফর্ম হচ্ছে উই । যেখানে কোন সেলিং কোড ছাড়া, লাইভ ছাড়া, পেইজ বুস্ট ছাড়া সেল হচ্ছে । এই প্লাটফর্মের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার নারী তার নিজের পরিচয় তৈরি করতে পেরেছে । সবার মনের সুপ্ত স্বপ্নগুলো বাস্তবে রূপ নিয়েছে ।

আমাদের দু’জনের মনেও সুপ্ত বাসনা ছিল অনলাইনে আচার বিক্রি করবো । কিন্তু কিভাবে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । উইতে এসে সব শিখে গেলাম । যেখানে সুন্দর সুন্দর কনটেন্ট লিখে পোস্ট করলেই লাখ টাকাও সেল করা যায় । এরপর Digital Skills for Bangladesh গ্রুপ থেকে বিজনেসের হাতেখড়ি নিলাম । একদিন সাহস করে পোস্ট করেই ফেললাম । নিজেদের খাওয়ার জন্য ১ কেজি আমসত্ত্ব ও ১ কেজি মোরব্বা নিয়ে পোস্ট করলাম । সাথে সাথেই অর্ডার কনফার্ম । আমরা রীতিমতো অবাক হয়ে গেলাম । বিনা ইনভেস্টমেন্টে আমাদের যাত্রা শুরু হলো । সাথে সাথে শুরু হলো নানা বাঁধা বিপত্তি ।

সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তা রুলিয়া ও আয়েশা
নারী উদ্যোক্তা আয়েশা তফেদার

উদ্যোক্তা জীবনের বাঁধা বিপত্তিঃ

উদ্যোক্তা জীবন সুখের নয় । আমরা বাইরে থেকে শুধু একজন উদ্যোক্তার সফলতা দেখি । কিন্তু এই সফলতার পেছনের গল্প জানি না । এই সফলতার পেছনে থাকে দিন-রাতের অমানুষিক পরিশ্রম, রাতের পর রাত জাগা, সমাজের মানুষের কটু কথা, মান অপমান আরো কত কি । আমাদের দু’জনকেই শুনতে হয়েছে নানা অপমানজনক কথা । এমনকি আমি আজও বাড়ি থেকে সাপোর্ট পাই না । লুকিয়ে লুকিয়ে বিজনেস করছি । আমরা দু’জনি ৫ টা করে টিউশনি করাতাম । টিউশনি শেষ করে সন্ধ্যা বেলায় বাজারে যেতাম প্রোডাক্টের জিনিসপত্র কিনতে ।

তারপর এসে সারারাত জেগে আচার, নাড়ু, আমসত্ত্ব, পিঠা বানাতাম । কারণ, সকাল সকাল ডেলিভারি থাকতো । কখনো কখনো খাবার খাওয়ার সময়টুকু পর্যন্ত পেতাম না । এতো পরিশ্রমের ফলেই হয়তো আজকের এই জায়গায় আমরা । বিনা ইনভেস্টমেন্টে শুরু করা বিজনেস ১ বছরে ২ লক্ষ টাকায় পৌঁছেছে আলহামদুলিল্লাহ । সবাই ভাবতো বিজনেস করছি আর লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছি । এজন্য টিউশনির বেতনটাও ঠিকসময়ে পেতাম না । আমরা উদ্দ্যোক্তা জীবনে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি, এখনও হচ্ছি । তাই বলে থেমে থাকি নি । জীবনে বাঁধা বিপত্তি আসবেই তাই বলে হেরে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় ।

উদ্যোক্তা জীবনে যাদের সাপোর্ট পেয়েছিঃ

এতো এতো বাঁধা বিপত্তির মাঝেও কিছু মানুষের সাপোর্ট ছাড়া এতদূর আগাতে পারতাম না । আর যার নাম না বললেই নয় উনি আমার বান্ধবীর মা । উনার অবদানের কথা এখানে লিখে শেষ করা যাবে না । তার রাত-দিনের পরিশ্রম আর আমাদেরকে সাপোর্ট দেয়া আজ এতদূর এনেছে । আন্টির জন্য এবার আমরা ১০০ কেজি আমসত্ত্ব সেল করতে পেরেছি । আমরা সাহস পাচ্ছিলাম না বেশি আমসত্ত্ব বানাতে, যদি সেল না হয় ! তারপর ওনার সাহসে আমাদের এতগুলো আমসত্ত্ব সেল হয়েছে । আল্লাহ যেন তাকে দীর্ঘায়ু দান করেন । তার ঋন আমরা শোধ করতে পারবো না ।

কোন কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই । তাই বলে পিছপা হওয়া যাবে না । এসব বাঁধাকে ঠেকিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াই উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্য । নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকলে বার বার ব্যর্থ হলেও একসময় সফলতা আসবেই । ধৈর্য উদ্যোক্তাদের একটি অন্যতম গুণ । ধৈর্য ধরে এগিয়ে যাওয়াই একজন সফল উদ্যোক্তার মূলমন্ত্র হওয়া উচিত । সমস্ত বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আমরাও পেরেছি একটা নিজেদের পরিচয় তৈরি করতে । এখনো আরও বহুদুর পথ পাড়ি দেয়া বাকী । ইনশাআল্লাহ সমস্ত কিছু জয় করে একদিন সফল হবোই হবো ।

Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/

Leave a Reply

Top

You cannot copy content of this page