একজন সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তা বাম্পী রায় !

একজন সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তা বাম্পী রায় !
Spread the love

একজন সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তা বাম্পী রায় !

নারী উদ্যোক্তা বাম্পী রায় । যার জন্ম কুমিল্লার মুরাদনগরে । বর্তমানে তিনি বৈবাহিক সূত্রে চাঁদপুর জেলার বউ । পেশাগত দিক থেকে তিনি একজন চাকুরিজিবী হওয়া সত্ত্বেও কাজ করে যাচ্ছেন হাতের তৈরি পণ্য নিয়ে । এই পর্বে আমরা জানবো তার উদ্যোক্তা জীবনের জার্নিটা ।

একজন সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তার গল্পঃ

লিখেছেনঃ বাম্পী রায়,

আমি বাম্পী রায় । আমার উদ্যোগের নাম স্টেলিন সাহার আনন্দ ঘর। কাজ করছি হাতের তৈরি বাচ্চাদের কুশিয়ারা জামা, নাড়ু, সন্দেশ, কুচার সন্দেশ নিয়ে। আমি জন্মসূত্রে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার মেয়ে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করি গ্রামের বাড়ি থেকে ।

ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম সবাই আমাকে চিনবে, জানবে । তাই আমি কিছু একটা করবো । আর তার জন্য পড়াশোনারও প্রয়োজন । এই ইচ্ছেটুকু শুধুমাত্র আমার একার নয় আমার বাবা-মায়েরও ইচ্ছে । তাই পড়াশোনা করতে ২০০৮ সালে চলে যাই নরসিংদী জেলায়। শুরু হয় নরসিংদী সরকারি কলেজে আমার অর্থনীতিতে অনার্স করা । আনার্স শেষ হয় ২০১৩ সালে । কিন্তু তখনও অনার্সের রেজাল্ট বের হয়নি ।

তারপর ২০১৪ সালে বাবা মায়ের কথা অনুযায়ী বিয়ে করি । তবে শর্ত দিয়ে । আমাকে মাস্টার্স করাতে হবে ও চাকরি করতে দিতে হবে । সেই কথা অনুযায়ী ২০১৪ সালের ১মে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর মাস্টার্স করতে পারলেও চাকরি করতে দেওয়া হয় নি। খুব কষ্ট করেছি সেই কয়টা বছর ।

সংসার, সন্তান, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি নিয়ে দিনগুলো কাটতে থাকে আমার । ২০১৮ সালে আমার শ্বশুর মারা যায় । তারপর আমি একটা ছোট জবে ডুকে যাই । চাকরিটা করছি এখনো কিন্তু চাকরি দিয়ে কোন ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছিলামনা । তারপর থেকে নিজে কিছু করার চেষ্টা করি ।

২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর উই প্লাটফর্মে যুক্ত হই । আর ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয় আমার । আজ প্রায় এক বছর পূর্ণ হতে চললো আমার উদ্যোগের । চাকরির পাশাপাশি নিজের হাতে তৈরি করা পণ্য নিয়ে কাজ করছি আমি । কিন্তু কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না প্রথম সাত মাস । তেমন কোন সাড়া পাইনি নতুন উদ্য়োগে ।

তারপর নিজের প্রোফাইলে ও সহকর্মীদের পরিচিতদের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমার উদ্য়োক্তা জীবনের যাত্রা । এরপর শেষের ৫মাস আমার সেল শুরু হয় । পরিপূর্ণতা কখনো এক দিনে আসে না । দীর্ঘ দিনের চেষ্টার ফলে অর্জন করতে হয় সফলতা । আমিও বিশ্বাস করি, একদিন হয়তো আমি আমার পরিশ্রম দিয়ে সফলতার শীর্ষে পৌঁছাতে পারবো ।

একজন সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তা বাম্পী রায়
নারী উদ্যোক্তা বাম্পী রায়

আমি হোমমেইড মিষ্টি জাতীয় খাবার ও ড্রেস নিয়ে উদ্যোক্তা হয়েছি । প্রথমতঃ আমি স্বপ্ন দেখতাম নিজের একটা আলাদা পরিচিতি হবে । আমাকে সবাই আমার নামে চিনবে, আমার যোগ্য়তায় আমাকে চিনবে । তাই আমি নিজের উপর ই নির্ভরশীল হবো, অন্য কারোর উপরে নয়।

দ্বিতীয়তঃ আমার বাবা-মায়ের ইচ্ছে, আমি নিজের যোগ্যতা দিয়ে নিজে কিছু করি। আমার অনেক নাম হোক । সবাই আমাকে আমার নামে চিনবে, জানবে । এই স্বপ্ন পূরণ করবো বলে দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করে যাচ্ছি । নিজের হাতের তৈরি করা পণ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি ।

আমি বিশ্বাস করি, সৎ পথে নিঃস্বার্থভাবে পরিশ্রম করে গেলে সফলতা একদিন আসবেই। আর আমিও সফল হওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি অবিরত। তবে, আমি আনন্দিত যে আমি এখন আমার নিজের উপর নির্ভরশীল । অন্য কারো দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না আমাকে । নিজের উদ্যোগ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি নিজের খরচও মেটাতে পারি ।

আমি সব কিছু নিজের হাতে তৈরি করি । দীর্ঘ এক বছর হয়েছে আমি উদ্যোক্তা হয়েছি । আমার উদ্যোগ গ্রহণের শুরু থেকে আমি নতুন কিছু জানার জন্য়, শেখার জন্য ছুটে বেড়াই । নিজের উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমি বিভিন্ন মাস্টারক্লাস ও ওয়ার্কশপ করে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বাড়াই ।

মাস্টার ক্লাসগুলো থেকে অনেক কিছুই জানা যায় । আর সেখান থেকে শিখে নিজের ব্যবসায় কাজে লাগানো যায় । সকলের আশীর্বাদ কামনা করছি । আমি যেন সকলের সহযোগীতা নিয়ে নিজের উদ্যোগকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি ।

আমি একজন মা, একজন গৃহিণী, একজন চাকরিজীবি, একজন উদ্যোক্তা । উদ্যোক্তারা নিজের উপর স্বাধীন। একসাথে সব দিক সমলাতে পারে । আমিও একা হাতে সবকিছু সামলিয়ে আজ উদ্যোক্তা হয়েছি ।

প্রথমে অনেক পরাজয় আসে । তারপরও নিজের একটা পরিচিতি তৈরি করতে অনেক ধৈর্য ও পরিশ্রম করে যেতে হয় । আমি একজন নারী । আর নারীরা হয় দশবোজা । তাই তো দশ হাত দিয়ে একসাথে সবকাজ করে নেওয়া যায় খুব দ্রুত ।

ধীরে ধীরে চলতে চলতে আজ আমি এখানে আসতে পেরেছি । এখন আমার লাখ টাকার উপরে সেল । এক বছরে এক লাখ টাকা সবার কাছে সামান্য মনে হলেও আমার কাছে বিশাল ৷ আমি একা হাতে সংসার, বাচ্চা, চাকরি ও নিজের উদ্যোগ সব কিছু সমান ভাবে চালিয়ে নিয়ে এসেছি । এটা আমার জন্য সহজ ছিল না । কিন্তু নিজের উপর ও নিজের কাজের উপর বিশ্বাস ছিল যে, আমি পারবো !  আর আমাকে পারতেই হবে।

নিজের এই আত্মবিশ্বাস ও পরিবারের সাপোর্টে আমি আমার সাফল্যের পথে হাঁটছি । সবাই বলে আমাকে ! আমার নাকি মা দূর্গার মতো দশটা হাত আছে, যার কারনে আমি সবদিক সামলিয়ে উঠতে পারি । আমি মনে করি জীবন মানে হচ্ছে সংগ্রাম । আমাদের মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে হবে । আর এই বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হবে ।

আর আমি একজন নারী । তাই আমি সবকিছু করতে পারি । তাই তো সেই সৎ সাহস থেকে ও ইচ্ছে দিয়ে নিজের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি । নিজের ইচ্ছে শক্তির জোরে আজ আমি লাখ টাকার উপরে সেল করেছি উই ও নিজের প্রোফাইল থেকে ।

আমি চাই আমার দেখাদেখি আরো নারী উঠে আসুক । নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলুক । আমি আমার নিজের জন্য কিছু নারীকে কর্মসংস্থান তৈরি করে দিবো । সকলের আশীর্বাদ থাকলে ও সবাই পাশে থাকলে এগিয়ে যাবো একদিন নিজের লক্ষ্যে ।

আমি এখন আমার নিজের উপর নির্ভরশীল । আমি চাই সমাজের প্রতিটি নারী উঠে আসুক। নিজের উপর নির্ভরশীল হোক।

Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/

Leave a Reply

Top

You cannot copy content of this page