ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং কি ? কিভাবে শুরু করা যায় ! ফ্রিল্যান্সিং by Jannatun Naime - September 13, 2021January 29, 20221 Spread the love ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং কি ? কিভাবে শুরু করা যায় ! ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং কি ? কিভাবে এই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা যায় এই বিষয়গুলো অনেকের ই অজানা ৷ তাই সকলের জানার সুবিধার্থে আজকের এই আর্টিকেল ! বর্তমান সময়ে ফ্রিলান্সিং অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ৷ পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও অনেক আগ্রহ বেড়েছে এই পেশায় ৷ কারণ, এটি একটি মুক্ত পেশা ৷ নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী, সময় অনুযায়ী কাজ করা যায় এই পেশায় ৷ এখানে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কাউকেই কাজ করতে হয় না ৷ বরং নিজের সুবিধা অনুযায়ী ঘরে বসে কাজ করা যায় ৷ ফ্রিল্যান্সিং কি ? ফ্রিল্যান্সিং এর মানে হলো মুক্ত পেশা বা স্বাধীন পেশা ৷ বর্তমান সময়ে তরুনদের কাছে সবচেয়ে আলোচিত এবং জনপ্রিয় পেশা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং ৷ নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানে না থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করাকে ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্ত পেশা বলে ৷ এ ধরনের পেশাজীবিকে বা কর্মজীবিকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সার ৷ তবে তারা চাকুরিজীবিদের মত মাস শেষে নির্দিষ্ঠ বেতনভুক্ত নন ৷ কাজ , পরিশ্রম ও চুক্তির উপর নির্ভর করে আয়ের পরিমান ৷ এই কাজে যে যত বেশি সময় দিতে পারবে , কাজ করবে সে তত বেশি আয় করতে পারবে ৷ তবে এ পেশায় স্বাধীনতা রয়েছে, ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ রয়েছে , আয়েরও সুযোগ রয়েছে ৷ তাই তো বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে বা আধুনিক যুগের বেশির ভাগ মুক্ত পেশার কাজগুলোই ইন্টারনেট ও কম্পিউটারের মাধ্যমেই হয়ে থাকে ৷ তাই ঘরে বসেই এই কাজগুলো নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী করা যায় ৷ যেহেতু মুক্ত পেশার কাজগুলো ইন্টারনেটভিত্তিক তাই ঘরে বসেই দেশি – বিদেশি হাজারো ক্লাইন্টদের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় ৷ পাশাপাশি তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অথবা কন্টেস্টের মাধ্যমে কাজ করে আয় করা যায় ৷ যার ফলে বর্তমানে বেশির ভাগ ছাত্র – ছাত্রী এবং অনেক চাকুরীজীবিরাও এই পেশায় ঝুঁকছেন ৷ কারন , ফ্রিল্যান্সিং হলো মাল্টি বিলিয়ন ডলারের বিশাল একটি বাজার ৷ আর আউটসোর্সিং হলো বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের তৃতীয় ক্ষেত্র বা মাধ্যম ৷ ফ্রিল্যান্সিং কি ? আউটসোর্সিং কি ? মনে করুন , আপনার একটি কোম্পানী রয়েছে ৷ আপনি সেই কোম্পানীর জন্য একটি লোগো বানাতে চান ৷ তখন আপনি কি করবেন ?? নিশ্চই কোন প্রিন্টিং কোম্পানী কিংবা যারা এই ডিজাইনগুলো করে থাকেন তাদের সাথে যোগাযোগ করবেন ৷ কারন , আপনার এই ডিজাইন সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা নেই তাই অন্য কোন ডিজাইনার বা কোম্পনীর মাধ্যমে আপনার ডিজাইনটি অর্থের বিনিময়ে করাতে চাচ্ছেন ৷ এটাকেই বলা হয় আউটসোর্সিং ৷ অর্থাৎ একটা কোম্পানীর কাজ অন্য আরেকজন কোম্পানী বা ডিজাইনারকে দিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে করানোই হচ্ছে আউটসোর্সিং ৷ অনেকেরই ধারনা আউটসোর্সিং করতে হলে আউটসোর্সিং শিখতে হয় ৷ আবার কেউ কেউ মনে করেন আউটসোর্সিং মানে হলো ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্য়মে আয় করাকে বুঝায় ৷ মূলতঃ আউটসোর্সিং তা নয় ৷ আউটসোর্সিং হলো নিজের কাজ বা কোম্পানীর যে কোন কাজ অন্য কারো মাধ্যমে করা ৷ ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন যেভাবেঃ ফ্রিল্যান্সিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এখানে বড় ধরণের কোন বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়না ৷ ভাল মানের একটি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ, ইন্টারনেট কানেকশন, প্রয়োজন অনুযায়ী সফটওয়্যার, এবং বৈদেশিক অর্থ লেনদেনের জন্য অ্যাকাউন্ট হলেই যথেষ্ট ৷ তবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজের জন্য ডেস্কটপ ই বেস্ট ৷ এ ছাড়া আপনি যেই বিষয়ের উপর ফ্রিল্যান্সিং করবেন সেই বিষয়ের উপর আপনার দক্ষতা থাকতে হবে ৷ ইংরেজী ভাষায় কথা বলা ও লেখার দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হবে ৷ সেই সাথে কম্পিউটার চালনার উপর ব্যাসিক দক্ষতাও থাকতে হবে ৷ যে যে বিষয়ে দক্ষ হওয়া প্রয়োজনঃ ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে কোন একটি বিষয় বা একাধিক কোন বিষয়ের উপর দক্ষ হতে হবে ৷ আপনি চাইলে একটি বিষয়ের উপর দক্ষ হতে পারেন ৷ আবার সম্ভব হলে একাধিক বিষয়েও দক্ষ হতে পারেন ৷ আর এই দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগরি সম্পর্কে জানা ৷ আর সেই ক্যাটাগরিগুলো হলো- গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, কনটেন্ট রাইটিং, ওয়েব ডেভেলাপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলাপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং ৷ এ ছাড়াও আরো কিছু ক্যাটাগরি রয়েছে ৷ যেমন- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং, বিজনেস সার্ভিস, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি ৷ এই সবগুলো ক্যাটাগরির মধ্যে আপনার যেটা পছন্দ হয় এমন একটি বা একাধিক ক্যাটাগরি নির্বাচন করে দক্ষ হতে পারেন ৷ যাতে আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করতে পারেন ৷ কোথায় দক্ষতা অর্জন করবেন বা প্রশিক্ষণ নিবেন ? কোথায় দক্ষতা অর্জন করবেন বা প্রশিক্ষণ নিবেন ? আপনি চাইলে দুইভাবে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন ৷ এক, অনলাইনের মাধ্যমে ৷ দুই, অফলাইনের কোন আইটি ফার্মের মাধ্যমে ৷ আপনি আপনার পছন্দমত যে কোন একটিকে বা দু’টোকেই নির্বাচন করে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন ৷ বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কিছু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে ৷ আপনি চাইলে সেই সকল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হতে পারেন ৷ এছাড়াও , অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে ৷ কাজ খুঁজবেন কোথায় ?? অনেকেই আছেন প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হওয়ার পর চিন্তায় পড়ে যান ‘কোথায় কাজ পাবেন’ ! সেক্ষেত্রে আপনাকে আপনার দক্ষতা অনুযায়ী মার্কেটপ্লেসগুলো খুঁজে নিতে হবে ৷ কারন, বাংলাদেশে রয়েছে জনপ্রিয় অনেকগুলো আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস ৷ যেমন – ফ্রিল্যান্সার, আপওয়ার্ক, ফাইবার, ডিজাইন ক্রাউড, ইল্যান্স, পিপল পার আওয়ার ইত্যাদি ৷ তারপর আপনি আপনার পছন্দমত সাইটগুলোতে সাইটের নিয়ম অনুযায়ী আপনার নিজের বিস্তারিত তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে ৷ আপনার প্রোফাইলটাকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে সাজাতে হবে ৷ আপনার পূর্ববর্তী কোন কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সেগুলোকেও সংক্ষিপ্ত শিরোনাম দিয়ে লিখতে হবে ৷ মনে রাখবেন, প্রোফাইল যত বেশি আকর্ষণীয় হবে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেড়ে যাবে ৷ এছাড়াও আপনি বিভিন্ন সাইটগুলোতে বিড করতে পারেন ৷ সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের নিয়ম-কানুন, সুযোগ-সুবিধা ও কাজের ধরণগুলো ভালোভাবে পড়ে তারপর বিড করা শুরু করতে হবে ৷ কাজ খুঁজবেন কোথায় ?? প্রথম অবস্থায় কাজ পাওয়া সহজ হবেনা ৷ অনেকটা সময় ধরে নিয়মিত লেগে থেকে কাজ করে যেতে হবে ৷ তাই ধৈর্য সহকারে বিড করে যেতে হবে এবং মার্কেটিং করে যেতে হবে ৷ আপনার কাজ ভালো হলে তখন দেখা যাবে গ্রাহকরাই আপনাকে খুঁজে বের করবে ৷ তবে মনে রাখবেন, যে সকল বায়ারদের রেটিং ভালো না , পেমেন্ট মেথড ভেরিফাইড না তাদের কাজে অ্যাফলিকেশন না করাই উত্তম ৷ ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুবিধাঃ যেইকোন সময় নিজের ইচ্ছে মত কাজ করা যায় ৷ এখানে কোন প্রাতিষ্ঠানিক বাঁধাধরা নিয়ম নেই ৷ নিজের সুবিধে মত কাজ করা যায় ৷ যেহেতু কাজগুলো ভার্চ্যুয়ালি করা হয় তাই যেইকোন স্থানে থেকেও ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজগুলো করা যায় ৷ নিজের বেডরুমে থেকেও কাজগুলো করা যায় ৷ এ ছাড়া গাড়িতে বসে বা লাইব্রেরীতে বসেও কাজগুলো করা যায় ৷ ব্যবসার ক্ষেত্রগুলো বিশ্বব্যাপী হওয়ায় গ্রাহক সংখ্যা অগণিত ৷ তাই কাজের সুযোগও অনেক বেশি ৷ আপনি আপনার ইচ্ছে অনুযায়ী পছন্দমত বায়ারদের সাথে কাজ করতে পারবেন ৷ এ ক্ষেত্রে কোন প্রকার বাধ্যবাদকতা নেই ৷ আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতার মূল্য স্থানীয় বাজারের চেয়ে অনেকগুন বেশি হবে ৷ বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সম্ভাবনাঃ বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং অনেক জনপ্রিয় একটি পেশা ৷ পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এই পেশায় যুক্ত হচ্ছেন ৷ বহু নারীরা সফলও হয়েছেন ৷ এ জন্য বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় রয়েছে বড় ধরণের সম্ভাবনা ৷ বিশেষ করে নারীদের জন্য এই পেশায় যেমন রয়েছে সম্মান, ক্যারিয়ার তেমনি রয়েছে স্বাধীনতা ৷ কারন, বেশির ভাগ নারীর পক্ষেই ঘরের বাহিরে গিয়ে কাজ করা সম্ভব হয়না ৷ নানান প্রতিবন্ধকতা ও নিষেধাজ্ঞা থাকে তাদের কাজের ৷ তাই তাদের জন্য ঘরোয়া পরিবেশে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়েছে ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্ত পেশা ৷