You are here

টম সয়ারের দুঃসাহসিক অভিজানঃ মার্ক টোয়েন

টম সয়ারের দুঃসাহসিক অভিজান
Spread the love

টম সয়ারের দুঃসাহসিক অভিজানঃ মার্ক টোয়েন

অধ্যায়ঃ ১ – বিখ্যাত হোয়াইট ওয়াশ ৷
লেখকঃ মার্ক টোয়েন ৷
রুপান্তরিত লেখাঃ জান্নাতুন নাঈম

টম সয়ারের দুঃসাহসিক অভিজানের প্রথম পর্বে আমরা জানবো বিখ্যাত হোয়াইট ওয়াশের গল্পটা ৷ চলুন গল্পটা পড়ে নেওয়া যাক ৷

বিখ্যাত হোয়াইট ওয়াশঃ

টম সয়ার সব সময় ই কোন না কোন ঝামেলার সম্মুখীন হন ৷ তিনি অ্যাডভেঞ্চার খুব ভালোবাসেন ৷ অ্যাডভেঞ্চারের কথা মনে পড়লেই তিনি নিজেকে সামলাতে পারতেন না ৷ ছুটে যায় সেখানে ৷ তার এই দুঃসাহসিক অভিজানগুলোই তাকে কোন না কোন বিপদের সম্মুখিন হতে হয় ৷ এই গল্পটাও টম সয়ারের সেই রকম একটি অ্যাডভেঞ্চারের গল্প ৷

টম থাকে তার পলি খালা , কাজিন মেরী ও সৎ ভাই সিডের সাথে ৷ টম খুব ই দুষ্টু ছেলে ৷ তার দুষ্টুমির কোন শেষ নেই ৷ তবে টমের দুষ্টুমিগুলো সবার ই গা সওয়া হয়ে গেছে ৷ কিন্তু সিড টমকে ছেড়ে কথা বলে না ৷ টমের দুষ্টুমি দেখলেই নালিস করতে থাকে পলি খালার কাছে ৷ একদিন টম স্কুলে যাবে বলে বাড়ি থেকে বের হলো ঠিকই কিন্তু সিড দেখতে পেল টম নদীতে নেমে সাঁতার কাটছে ৷ ব্যাস , সঙ্গে সঙ্গেই নালিশ চলে গেল পলিখালার কাছে ৷ পলি খালা ঠিক করলেন এবার টম বাড়ি ফিরলেই তিনি টমকে শাস্তি দিবেন ৷ টমের শাস্তি হলো , বাড়ির ত্রিশ গজ লম্বা বিরাট কাঠের বেড়াটিকে হোয়াইটওয়াশ করতে হবে ৷

"<yoastmark

শাস্তির কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলেন টম সয়ার ৷ শনিবারের এমন চমৎকার সকালে সবাই যাচ্ছে খেলতে আর সাঁতার কাটতে আর এই দিকে তাকে কিনা লম্বা ব্রাশ আর চুনের বালতি নিয়ে একা একা হোয়াইট ওয়াশ করতে হবে ! তারপর কাঠের বেড়ার দিকে তাকাল টম ৷ বেড়াটাও তার কাছে বিরাট মনে হলো ৷ এর একটা অংশ চুনকাম করতেই তার সারাটা দিন লেগে যাবে ৷ অথচ আজকের দিনটাকে ঘিরে তার ছিল নানান পরিকল্পনা

এখন আর কিছুই করা যাবেনা তার ৷ ওর বন্ধুরা যখন এই দিক দিয়ে যাবে আর ওকে চুনকাম করতে দেখবে তখন যে কত্ত ঠাট্টা করবে তারা ! ভাবতে ভাবতেই টমের মাথা গরম হয়ে গেল ৷ নাহ , এমন একটা সুন্দর দিনে ফালতু আর ক্লান্তিকর কোন কাজে সময় ব্যয় করার কোন মানেই হয় না ৷ এখন কি করা যায় ৷ ভাবতে লাগল টম সয়ার ৷

এরপর টম তার পকেট থেকে তার মুল্যবান সম্পদগুলো বের করল ৷ খেলনা , মার্বেলসহ নানান জিনিস বের করল ৷ এগুলোর বিনিময়ে অন্য কাউকে দিয়ে কাজটা করে নেওয়া যায় কিনা ভাবতে লাগল ! কিন্তু এই সামান্য জিনিসের বিনিময়ে দেয়াল রং করার মত পরিশ্রমী কাজ কেউ করবে বলে মনে হয়না টমের ৷ হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো ৷

ব্রাশটা মাটি থেকে তুলে নিয়ে আস্তে আস্তে ধীরে – সুস্থ্যে দেওয়ালে চুনকাম করতে লাগল ৷ চেহারায় এমন ভাব নিয়েছে যেন এর চেয়ে মজার কাজ আর কিছুই হয় না ৷ কিছুক্ষন পর দেখা হয়ে গেল বেন রজার্সের সাথে ৷ হাতে টুকটুকে লাল রসালো আপেল নিয়ে যাচ্ছিল ঐদিক দিয়েই ৷ একদিকে হাঁটছে আর মাঝে মাঝে কামড় বসাচ্ছে আপেলে ৷ এমন রসালো আপেল দেখে জিভে জল এসে গেল টম সয়ারের ৷

তারপরও আপন মনে চুনকাম করতে লাগল টম , যেন দেখেইনি সে বেন কে ৷ ডাক দিল বেন ‘এই যে টম , কি করছ ?’ এমন দিনে কেউ কাজ করে নাকি ? আমি যাচ্ছি সাঁতার কাটতে ৷ অথচ তুমি বেচারা খেঁটেই মরতেছো ! টম এবার ঠোঁট বাঁকিয়ে তাকাল বেনের দিকে , ‘ কে বললো আমি কাজ করছি ?’

কেন , এটা কাজ না ?? আঙ্গুল দিয়ে বেড়া দেখাল বেন ৷ জবাবে টম বলল , ‘এটা কারো কাছে কাজ মনে হতে পারে আবার নাও হতে পারে , তবে কাজটা করতে আমার খুব ভালো লেগেছে , এই যা !’

‘ধ্যাত কাজ করতে আবার ভালো লাগে নাকি?’
ভালো লাগবেই বা না কেন ? কয়টা ছেলেই বা বেড়া হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ পায় শুনি ?
টমের কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেল বেন ৷ আপেল চিবুনোও বন্ধ হয়ে গেল তার ৷ তারপর চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল টমের চুনকামের কাজ ৷ বেড়়া চুনকামের মধ্যে হয়তো কোন মজা আছে , ভাবছে বেন ৷

"<yoastmark

‘এই টম ! আমাকে একটু হাত লাগাতে দেবে ??’ বলল বেন
‘এই না , না , কখনোই না ৷’ এদিক – ওদিক মাথা নেড়ে বলল টম ৷ ‘পলি খালা অনেক বিশ্বাস করে চুনকামের মত বড় একটা কাজের ভার দিয়েছেন আমাকে ৷ আমি অন্য কাউকে এই কাজে ভাগ বসাতে দিব না ৷’

কিন্তু বেন বার বার মিনতি করে যেতেই লাগল ৷ অন্ততঃ একবারের জন্য হলেও তাকে যেন চুনকামের সুযোগটা দেয় টম ৷ আর টম বার বার ই বেন এর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে থাকল ৷ শেষে টমকে আপেলের লোভ দেখাল বেন ৷ বলল চুনকাম করতে দিলে একটা আপেল টমকে দিয়ে দিবে সে ৷ অথচ টম এই সুযোগের ই অপেক্ষায় ছিল ৷

তারপর বেনের কাছ থেকে আপেলটা নিয়ে ছায়ায় বসলো টম , বড় একটা কামড় বসাল রসালো আপেলে ৷ আর ঐদিকে বেন ব্রাশ ও চুন দিয়ে হোয়াইট ওয়াশ করতে লাগল বেড়ায় ৷ কিছুক্ষন হোয়াইট ওয়াশ করতে করতে ঘেমে গেল বেনের সারা শরীর ৷ এবার বেনে হাঁপাতে লাগল ৷ তারপর ব্রাশ আর চুনের বালতি ফেলে রেখে পালিয়ে গেল বেন ৷ জন্মের মত বেড়ায় চুনকাম করার স্বাদ মিটে গেল তার ৷

যাই হোক না কেন তবে টমের বুদ্ধিটা কাজে লাগল ৷ রাস্তা দিয়ে তার সমবয়সী যারাই যাচ্ছিল তাদেরকে পটিয়ে চুনকামের কাজটা ঠিকই সেরে নিল টম ৷ আর ঐদিকে বোকা ছেলেগুলো নতুন কাজ করার আনন্দে হোয়াইটওয়াশ করে গেল ৷ সেই সাথে টমকে ঘুষ হিসেবে দিতে হলো নানান জিনিসপত্র ৷

দুপুরের মধ্যেই শেষ হয়ে গেল টমের চুনকাম ৷ টম এখন অনেক মজার মজার জিনিসপত্রের মালিক ৷ অনেক কিছু পেয়েছে সে ৷ তাই সেই খুশিতে লাফাতে লাফাতে বাড়িতে ঢুকল টম ৷
‘এবার খেলতে যাই , পলি খালা ?’ একদম ভালো মানুষের মত মুখ করে বলল টম ৷
‘কী! এখনই খেলতে যেতে চাচ্ছিস কেন ? আগে কাজটা শেষ কর ?’
‘কাজ শেষ৷’ বলল টম ৷

‘এই টম, মিথ্যে বলবি না কিন্তু ! তর মিথ্যে কথা সহ্য হয় না কিন্তু আর ৷’ চোখ রাঙালেন পলি খালা ৷

‘আমি মিথ্যে বলছিনা ৷ ঐ দেখো ৷’ জানালার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখাল টম ৷

‘সত্যিই তো !’ জানালা দিয়ে সদ্য চুনকাম করা ঝকঝকে সাদা বেড়ার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলেন পলী খালা ৷ তারপর টমের দিকে তাকিয়ে বলল , ‘ তুই আসলেই কোন কাজে মন বসাতে পারলে কাজকর্ম ভালোই করতে পারিস, টম ৷’

টমের কাজে খুব খুশি হয়ে গেলেন পলি খালা ৷ তাই টমের হাতে বড়- সড় একখানা আপেল ধরিয়ে দিয়ে বললেন টমের এখন ছুট্টি ৷ টম এবার খেলতে যেতে পারে ৷ তবে ডিনারের সময় ফিরে আসতে হবে বাড়িতে ৷ টম হেসে উঠল ৷ পলি খালা পেছন ফিরে ঘুরে দাঁড়ানো মাত্রই চট করে চিনি মেশানো একটা ডোনাট পকেটে নিয়ে নিল টম ৷ তারপর এক দৌড়ে চলে গেল রাস্তায় ৷

টম এখন মুক্ত পাখি ৷ তাই খুশিতে ছুটতে ছুটতে বিচারপতি জেফ থ্যাচারের বাসার সামনে দিয়ে যেতে লাগল ৷ হঠাৎ , চোখ আটকে গেল একটি মেয়ের দিকে ৷ মেয়েটি বাগানে হাঁটছে ৷ মেয়েটিকে আগে কখনো দেখেনি টম ৷ খুব সুন্দরী একটি মেয়ে ৷ বিনুনী করা লম্বা সোনালী চুল যেন তার কোমর ছুঁয়েছে ৷ মেয়েটিকে দেখা মাত্রই ভালো লেগে গেল টম সয়ারের ৷ এমনকি সে মনে মনে মেয়েটিকে বন্ধুও বানিয়ে ফেলল ৷

এবার মেয়েটির দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নানান সব কান্ড শুরু করে দিল টম সয়ার ৷ তারপর মাথা নিচু করে , পা উপরে তুলে , হাতে ভর দিয়ে হাঁটল খানিকক্ষন ৷ ব্যঙ্গের মত অঙ্গ ভঙ্গি দিয়ে থপ থপ করে লাফাল টম ৷ কিন্তু স্বর্নকেশী ভারী অহংকারী মেয়ে ৷ তাই পাত্তাই দিল না টম কে ৷ ফিরেও তাকাল না টমের দিকে ৷ টম প্রতিজ্ঞা করল যেভাবেই হোক এই মেয়ের বন্ধু সে হবেই ৷ আবারও রাস্তা ধরে ছুটল টম ৷ কিভাবে এই মেয়েটির মন জয় করা যায় তা নিয়েই ভাবছে টম সয়ার ৷

Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/

Leave a Reply

Top

You cannot copy content of this page