সফল নারী উদ্যোক্তা: তামান্না রহমান তমা

সফল নারী উদ্যোক্তা তামান্না রহমান তমা
Spread the love

সফল নারী উদ্যোক্তা: তামান্না রহমান তমা

হারিয়ে যাওয়া জিএসএম পণ্য জামদানীকে বিশ্ব দরবারে পুনঃরায় পূর্বের অবস্হানে ফিরিয়ে আনাই আমার উদ্দ্যোগের লক্ষ্য বলেছেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা তামান্না রহমান তমা । এই পর্বে আমরা তার কাছ থেকে জানবো, কিভাবে তিনি জামদানী পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছেন এবং সফল হয়েছেন ! চলুন জেনে নেওয়া যাক একজন সফল নারী উদ্যোক্তা তামান্না রহমান তমার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প ।

লিখেছেনঃ তামান্না রহমান তমা

আমার নাম তামান্না রহমান তমা। দাদার বাড়ি চট্টগ্রাম সন্দীপ হলেও নারায়নগঞ্জেই আমার জন্ম,বেড়ে উঠা ও বিয়ে। আমি নারায়ণগঞ্জ এর ই মেয়ে ও নারায়নগঞ্জের ই বউ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাউন্টিং এ BBA ও MBA কমপ্লিট করে ইচ্ছে ছিল সরকারি চাকুরি করার। উচ্চ মাধ্যমিকের পরেই বিয়ে আর তারপর নিজের সাথেই যুদ্ধ করে শেষ করি লেখাপড়া দুই ছেলেকে নিয়ে। স্বামী, সন্তান নিয়ে ব্যস্ত আমার জীবনে আমি কোনো প্রাইভেট কোম্পানিতেও জব করতে পারিনি । কিন্তু এত হতাশার মাঝেও আমি ভেঙে পড়ি নি। দাঁড়িয়েছি মাথা উঁচু করে। আমার এখন একটা পরিচয়ও আছে। আমি নিজেকে গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে যাচ্ছি ।

উদ্যোক্তা তামান্না রহমান তমা
ছবিঃ উদ্যোক্তা তামান্না রহমান তমা

আমি একজন নারী, একজন মা, একজন গৃহিণী। এর বাহিরেও আমার আরো একটি পরিচয় আছে তা হল আমি একজন উদ্দ্যোক্তা । আমার উদ্দ্যোগের নাম Toma’smart. যা ঐতিহ্যের ধারক জামদানীর বাহক। যেখানে আমি শুধু জামদানীর নানা রকম ফিউশন রেখেছি । উদ্দ্যোক্তা হওয়ার আগে জানতাম জামদানী শুধু শাড়ি হয় । কিন্তু জামদানী তে আছে থ্রিপিস,টুপিস,পান্জাবি, ওড়না,লেহেঙ্গা, ব্রাইডাল ফিউশন ইত্যাদি। আসলে আমার উদ্দ্যোগের লক্ষ্যই এটা। আমি চাই আমার জেলার ঐতিহ্য কে তার হারানো স্হানে পৌছাতে। আর এর জন্য ই-কমার্স সেক্টরটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে।

অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন আমি কেন শুধু জামদানী নিয়ে কাজ করছি? 

জামদানী নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জেনেছি জামদানী শুধু শাড়ি নয় বউদের লেহেঙ্গাও হতে পারে। জামদানী তে হতে পারে ফ্যাশন শো সাজতে পারে বিয়ের বড় বা  ট্র‌্যাডিশনাল কোনো বউ। এই জন্য গত ২৯ শে জানুয়ারি ২০২১ সালে আমরা কয়েকজন উদ্দ্যোক্তা মিলে একটি ইভেন্টের আয়োজন করি। যেখানে জামদানী তে আমরা কয়েকরকম বউ সাজিয়ে ও বরের ব্রাইডাল ফ্যাশন শো এর আয়োজন করি । এছাড়াও বাচ্চাদের জন্যও জামদানী ফ্রগ,লেহেঙ্গা এমনকি পান্জাবি এর ও শো হয় ইভেন্ট-এ। এত কিছু করার একটাই উদ্দেশ্য, আমার জামদানী পৌঁছে যাক সারা দেশে নানা রকম ফিউশনে।

জামদানীর ইভেন্টের ছবি
ছবিঃ জামদানী ইভেন্ট

উদ্যোক্তা পথ বেছে নেওয়ার কারণঃ

লেখাপড়া শেষ করে ৮/১০ টা মেয়ের মত জব করব এটাই ছিল আমার লক্ষ্য। লাইভ দেখিয়ে আর বুস্ট করে ই-কমার্স সেক্টরে বিজনেস করার ইচ্ছে আমার কোন কালেই ছিল না। কিন্তু গত বছর মহামারী তে যখন সব কিছু থেমে যায় ঠিক তখনই পেলাম (women and e-commerce Forum)- WE  উইকে। সেখানে লাইভ ছাড়া সেলিং কোড ছাড়া কিভাবে সবাই বিজনেস করছে তা দেখে নিজেকেও উদ্যোক্তা হবার পথে স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। তার কিছু দিন পর পেলাম রাজীব সারের ডিজিটাল স্কিল গ্রুপ। যেখানে আমি পেলাম আমার বিজনেস এর হাতেখড়ি। শুরু করলাম উদ্দ্যোগ মধু আর ঘি দিয়ে । উই-তে পোস্ট করার সাথে সাথে ওর্ডার কনফার্ম হয়ে যায়। এর ফলে আত্নবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়।

কিন্তু তারপরও নিজ জেলা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা জাগে। তখন রাজীব সারের কথা মত নিজ জেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য খুঁজতে গিয়ে পেলাম জামদানী। শুরু করলাম তাঁতীর খোঁজ। কারণ এই শাড়ি তাঁতীরা বংশ পরাম্পরায় তৈরি করে । তাঁতী বাড়ি দেখে বুঝার উপায় নেই এত নিছক দরিদ্র সীমার নিচে তারা বাস করে। মাটির ঘরেই তারা এই শাড়ি বুনে তারা জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু মহামারীতে তাদের না খেয়ে চলছিল জীবন। কিন্তু ই-কমার্স এ আমার মত আরো অনেকে রাজীব সারের হাত ধরেই তাঁতীদের দিন ফিরিয়ে আনল। প্রতিটি শাড়ি তাঁতীদের নিপুণ হাতের কাল্পনিক ছোঁয়ায় তৈরি করা। এর ডিজাইন কোনো বড় বড় ডিজাইনার করে না। নিজেরাই জ্যামিতিকভাবে নিজেদের মাথা থেকে এক একটা জামদানী শাড়ির নকশা বের করে আনে । আর এতো কিছু দেখে শুধু জামদানী নিয়ে ই কাজ করব বলে ঠিক করলাম। তাই জামদানী এখন আমার ভালেবাসা আর স্বপ্নের নাম।
জামদানী
ছবিঃ জামদানী

উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতে অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন কে কিনবে এত দাম দিয়ে জামদানী? 

এর উত্তর আমি তখন কাউকে দেই নাই। নিজে নিজে একা একা কাজ করে গিয়েছি। কাস্টমার হ্যান্ডেল করেছি, একাই পণ্য ডেলিভারি দিয়েছি। জানি কাজটা আমার জন্য সহজ না কিন্তু আমি এগিয়ে ছিলাম নিজের মত করে । মাত্র ১৩৫০০/- চালান দিয়ে শুরু করে এখন আমার লাখ লাখ টাকার সেল হচ্ছে । আমি শুধু খুচরা নয় পাইকারিও সেল দেই জামদানী । নতুন উদ্যোক্তাদের জামদানী নিয়ে কাজ করতে উৎসাহ ও সর্বোরকম সহযোগীতা করি । আমাদের ঐতিহ্য কে আমাদের কেই তুলে ধরতে হবে । আমরাই পারব নিজ নিজ জেলা নিয়ে কাজ করে দেশের হারানো সম্পদ ফিরিয়ে আনতে । একটি দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করতে ।

আমার মতে, কোনে কাজ করতে গেলে বাধা আাবেই । তাই বলে পিছপা হওয়া যাবেনা । বাধা কে ঠেকিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াই উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্য । নিজের প্রতি বিশ্বাস ও লক্ষ্য যদি ঠিক থাকে তাহলে আপনি বার বার ব্যর্থ হলেও একসময় সফল হবেনই । তাই তো ধৈর্য,সাহসিকতাকে উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্য হিসেবে মনে করা হয়। তাই কে কি বললো তা ভেবে সনয় নষ্ট না করে সামনে এগিয়ে যাওয়াই হলো উদ্যোক্তাদের নমনীয়তার বৈশিষ্ট্য। আর সেজন্যই আমিও পেরেছি শত বাধাকে অতিক্রম করে নিজের আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করতে। জানি যেতে হবে বহুদূর আমার স্বপ্ন পুরণের পথে।
আমি তমা 
নারায়ণগঞ্জ থেকে ঐতিহ্যবাহী জামদানী কে আকড়ে ধরে।
Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/
Top

You cannot copy content of this page