সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তাঃ নাজমা নীতু ! সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তার গল্প by Jannatun Naime - August 30, 2021January 29, 20221 Spread the love সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তাঃ নাজমা নীতু ! একজন সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তাঃ নাজমা নীতু । যিনি মনে করেন পুরুষের পাশাপাশি নারীর আয় নিজের পরিবারের সাথে সাথে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে ৷ তাই তিনি তার মনোবল আর চেষ্টায় নিজের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন পুরোদমে ৷ আজ আমরা জানবো তার ই উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের জার্নিটা ৷ লিখেছেনঃ সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তা নাজমা নীতু আসসালামু আলাইকুম। আমি নাজমা নীতু । মিরপুর থেকে । আমি নিজেকে উদ্যোক্তা ভাবি একটি কারনে, যে কোন কাজ শুরু করার উদ্যোগ যে গ্রহন করেন তাকে উদ্যোক্তা বলে সেই হিসেবে। কিন্তু কোন সৃজনশীল কাজ শুরু করেন যে সেই উদ্যোক্তা । মূলতঃ পন্যের সোর্স থেকে সংগ্রহ করে, বিভিন্ন গ্রুপে নিজেকে পরিচিত করে তুলে ধরে ক্রেতার কাছে পন্য সঠিকভাবে পৌঁছানো অবধি যে যে ধাপ অনুসরন করে থাকি সে হিসাবে আমি একজন ব্যবসায়ী। আর ১০ টা নারীর মতো আমিও গৃহিনী তবে মূলতঃ কাজ করতাম মেডিক্যাল ট্যুরিজম নিয়ে। হঠাৎ করে আমার ছোট সন্তান আসায় আমি ঘরে বসেছিলাম। কারন আমার বাচ্চাকে দেখাশোনা করার কেউ নেই। আসলে যারা মনের মধ্যে সব সময় একটি তাগিদ অনুভব করে যে, আমাকে কিছু একটা করতেই হবে ! তারা কাজ না করে ভালো থাকতে পারে না। এরই মাঝে শুরু হলো লকডাউন। ভাবতে লাগলাম ঘরে বসে এমন কি করা যায়? যাতে করে সন্তান কাছে রেখেও কিছু আয় করা যায়। আসলে নিজের টাকা খরচ করার তৃপ্তিই আলাদা তা আমরা কম বেশি সবাই জানি। মার্চ থেকে বাবার বাড়ী নাটোরে আটকে ছিলাম লকডাউনে। আমার খুব শখ ছিল আমি একটি শপিং সেন্টার দিবো যেখানে মেয়েদের পোশাক থাকবে। পরিস্থিতির কারনে তা বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। এক ভাইয়া সব শুনে বললো উই-তে জয়েন্ট হও। ইনভাইট দিলো! আমি জয়েন্ট হয়ে প্রতিটা পোস্ট পড়ে কমেন্ট করতে করতে আমার মনের জোরটা আরো বেড়ে গেলো । ভাবলাম, আমিও কিছু একটা নিয়ে শুরু করবো। কি করবো, কিভাবে করবো সারাদিন মাথায় এই চিন্তা কাজ করছিল। বড় ভাইকে জানালাম আমি অনলাইনে বিজনেস করবো। উনি সাংবাদিক মানুষ । বললো, অনলাইনে অনেকে চিটারি বাটপারি করে লোক ঠকায় । এই কাজে গেলে তোকে মানুষ ঠকিয়ে দিবে। বললাম না ! আমি খোঁজ খবর নিয়ে করবো । বিজনেসে রিক্সতো থাকবেই কিন্তু আমি করবোই। বললো আচ্ছা শুরু কর বিসমিল্লাহ বলে। সেই প্রথম আমার শুরু হয় টাঙ্গাইল শাড়ী দিয়ে । মাত্র ২৬০০ টাকায় শুরু করলাম। শুরুতে নিজের পরিবার আর আশে পাশের ভাবীদের কাছে সেল করলাম। আলহামদুলিল্লাহ লস হয়নি। তারপর থ্রি পিস, খাদি পাঞ্জাবি, লুঙ্গী , বেডকভার এ্যাড করলাম। গ্রুপ গুলোতে এ্যাড হয়ে নিজের পরিচিতি বাড়াতে থাকলাম । আলহামদুলিল্লাহ আমার পন্যের কোয়ালিটি সব সময় ভালো তাই ধীরে ধীরে রিপিট কাস্টমার তৈরি হলো । কিছু সেল দাঁড়ালো ৪০/৫০ হাজারে। এরই মাঝে শুরুতে কাছের বন্ধুরা কেউ কেউ বললো, তুই করবি এই বিজনেস ?? এখন কত মানুষই বিজনেস করছে। এর মধ্যে তোরটা কে কিনবে? কেউ বললো, জামাই তো ভালোই আয় করে তো শাড়ী বেচা শুরু করলি কেনো? তবে আমার পরিবার আমাকে সাপোর্ট করেছে। কখনো কখনো আমার হাজবেন্ড নিজে গিয়ে ডেলিভারি ম্যানের কাজ করে এসেছে। তবে একার সংসারে সব কাজ করে বাচ্চা সামলিয়ে বিজনেসের পন্য আনা সহজ ছিলনা । লকডাউনে বাচ্চা কে সাথে নিয়ে কুরিয়ার থেকে পন্য এনে ছবি তোলা, পোস্ট লিখা, আবার কাস্টমারের দিনরাত পন্যের খুটিনাটি প্রশ্নের হাসিমুখে রিপ্লাই দেওয়া । আর অর্ডার আসলে বাচ্চা নিয়ে রোদ,বৃষ্টি লকডাউনে কুরিয়ার করাটা জীবনের সাথে যুদ্ধ করার চেয়ে ও কম ছিলনা। এভাবেই চলছে বাচ্চা, সংসার আর নিজের স্বপ্নের পিছনে ছুটে চলা । তবে তা ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখার মতো না, বরং বাস্তবে পরিশ্রম করে চলছে আমার পথচলা। সফলতা এখনো ধরা দেয়নি । তবে নিজেকে ভালো রাখতে আমি যে কিছু একটা শুরু করতে পেরেছি এই আত্নতৃপ্তিটাই খুঁজে পাই আমার কাজের মাধ্য়মে। হ্যাঁ আমি কিছু একটা করতে পেরেছি। নিজের টাকায় এবারের ঈদে পরিবারের সবাইকে কম বেশি গিফট করতে পেরেছি বলে নিজের কাছেই ভালো লেগেছে। যদিও আগেও দিয়েছি। দেশীয় ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করে চেষ্টা করেছি আমার স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌছতে । তবে আমি বিশ্বাস করি, ধৈর্য্য ধরে পরিশ্রম করলে,লেগে থাকলে সফলতা একদিন ধরা দিবেই ইনশাআল্লাহ। নারীরা তার মেধা আর ইচ্ছে শক্তিকে কাজে লাগালে পুরুষের পাশাপাশি নারীর আয় নিজের পরিবারের সাথে সাথে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। যা আজ আমাদের ঘরে ঘরে নারীরা অনলাইনে আয় করে দেখিয়ে দিচ্ছেন। আমার উদ্যোগের নামঃ মাধবীলতা। আমরা নারী, মা, কন্যা, জয়া, জননী । আমরাও পারি, পারবো এই বিশ্বাস রাখি। সবার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল ।