বাংলা নামের উৎপত্তি কীভাবে হয়??

বাংলা নামের উৎপত্তি কীভাবে হয়??
Spread the love

বাংলা নামের উৎপত্তি কীভাবে হয়??

বাংলা নামের উৎপত্তি হয় প্রাচীন ঐতিহাসিক কাল হতে শুরু করে আনুমানিক খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতক পর্যন্ত । প্রাচীন বাংলাদেশটি পুন্ড্র, গৌড়, রাঢ়, সুহ্ম, ব্রহ্ম, তাম্রলিপ্তি, সমতট, বঙ্গ প্রভৃতি জনপদে বিভক্ত ছিল ৷ এই জনপদগুলো প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র ও পৃথক ছিল ৷ বাংলার প্রাচীনতম নাম হচ্ছে বঙ্গ বা বাঙ্গালা ৷ সেই সময় বঙ্গ এবং বাঙ্গালা বলতে পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলাকেই বুঝানো হতো ৷ আর অন্যান্য অঞ্চলগুলো অন্য নামে পরিচিত ছিল ৷ উত্তরবঙ্গকে বলা হতো পুন্ড্রবর্ধন, বরেন্দ্র, লক্ষণাবর্তী এবং গৌড় জনপদ ৷ আর পশ্চিম বাংলাকে বলা হতো রাঢ় ৷ সেই সময় বরেন্দ্রভূমিতে অবস্থিত গৌড় শহরের মর্যাদা ছিল অনেক বেশি ৷

বিভিন্নজনের বাংলা নামের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতামতঃ

১৷ বিভিন্নজনের মতামতঃ ইংরেজ শাসন আমলের ‘বেঙ্গল’, যা ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত যুক্ত ছিল ৷ ইংরেজদের ‘বেঙ্গল’ নামক এই শব্দটি অন্যান্য ইউরোপীয়দের বিশেষ করে পর্তুগীজদের ‘বেঙ্গালা’ শব্দ থেকেই নেওয়া হয়েছে ৷ এই নামটির মাধ্যমেই তারা আধিপত্য বিস্তারের সময় পেয়েছিল এবং এই ভূখন্ডটি ইউরোপীয়দের কাছে ‘বেঙ্গালা’ নামেই পরিচিত ছিল ৷ ষোল ও সতেরো শতকে ইউরোপীয়দের এক লেখনিতে ‘বেঙ্গালা’ নামক দেশের উল্লেখ পাওয়া যায় ৷ ডুজারিক (১৫৯৯) প্রায় ২০০ লীগ উপকূল বিশিষ্ট ‘বেঙ্গালা’ দেশের উল্লেখ করেছেন ৷ স্যামুয়েল পর্চাস (১৬২৬) এর বর্ণনায় ‘বেঙ্গালা’ রাজ্যের উল্লেখ রয়েছে ৷ পূর্ববর্তী ইউরোপীয় ভ্রমণকারীরা ‘বেঙ্গালা/বেঙ্গেলা/বাঙ্গালা’ রাজ্য ও ঐ নামের একটি শহরের কথা উল্লেখ করেন ৷ এ ছাড়াও মার্কোপোলো (১৩ শতক), ওভিংটন এবং সসেন (১৬৫২) ‘বেঙ্গালা’ শহরের উল্লেখ করেন ৷

২৷ মোগল আমলের বাংলাঃ মোগল আমলের সময়ে এই ভূখন্ডকে ‘সুবা বাঙ্গালা’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল ৷ আবুল ফজল এই প্রদেশের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন , বাঙ্গালা পূর্ব-পশ্চিমে ৷ অর্থাৎ চট্টগ্রাম থেকে তেলিয়াগড় পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ক্রোশ এবং উত্তর- দক্ষিণে অর্থাৎ উত্তরের পর্বতমালা থেকে শুরু করে দক্ষিণের হুগলি জেলার মান্দারণ পর্যন্ত প্রায় ২০০ ক্রোশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বাঙ্গালা জনপদ ৷ এই ‘সুবা’ পূর্বে ও উত্তরে ছিল পর্বতবেষ্টিত এবং দক্ষিণে ছিল সমুদ্রবেষ্টিত ৷ এর পশ্চিমে ছিল সুবা বিহার ৷ কামরূপ ও আসাম রাজ্য সুবা বাঙ্গালার সীমান্তে অবস্থিত ছিল ৷

৩৷ রমেশচন্দ্রের অভিমতঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন, প্রাচীনকাল থেকে ‘বঙ্গ’ এবং ‘বঙ্গাল’ নামক দু’টি পৃথক দেশ ছিল ৷ ‘বঙ্গাল’ দেশের নাম থেকেই পরবর্তীতে সমগ্র দেশের নাম ‘বাংলা’ নামে নামকরণ হয়েছে ৷ বর্তমানে বাংলাদেশের আধিবাসীদেরকে যে ‘বাঙ্গাল’ নামে অভিহিত করা হয় তা সেই প্রাচীন ‘বঙ্গাল’ দেশের স্মৃতি বহন করেই বলা হয় ৷ বাংলার সেই প্রাচীন জনপদসমূহের মধ্যে ‘বঙ্গাল’ এর তুলনায় ‘বঙ্গ’ জনপদের খ্যাতি ও গুরুত্ব ছিল বেশি ৷ নীহাররঞ্জন রায় অবশ্য আবুল ফজলের ব্যাখ্যাকে একেবারেই অযৌক্তিক মনে করেননি ৷

৪৷ মোগল আমলের পূর্ব যুগের বাংলাঃ মোগল আমলের পূর্ব যুগে ‘বাঙ্গালা’ শব্দটি সমস্ত ভূখন্ডের নাম সূচনা করত কী ? এর উত্তরে দেখা যায় যে, বখতিয়ার খলজি কতৃক বাংলা বিজয়ের ইতিহাস রচনার সময় ‘বাঙ্গালা’ নামের উল্লেখ করেননি ৷ বরং বরেন্দ্র, এবং বঙ্গ নামে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলকে চিহ্নিত করেন ৷

৫৷ জিয়া উদ্দীন বারাণীর অভিমতঃ জিয়া উদ্দীন বারাণী সর্বপ্রথম ‘বাঙ্গালা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন ৷ কিন্তু সমগ্র দেশ নয়, এর কিছু অংশ উল্লেখ করেছেন ৷ পরবর্তীতে ঐতিহাসিক শামস-ই-সিরাজ আফীফ সুলতান শাম্স উদ্দীন ইলিয়াস শাহ্-কে ‘শাহ্-ই-বাঙ্গালা’ উপাধী দিয়েছেন । এ ছাড়াও ‘শাহ্-ই-বাঙ্গালিয়ান’ বা ‘সুলতান-ই-বাঙ্গালা’ বলে সম্বোধন করেছেন ৷ সুলতান ইলিয়াস শাহ সমস্ত বাংলায় দীর্ঘ সময় শাসন করেছিলেন ৷ তাঁর পূর্বে আর কোনো মুসলমান শাসক এভাবে দীর্ঘ সময় সমগ্র বাংলার ভূখন্ড শাসন করেছে বলে জোর দিয়ে বলা যায় না ৷ ইলিয়াস শাহ বাংলার তিনটি শাসন কেন্দ্রেই ( লখনৌতি, সাতগাঁও ও সোনারগাঁও) নিজ আধিপত্য বিস্তার করেন এবং বাংলায় স্বাধীন সুলতানির প্রকৃত ভিত্তি স্থাপন করেন ইলিয়াস শাহ ৷ আর এই স্বাধীনতা প্রায় দুইশো বছর স্থায়ী ছিল ৷

Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/
Top

You cannot copy content of this page