বাংলা নামের উৎপত্তি কীভাবে হয়?? স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস by Jannatun Naime - September 2, 2021February 1, 20220 Spread the love বাংলা নামের উৎপত্তি কীভাবে হয়?? বাংলা নামের উৎপত্তি হয় প্রাচীন ঐতিহাসিক কাল হতে শুরু করে আনুমানিক খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতক পর্যন্ত । প্রাচীন বাংলাদেশটি পুন্ড্র, গৌড়, রাঢ়, সুহ্ম, ব্রহ্ম, তাম্রলিপ্তি, সমতট, বঙ্গ প্রভৃতি জনপদে বিভক্ত ছিল ৷ এই জনপদগুলো প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র ও পৃথক ছিল ৷ বাংলার প্রাচীনতম নাম হচ্ছে বঙ্গ বা বাঙ্গালা ৷ সেই সময় বঙ্গ এবং বাঙ্গালা বলতে পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলাকেই বুঝানো হতো ৷ আর অন্যান্য অঞ্চলগুলো অন্য নামে পরিচিত ছিল ৷ উত্তরবঙ্গকে বলা হতো পুন্ড্রবর্ধন, বরেন্দ্র, লক্ষণাবর্তী এবং গৌড় জনপদ ৷ আর পশ্চিম বাংলাকে বলা হতো রাঢ় ৷ সেই সময় বরেন্দ্রভূমিতে অবস্থিত গৌড় শহরের মর্যাদা ছিল অনেক বেশি ৷ বিভিন্নজনের বাংলা নামের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতামতঃ ১৷ বিভিন্নজনের মতামতঃ ইংরেজ শাসন আমলের ‘বেঙ্গল’, যা ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত যুক্ত ছিল ৷ ইংরেজদের ‘বেঙ্গল’ নামক এই শব্দটি অন্যান্য ইউরোপীয়দের বিশেষ করে পর্তুগীজদের ‘বেঙ্গালা’ শব্দ থেকেই নেওয়া হয়েছে ৷ এই নামটির মাধ্যমেই তারা আধিপত্য বিস্তারের সময় পেয়েছিল এবং এই ভূখন্ডটি ইউরোপীয়দের কাছে ‘বেঙ্গালা’ নামেই পরিচিত ছিল ৷ ষোল ও সতেরো শতকে ইউরোপীয়দের এক লেখনিতে ‘বেঙ্গালা’ নামক দেশের উল্লেখ পাওয়া যায় ৷ ডুজারিক (১৫৯৯) প্রায় ২০০ লীগ উপকূল বিশিষ্ট ‘বেঙ্গালা’ দেশের উল্লেখ করেছেন ৷ স্যামুয়েল পর্চাস (১৬২৬) এর বর্ণনায় ‘বেঙ্গালা’ রাজ্যের উল্লেখ রয়েছে ৷ পূর্ববর্তী ইউরোপীয় ভ্রমণকারীরা ‘বেঙ্গালা/বেঙ্গেলা/বাঙ্গালা’ রাজ্য ও ঐ নামের একটি শহরের কথা উল্লেখ করেন ৷ এ ছাড়াও মার্কোপোলো (১৩ শতক), ওভিংটন এবং সসেন (১৬৫২) ‘বেঙ্গালা’ শহরের উল্লেখ করেন ৷ ২৷ মোগল আমলের বাংলাঃ মোগল আমলের সময়ে এই ভূখন্ডকে ‘সুবা বাঙ্গালা’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল ৷ আবুল ফজল এই প্রদেশের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন , বাঙ্গালা পূর্ব-পশ্চিমে ৷ অর্থাৎ চট্টগ্রাম থেকে তেলিয়াগড় পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ক্রোশ এবং উত্তর- দক্ষিণে অর্থাৎ উত্তরের পর্বতমালা থেকে শুরু করে দক্ষিণের হুগলি জেলার মান্দারণ পর্যন্ত প্রায় ২০০ ক্রোশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বাঙ্গালা জনপদ ৷ এই ‘সুবা’ পূর্বে ও উত্তরে ছিল পর্বতবেষ্টিত এবং দক্ষিণে ছিল সমুদ্রবেষ্টিত ৷ এর পশ্চিমে ছিল সুবা বিহার ৷ কামরূপ ও আসাম রাজ্য সুবা বাঙ্গালার সীমান্তে অবস্থিত ছিল ৷ ৩৷ রমেশচন্দ্রের অভিমতঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন, প্রাচীনকাল থেকে ‘বঙ্গ’ এবং ‘বঙ্গাল’ নামক দু’টি পৃথক দেশ ছিল ৷ ‘বঙ্গাল’ দেশের নাম থেকেই পরবর্তীতে সমগ্র দেশের নাম ‘বাংলা’ নামে নামকরণ হয়েছে ৷ বর্তমানে বাংলাদেশের আধিবাসীদেরকে যে ‘বাঙ্গাল’ নামে অভিহিত করা হয় তা সেই প্রাচীন ‘বঙ্গাল’ দেশের স্মৃতি বহন করেই বলা হয় ৷ বাংলার সেই প্রাচীন জনপদসমূহের মধ্যে ‘বঙ্গাল’ এর তুলনায় ‘বঙ্গ’ জনপদের খ্যাতি ও গুরুত্ব ছিল বেশি ৷ নীহাররঞ্জন রায় অবশ্য আবুল ফজলের ব্যাখ্যাকে একেবারেই অযৌক্তিক মনে করেননি ৷ ৪৷ মোগল আমলের পূর্ব যুগের বাংলাঃ মোগল আমলের পূর্ব যুগে ‘বাঙ্গালা’ শব্দটি সমস্ত ভূখন্ডের নাম সূচনা করত কী ? এর উত্তরে দেখা যায় যে, বখতিয়ার খলজি কতৃক বাংলা বিজয়ের ইতিহাস রচনার সময় ‘বাঙ্গালা’ নামের উল্লেখ করেননি ৷ বরং বরেন্দ্র, এবং বঙ্গ নামে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলকে চিহ্নিত করেন ৷ ৫৷ জিয়া উদ্দীন বারাণীর অভিমতঃ জিয়া উদ্দীন বারাণী সর্বপ্রথম ‘বাঙ্গালা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন ৷ কিন্তু সমগ্র দেশ নয়, এর কিছু অংশ উল্লেখ করেছেন ৷ পরবর্তীতে ঐতিহাসিক শামস-ই-সিরাজ আফীফ সুলতান শাম্স উদ্দীন ইলিয়াস শাহ্-কে ‘শাহ্-ই-বাঙ্গালা’ উপাধী দিয়েছেন । এ ছাড়াও ‘শাহ্-ই-বাঙ্গালিয়ান’ বা ‘সুলতান-ই-বাঙ্গালা’ বলে সম্বোধন করেছেন ৷ সুলতান ইলিয়াস শাহ সমস্ত বাংলায় দীর্ঘ সময় শাসন করেছিলেন ৷ তাঁর পূর্বে আর কোনো মুসলমান শাসক এভাবে দীর্ঘ সময় সমগ্র বাংলার ভূখন্ড শাসন করেছে বলে জোর দিয়ে বলা যায় না ৷ ইলিয়াস শাহ বাংলার তিনটি শাসন কেন্দ্রেই ( লখনৌতি, সাতগাঁও ও সোনারগাঁও) নিজ আধিপত্য বিস্তার করেন এবং বাংলায় স্বাধীন সুলতানির প্রকৃত ভিত্তি স্থাপন করেন ইলিয়াস শাহ ৷ আর এই স্বাধীনতা প্রায় দুইশো বছর স্থায়ী ছিল ৷