হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে এগিয়ে চলছেন উদ্যোক্তা শাহিনা আক্তার !

হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে এগিয়ে চলছেন উদ্যোক্তা শাহিনা আক্তার !
Spread the love

হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে এগিয়ে চলছেন উদ্যোক্তা শাহিনা আক্তার !

প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকেই হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে কাজ করছেন নারী উদ্যোক্তা শাহিনা আক্তার জাহান (শানু) ! তিনি হ্যান্ডপেইন্টের শাড়ি, পাঞ্জাবী, কুশন কাভার, জুয়েলারীসহ নানা ধরনের পোশাকে ফুটিয়ে তুলছেন নানা রকম নকশা। আর এভাবেই এগিয়ে চলছে তার উদ্যোগ। এই পর্বে আমরা জানবো তার উদ্যোক্তা জীবনের সেই এগিয়ে চলার গল্প।

উদ্যোক্তা শাহিনা আক্তার জাহানঃ

আমি শাহিনা আক্তার জাহান (শানু)। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে আমিই সবার বড়। আমার হাজবেন্ড একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বর্তমানে আমি, আমার হাজবেন্ড, এক ছেলে, এক মেয়ে ও মেয়ের জামাই নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার। আমার ছেলে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে MBA করেছে। আর মেয়ে ও মেয়ের জামাই জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটি থেকে MBA করেছে। আমার জন্ম স্থান হলো কুমিল্লায়। বাবার চাকরি সুত্রে আমার বেড়ে ওঠা নরসিংদীর ঘোড়াশাল এলাকায়। সেখানকার কারখানার নিজস্ব স্কুল,কলেজেই কেটেছে আমার সময় টা। খুব সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছি আমি। সেজন্যই প্রকৃতি আমাকে ভীষণ টানে।

উদ্যোক্তা হয়ে উঠার কারণঃ

যে কোন ক্রিয়েটিভ কাজ আমার খুব ভালো লাগে। স্কুল জীবনে আমার ড্রইং খুব ভালো লাগতো। ক্লাশের ড্রইংগুলো অন্যদের চেয়ে ভালোই ছিল। ড্রইংয়ে নাম্বারও ভালো পেতাম। সেলাই করতেও খুব ভালো লাগতো। কিন্তু পড়াশোনার জন্য খুব বেশি করতে পারতামনা। বিয়ের পর থেকে সংসারের পাশাপাশি খুব আগ্রহ নিয়ে বিভিন্ন আইটেম রান্না করে সবাই কে খাওয়াতাম। সবাই আমার রান্নার খুব প্রশংসা করতো। আবার আশেপাশের প্রতিবেশীরা সেলাইয়ের প্রশংসা করতো। কুশি কাটার কাজ, ব্লক, বাটিক, টাইডাই শিখেছি সংসারের কাজের পাশাপাশি। তবে কখনো ভাবিনি উদ্যোক্তা হব। ২০১৫ সালে ঢাকায় আসার পর বিখ্যাত শেফ Dil Afroze Sayda আপুর কাছে ফন্ডেন্ট কেক ডেকোরেশন শিখেছি। আঁকতে ভালো লাগতো বলে দু’জন আর্টিস্ট এর কাছ থেকে হ্যান্ড পেইন্ট শিখেছি। মূলতঃ কিছু একটা করার চিন্তা তখনই মাথায় ঢুকে গিয়েছিল। পরে হ্যান্ডপেইন্ট টা খুব ভালো লেগে গেল। তারপর এটা নিয়েই এগুনোর চিন্তা করলাম।

হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে এগিয়ে চলছেন উদ্যোক্তা শাহিনা আক্তার !
ছবিঃ হ্যান্ডপেইন্ট শাড়ি ও পাঞ্জাবী !

আমার উদ্যোক্তা হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আমার ইচ্ছে। আর্টের তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই আমার। সেজন্য আমি সব সময় চর্চার মধ্যেই থাকি। নিয়মিত চর্চার মধ্যে না থাকলে কোন কাজই সুন্দর হয়না এটা আমি বিশ্বাস করি। ২০২০ এ আমি আমার উদ্যোগের কাজ শুরু করি। আমার উদ্যোগের নাম Goldfish Art on Canvas। ২০২০ এর জুলাই মাসে আমার মেয়ের ইনভাইটে উই তে জয়েন করি। তারপর থেকে উইতে এক্টিভ থাকার পাশাপাশি আমার উদ্যোগের কাজও চালিয়ে যাচ্ছি।

Goldfish Art on Canvas নামটি রাখার কারনঃ

পেইজের নাম সাধারণত ছোট হয়। কারণ যাতে সহজে মনে রাখা যায় এবং সার্চ দিয়ে সহজে খুঁজে বের করা যায়। আমার একটা অ্যাকুরিয়াম ছিল প্রায় ২০ বছর। তাতে নানারকম রঙ বেরং এর গোল্ডফিস মাছ রেখেছিলাম। মাছগুলো এতটাই রঙিন মাছ ছিল যে দেখেই মুগ্ধ হয়ে যেতাম। আমি আর আমার হাজব্যান্ড দু’জন মিলেই দেখাশোনা করতাম। সেই অ্যাকুরিয়াম এখন আর নেই। তাই সেই ভালো লাগার স্মৃতি ধরে রাখার জন্যই এই নামটি রেখেছি।

হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে কাজ করার কারণঃ

আঁকাআঁকি ছোট বেলা থেকেই ভালো লাগতো। কেউ সুন্দর ছবি আঁকলে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতাম। চিন্তা করতাম কিভাবে এত সুন্দর করে ছবি আঁকে ! মুলতঃ হ্যান্ডপেইন্টের ইচ্ছেটা জাগে ফেসবুকের অন্যান্যদের পেইন্টের কাজ দেখে। প্রায় চার বছর আগে এখনকার মত হ্যান্ডপেইন্টের এত প্রচার ছিলনা। গুটি কয়েক পেইজ ছিল যাদের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। আঁকতে ভালোবাসি তাই হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। তারপর দুইজন আর্টিস্টের কাছ থেকে হ্যান্ড পেইন্ট শিখি। সাথে নিয়মিত চর্চাও করতে থাকি। হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি নিয়মিত স্কেচও করি।

হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে এগিয়ে চলছেন উদ্যোক্তা শাহিনা আক্তার !
ছবিঃ হ্যান্ডপেইন্ট জুয়েলারী !

হ্যান্ডপেইন্টের বৈশিষ্ট্যঃ

হ্যান্ডপেইন্ট এর বৈশিষ্ট্য হল এটা সম্পুর্ন হাতে আঁকা। শিল্পী তার নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে রঙ-তুলির মাধ্যমে বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তোলেন। একসময় ক্যানভাসেই পেইন্ট হতো। এখন শাড়ি, কাঠ, মাটির গহনা, বোতলে হ্যান্ড পেইন্ট হয়ে থাকে। ওয়েরেবল বা ব্যবহার্য যেকোনো কিছুর উপর হ্যান্ড পেইন্ট করা মানে সময় নিয়ে রঙ তুলির সাহায্যে দিনের পর দিন কষ্ট করে একেকটা ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা। যেটাতে পুরোপুরি শিল্পের ছিন্ন থাকে এবং দেখতে খুবই ইউনিক ও রুচিসম্মত হয়। যেটা মেশিনের প্রিন্টেও পাওয়া যায়না।

হ্যান্ডপেইন্টের চাহিদাঃ

বর্তমানে হ্যান্ডপেইন্টের জয় জয়কার। সবাই এখন একটু আলাদা আর ইউনিক ডিজাইন পছন্দ করছেন। আমাদের দেশীয় যেকোনো অনুষ্ঠানে বা বড় উৎসবগুলো তে হ্যান্ড পেইন্ট এর পোশাক, গহনা,হোম ডেকোর এর চাহিদা খুব তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে এটা আরও বাড়বে। এখন তো আমাদের দেশের অনেক শিল্পীদের হ্যান্ড পেইন্ট এর কাজ দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছে গেছে।

যাদের সাপোর্ট পেয়েছিঃ

জীবনে কিছু একটা করতে গেলে পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব হয়ে উঠে না। এ ব্যাপারে আমি বলবো আমার ভাগ্যটা খুব ই ভালো আলহামদুলিল্লাহ। আমার পুরো পরিবার আমাকে সাপোর্ট করে। আমার সব শাড়ি আর পাঞ্জাবীর মডেল আমার মেয়ে আর আমার ছেলে। তারা সুন্দর সুন্দর ছবিগুলো তুলে দেয়। আর আমার হাজব্যান্ডও যতটা পারেন ততটা সাপোর্ট করেন।

হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে এগিয়ে চলছেন উদ্যোক্তা শাহিনা আক্তার !
ছবিঃ হ্যান্ডপেইন্ট শাড়ি !

উদ্যোক্তা হওয়ার পথে বাধাঃ

একজন গৃহিণীর প্রতিদিনের যে কাজগুলো থাকে আমি তাই করতাম। উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা যখন করলাম তখন নানারকম চিন্তা-ভাবনা করতে হতো আমাকে। কিভাবে আমি কাজ শুরু করবো,পন্যের সোর্স খোঁজবো,পুঁজি কোথায় পাব,কারা আমার প্রোডাক্ট কিনবে, এসব নিজেই চিন্তা করে বের করতাম। কারণ, ততদিনে আমি নিজেই কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। ছোট খাটো বাঁধা ছাড়া বড় কোন বাঁধার সম্মুখীন হইনি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ

হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে আমার নিজের পরিকল্পনা হলো আরও নিত্য নতুন ডিজাইন করা এবং সবার মাঝে আমার এই হ্যান্ডপেইন্ট এর পন্যগুলোকে যেন বিস্বস্ততার সাথে তুলে দিতে পারি সেই চেষ্টা করা। যাতে আমার ডিজাইন দেখে যে কেউ চিনতে পারে এটা Goldfish Art on Canvas এর। আমি প্রকৃতি খুব ভালোবাসি। তাই আমার হ্যান্ডপেইন্ট এর মুল বিষয় প্রকৃতি। আমি আমার এই উদ্যোগ নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং দেশীয় পন্যকে ভালোবেসে সাপোর্ট করবেন ! বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।

লেখকঃ শাহিনা আক্তার জাহান (শানু)
উদ্যোগঃ Goldfish Art on Canvas

Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/
Top

You cannot copy content of this page