মসলা নিয়ে এগিয়ে চলছেন সফল উদ্যোক্তা শারলিনা আলম ! উদ্যোক্তাদের গল্প সফল উদ্যোক্তার গল্প by Jannatun Naime - February 17, 2022February 17, 20220 Spread the love মসলা নিয়ে এগিয়ে চলছেন সফল উদ্যোক্তা শারলিনা আলম ! মসলা হলো যে কোন উদ্ভিদ বা উদ্ভিদের অংশ যা খাবারের স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়াতে সাহায্য করে। প্রাচীনকাল থেকেই রসনা বিলাসের সঙ্গী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে নানারকম মসলা। আর তাই নানারকম মসলা নিয়ে কাজ করছেন উদ্যোক্তা শারলিনা আলম। এ পর্বে আমরা জানবো তার উদ্যোক্তা জীবনের সফলতার গল্প। উদ্যোক্তা শারলিনা আলমঃ আসসালামু আলাইকুম আমি শারলিনা আলম। পেশায় একজন উদ্যোক্তা। আমার জন্ম চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার আমান বাজার। আমরা সাত বোন তিন ভাই। তার মধ্যে আমার বড় বোন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বতর্মানে আমরা ছয় বোন আছি। আমি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এম বিএ করেছি । নিজে কিছু করার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণাঃ আমার ‘মা’ মারা যান ২০০২ সালে। তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। আর বাবা মারা যান ২০০৯ সালে। তখন আমি এইচ এস সি পাশ করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের আসল জীবন সংগ্রাম শুরু হয়। পড়াশোনার খরচ,নিজের হাত খরচ সব কিছু মিলিয়ে অনেক প্রেশারে ছিলাম। ছোট থেকে আমার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছিল। সাধারণত মেয়েরা একটা সময় পড়া শোনা শেষ করে শ্বশুর বাড়ি চলে যায় । আর তখন নিজের জন্য কিছু করার সুযোগ পায়না। এই বিষয় টা আমার মধ্যে সব সময় কাজ করতো। ▶ আরও পড়ুনঃ হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে উদ্যোক্তা মিথিলা ফারহানা মীমের গল্প ! ছবিঃ মসলা ! তারপর ভাবলাম, পড়াশোনা শেষ করে কেন অন্যের নামে পরিচিত হতে হবে। আমার তো নিজের একটা নাম আছে, পরিচয় আছে। আর তা পরিচিত করার অধিকারও আছে। আর একটা বিষয় আমি খুব ফিল করতাম! যখন আমাকে ডাকা হয় তখন আমার নাম টা ঠিকমত উচ্চারণ করত না। আমি খুব রেগে যেতাম ভুল ডাকে ডাকার জন্য। আমার বাবা একজন উদ্যোক্তা ছিলেন। অনেক পরিশ্রম করতেন। যখন খুব ছোট ছিলাম বাবাকে খুঁজতাম। রাত হলে বাসায় আসতেন দেরি করে। তিনি এতটাই পরিশ্রমী ছিলেন। তাই আমি আমার বাবার মতই একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাই। উদ্যোক্তা জীবনের গল্পঃ আমি এম বি এ পাশ করে বের হবার পর রবি তে কাস্টমার এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে টানা ২ বছর জব করে নিজের কোন আইডেন্টিটি খুঁজে পাইনি। অন্যের কথা মত চলা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। নিজের পরিচয় যেন হারিয়ে ফেলছিলাম। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিজে কিছু করবো। ২০১৮ সালে আমি আমার প্রথম উদ্যোগের কাজ শুরু করেছি হিজাব নিয়ে। হিজাবগুলো কাস্টমাইজড করে আনা হত চায়না থেকে। ২০২০ সালে লকডাউন হওয়ার কারণে আমার বিজনেস টা পুরোপুরি থেমে যায়। ২০২০ সালে চিন্তা করলাম এমন কোন পণ্য নিয়ে কাজ করবো, যে পণ্য ক্রয় করতে আমাকে অন্য দেশের উপর নির্ভর করতে হবে না। ▶ আরও পড়ুনঃ কুকিজ বানিয়ে সফল নারী উদ্যোক্তা মোসাম্মত মাহ্জাবীন ! তারপর আমার উদ্যোগের কাজ শুরু হয় মসলা নিয়ে। যেহেতু আমি চট্টগ্রামের মানুষ। তাই আমাদের ঐতিহ্য কে তুলে ধরতে আমাদের চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানি মসলা নিয়ে কাজ শুরু করি। কারণ, যুগ যুগ ধরে মানুষের এই খাবারের প্রতি আলাদা একটা ভালোবাসা কাজ করছে। আর চট্টগ্রামের বিখ্যাত খাবার বললে মেজবানি খাবারের নাম চলে আসে সবার মুখে। আর এই খাবারটি আমি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমার ইচ্ছে, এই খাবার খাওয়ার জন্য মানুষকে যাতে মেজবানির দাওয়াতের জন্য অপেক্ষা করতে না হয়। তাই তারা যেন ঘরে বসে নিজেরাই আসল মেজবানির স্বাদ নিতে পারে। ছবিঃ মসলা ! আমার প্রাপ্তিঃ ২০২০ সালের শুরুতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে নিজের পরিচিতি তৈরি করার জন্য। আমি শুরু তে ব্লেন্ডার মেশিন দিয়ে গুঁড়ো করে মসলা ডেলিভারি করতাম। প্রথম সেল ছিল ২০০ টাকা। একটাই মসলা ছিল। নিজের জমানো টাকা নিয়ে বিজনেস শুরু করি। ৮০০০ টাকা ছিল আমার জমানো টাকা। এখন একটা থেকে প্রায় ১৮ টা ধরনের মসলা রেসিপি করি যা সারা বাংলাদেশে হোম ডেলিভারি করি। আমার যারা ক্রেতা হয়েছেন তারা এখন আমার কাছ থেকে পণ্য নেন। আমি আমার ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। তারা রান্না করে আমাকে তাদের খাবারের ছবি ও ভিডিও পাঠান। এগুলো দেখে আমি আরও অনুপ্রাণিত হই সামনে এগিয়ে যাওয়ার। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো ক্রেতাদের বিশ্বাস। ভবিষ্যত পরিকল্পনাঃ আমি আমার উদ্যোগের কাজ দেশ থেকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে চাই। আমার উদ্দেশ্য হল, আমার ক্রেতারা সম্পূর্ন ভেজালমুক্ত পণ্য ক্রয় করবে ন্যায্য দামে। আর আমাদের চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। লেখকঃ শারলিনা আলম উদ্যোগঃ কাবাবচিনি