মিষ্টি নিয়ে উদ্যোক্তা আজমিরি আক্তারের এগিয়ে চলার গল্প !

মিষ্টি পছন্দ করেননা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। রসনা বিলাসে মিষ্টি যেন এক অবিচ্ছেদ্য অনুসঙ্গ। তাইতো মিষ্টিজাতীয় খাবার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা আজমিরি আক্তার। এই পর্বে আমরা জানবো তার উদ্যোক্তা জীবনের এগিয়ে চলার গল্প।

উদ্যোক্তা আজমিরি আক্তারঃ

আসসালামু আলাইকুম। আমি আজমিরি আক্তার। নারায়ণগঞ্জে জন্ম ও এখানেই বেড়ে উঠা। পড়াশুনা এইচ.এস. সি শেষ করেছি। এরপর অনার্সে ভর্তি হলেও প্রথম বর্ষে থাকা অবস্থায় ই বিয়ে হয়ে যায়। এরপর বাচ্চা হওয়ার পর পড়াশুনাটা আর হয়ে উঠে নি।

উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্পঃ

ছাত্রী থাকা অবস্থায় ই আমার মনে মনে ইচ্ছে ছিল নিজে কিছু করার। তখন স্বপ্ন ছিল পড়াশুনা শেষ করে চাকরি করার। নিজের প্রয়োজনগুলো পূরন করার। পাশাপাশি আব্বু আম্মুকে সাপোর্ট করার। কিন্তু বিয়ে হওয়ার পর এই চিন্তাটা বাদ দিতে হয়েছিলো। কারন চাকরি করার মতো পর্যাপ্ত পড়াশুনা ছিলো না। কিন্তু মনে মনে কিছু করার ইচ্ছা আর স্বপ্নটা ঠিক ই রয়ে গিয়েছিলো। এরপর মাঝখানে কেটে যায় কয়েকটা বছর। দায়িত্বের বেড়াজালে স্বপ্নের মধ্যে কিছুটা ভাটা পড়লেও ভুলে যাই নি। এরপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে নিজের স্বপ্নটা কে পূরন করার রাস্তার সন্ধান পেলাম। সেটা ছিল উই গ্রুপ। উই-তে জয়েন করার পর মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছা আর স্বপ্ন টা জেগে উঠলো।

▶ আরও পড়ুনঃ হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে উদ্যোক্তা মিথিলা ফারহানা মীমের গল্প !

কিন্তু রাস্তার সন্ধান পেলেও রাস্তা দিয়ে চলার জন্যে যে অভিজ্ঞতা দরকার সেটা ছিলো না। কিভাবে কি করবো সেটা জানা ছিলো না। এরপর উই থেকেই ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ গ্রুপ এর সন্ধান পেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম আমি যা জানতে চাই তার সব ই এখানে আছে। শুধু একটু সময় দিতে হবে। তখন ই সিদ্ধান্ত নিলাম আমার স্বপ্নটাকে পূরন করার জন্য আগে নিজেকে তৈরী করে নিতে হবে। কারণ, প্রস্তুতি ছাড়া মাঠে নামা আর হার কে বরন করা একি কথা। তাই এক বছর নিজেকে সময় দিলাম শিখার জন্য। এর মাঝেই এমন কিছু হয়ে গিয়েছিলো যার ফলে নিজে কিছু করাটা আরো বেশী জরুরী হয়ে গিয়েছিলো। এরপর ২০২১ এর অক্টোবরে আমার উদ্যোগ এর যাত্রা শুরু করি।

উদ্যোক্তা হওয়ার দুটি কারনঃ

উদ্যোক্তা হওয়াটা শুধু স্বপ্ন থাকলেও একসময় গিয়ে সেটা স্বপ্নের চাইতেও বেশী কিছু হয়ে দাঁড়ায়। নিজে কিছু করা এবং নিজের একটা আলাদা পরিচয় গড়ে তোলা ছিল আমার স্বপ্ন। তাই উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু আব্বুর হঠাৎ অসুস্থ্যতা, বড় ভাইয়ের সংসারের দায়িত্বের প্রতি অনিহা দেখে ভিতরে ভিতরে আমি অস্থিরতা আর একটা চাপা কষ্টে ভোগতাম। যদিও আমার হাজবেন্ড আমার পরিবারের জন্যে যথেষ্ট করছেন। আর আমার নানুর বাসা থেকেও যথেষ্ট সাপোর্ট করে। তারপরও আমি চাচ্ছিলাম নিজে কিছু করে তাদের পাশে দাঁড়াতে। এখন আমার উদ্যোগটা শুধু আমার স্বপ্ন না, সাথে আমার প্রয়োজনও ।

▶ আরও পড়ুনঃ একজন নারী উদ্যোক্তা শাম্মী ফেরদৌসী !

উদ্যোগের বাঁধা বিপত্তিঃ

আমার উদ্যোগের যাত্রা সবে শুরু। মাত্র পাঁচ মাস হলো শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত কোন বাধার সম্মুখীন হয় নি। তবে এই দিক দিয়ে আমি নিজেকে জীবনে ভাগ্যবান মনে করি। কারণ, উদ্যোগ শুরু করার পর থেকে আমার বাবার বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি ও আমার হাজবেন্ডসহ সবার কাছ থেকেই অনেক সাপোর্ট পেয়েছি। তারা সবসময় ই আমার কাজের জন্য আমাকে উৎসাহিত করেন। ভবিষ্যতের বাধার কথা তো বলতে পারি না তবে যদিও কখনো বাধা আসে সেটা মোকাবেলা করার জন্য আমি নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছি। আসলে জীবনে চলতে গেলে বাধা বিপত্তি আসবেই। তাই বলে আমাদের তো থেমে গেলে চলবে না। কারণ, জীবন তো আর থেমে থাকে না।

আমার উদ্যোগঃ

উদ্যোগটা মূলতঃ কয়েক রকম মিষ্টি আর মিষ্টি জাতীয় খাবার নিয়ে। যদিও ভবিষ্যতে ফ্রোজেন আইটেমগুলোও যুক্ত করার ইচ্ছা আছে। তবে আপাতত মিষ্টি নিয়েই এগিয়ে যেতে চাচ্ছি। আমার বানানো মিষ্টিগুলো হলো স্পঞ্জ রসগোল্লা, রসগোল্লা, রসমালাই, কমলাভোগ, চমচম, বালুশাই, ছানার সন্দেশ, কালোজাম, গোলাবজাম, স্যান্ডুইচ মিষ্টি। মিষ্টি জাতীয় অন্য খাবারের মধ্যে আছে ক্যারামেল পুডিং,শাহি ফিরনি, শাহী জর্দা ।

আমার পন্যের গুণাবলীঃ

আমি কখনো আগে থেকে মিষ্টি বানিয়ে রাখি না। অর্ডার আসার পর ফার্ম থেকে দুধ এনে তারপর বানিয়ে দেই। তাই আমার ক্রেতারা একদম ফ্রেশ পন্যটিই পান। আর ফ্রেশ ছানা দিয়ে মিষ্টিগুলো তৈরি করা হয় বলে মিষ্টিগুলো অনেক সুস্বাদু আর স্বাস্থ্যসম্মত হয়। আর ছানা দুধ থেকে তৈরি হওয়ায় এটি ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে। ক্যালসিয়াম স্বাস্থ্যকর হাঁড় ও দাঁতের জন্যে প্রয়োজনীয় একটি খনিজ পদার্থ। দুধে উপস্থিত ভিটামিন ডি শক্তিশালী হাঁড় বজায় রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও ছানা হৃদরোগের জন্য ভালো এবং হজমে উন্নতি করে। ছানায় আরো রয়েছে পটাশিয়াম যা রক্তচাপ কমিয়ে রাখতে সহায়তা করে।

উদ্যোগ হিসেবে মিষ্টি কেন বেছে নিয়েছিঃ

ছোট বেলা থেকেই আমার রান্নার প্রতি একটা টান ছিলো। বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলো বানাতে আমার খুব ভালো লাগতো। আমি নিজেও মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে খুব পছন্দ করি। যখন ভাবছিলাম কি নিয়ে কাজ শুরু করবো তখন অল্প সময়েই আমার মাথায় আসে খাবার নিয়ে কাজ করার। আর সেটা অবশ্যই মিষ্টি কিছু। কারণ, এই জিনিসটা খেতে যেমন ভালো লাগে তেমনি বানাতে আরো বেশী ভালো লাগে। আর উদ্যোগটা যেহেতু শুধু শখের বসে করছি না তাই আমার মতে আমাদের সেটা নিয়েই কাজ করা উচিত যেটা করতে আমাদের কখনো অনীহা আসে না। তাই আমি আমার ভালালাগাটাই আমার কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছি।

উদ্যোগ নিয়ে আমার ভবিষ্যত ভাবনাঃ

স্বপ্নের পথে চলা সবে শুরু। যেতে চাই বহুদূর। নিজের উদ্যোগ কে অনেক বড় করতে চাই। একটা ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আব্বু আম্মু কে সাপোর্ট করার পাশাপাশি গরিব অসহায় মানুষদের জন্যও কিছু করতে চাই। অবশ্য উদ্যোগ এর শুরু থেকেই আমি এটা করছি। আমার প্রতিটা অর্ডার থেকে কিছু টাকা আমি আলাদা করে রাখি যেটা একটু বড় অংক হলে গরিব অসহায় মানুষদের ভাগ করে দিয়ে দিবো। আর আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আর সব কিছু ঠিক থাকলে এটা আমি সবসময় ই করে যাবো ইনশাআল্লাহ। সবাই আমার জন্য ও আমার উদ্যোগ এর জন্য দোয়া করবেন।

লেখকঃ আজমিরি আক্তার
উদ্যোগঃ Azmiri’s cuisine