কেক ও ডেজার্ট নিয়ে উদ্যোক্তা আফিয়া ও তানিয়ার গল্প !

কেক ও ডেজার্ট বর্তমান সময়ে অনেক জনপ্রিয় ও মুখরোচক একটি খাবার। এ খাবার পছন্দ করেননা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। আর তা যদি হয় ঘরের তৈরি কেক ও ডেজার্ট তাহলে তো আর কথাই নেই। তাইতো দুই বোন মিলে শুরু করেছেন অনলাইনভিত্তিক তাদের তৈরি কেক ও ডেজার্টের উদ্যোগ। এই পর্বে আমরা জানবো তাদের উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

উদ্যোক্তা আফিয়া ও তানিয়াঃ

আমি আফিয়া । আমার জন্মস্থান ঢাকায় এবং আমি ঢাকাতেই বাস করি। আমি একজন গৃহিণী। আমি এবং আমার ছােট বােন ও মা কে নিয়ে আমাদের যৌথ উদ্যোগ। আমাদের উদ্যোগ মূলতঃ হােম মেইড কেক ও ডেজার্ট আইটেম নিয়ে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কেক, পেস্ট্রি, ডেজার্ট আমাদের উদ্যোগে রয়েছে। ২০২০ সালে যখন করােনা চলে আসে এবং সবাই গৃহবন্দি হই তখন হঠাৎ ই গল্পের ফাঁকে আমার ছােট বােন বলে ওঠে “চলাে আমরা অনলাইন বিজনেস করি”। কোন কিছু না ভেবেই আমি বলে উঠি “আসলেই করা যায় কি??”। পাশে বসে থাকা আমার ‘মা’ বলেন, “কেনাে নয়”। আমার ছােট বােন তানিয়া তাবাসসুম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী। করােনার জন্য পড়াশুনা বন্ধ ছিলাে বলেই প্রথম প্রস্তাবটি তার থেকেই আসে।

যেভাবে সিদ্ধান্ত নেইঃ

মানুষ প্ল্যান করে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আমরা প্রথমে পা বাড়াই। তারপর পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেই। আমরা দুই বােন যখন অবসর সময়ে কি করা যায় এগুলাে নিয়ে কথা বলছিলাম তখন সাথে এসে আমাদের মা এসে যােগ দেন এবং অনেক বেশি উৎসাহ দেন যে, কেনাে হবে না? সবাই যদি পারে তাহলে তােমরা কেনাে না ? আমার ‘মা’ খুব আধুনিকচেতা নারী। সাথে একজন গুনবতীও বটে । আমাদের বিভিন্ন কাজের হাতে খড়ি তার থেকেই। আমরা যখন সিদ্ধান্ত নেই কিছু একটা করবাে তখন এটাও সিদ্ধান্ত নেই যে পরিবারের যৌথ উদ্যোগে করবাে।

▶ আরও পড়ুনঃ একজন সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তা বাম্পী রায় !

কি নিয়ে কাজ করবাে, কোন জিনিসটা আমাদের অনুকূলে এগুলাে ভাবতে ভাবতে আমার মা প্রথমে বলেন বেকিং রিলেটেড বা আরাে ভালাে করে বলতে গেলে কেক নিয়ে কাজ করতে পারো। এর কারণ দুটো – 

• • • • • • এর চাহিদা , 
          • খাবার ও রান্নার প্রতি আমাদের ঝোঁক।

সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বেকিং নিয়ে গুগল, ইউটিউব এ বেশ কয়েক মাস আমরা স্ট্যাডি করি। প্রচুর সার্চ করি। ২–৩ টা অনলাইন ভিত্তিক বেকিং কোর্স করি। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিলাে উদ্যোগের জন্য আকর্ষণীয় নাম বের করা।

যেভাবে বাস্তবায়িত হয়ঃ

২০২১ সালের ১লা এপ্রিল যাত্রা শুরু হয় আমাদের অনলাইন উদ্যোগ The Sugar Bowls এর । মূলতঃ পেস্ট্রি শপ হিসেবেই আমাদের পেইজ পরিচিত। প্রথম দিন ই ছবি আপলােড দেয়া হয়। সেই সাথে পরিচিতদের ইনভাইট করা হয়। যেহেতু রােজার কয়েকদিন আগেই পেইজ খুলি তাই ধারনা করেছি হয়ত অর্ডার আসবে না। কিন্তু আমাদের ভুল প্রমাণ করে ভালাে অর্ডার আসে। প্রাপ্তির খাতায় ১১ মাসের উদ্যোক্তা জীবনে আমাদের প্রাপ্তি ছিল অনেক।

▶ আরও পড়ুনঃ একজন নারী উদ্যোক্তা শাম্মী ফেরদৌসী !

মাত্র ৫ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে উদ্যোগ শুরু করলেও আমরা প্রায় অর্ধ লাখ টাকার কাচামাল ক্রয় করি শুধুমাত্র এই উদ্যোগের টাকা দিয়ে। তাছাড়া যখন লােকে বলে ঢাকায় থাকলে আপনাদের রেগুলার ক্রেতা হতাম তখন খুব ভালাে লাগে। এই অল্প সময়ে আমাদের ক্রেতা সংখ্যা প্রায় ১০০ I যেহেতু কেক কখনােই দূরে দেয়া সম্ভব না তাই আমাদের জন্য এটা অনেক বড় পাওয়া। তারপরেও আমাদের আনন্দ যে, আমাদের বেশ কিছু ডেজার্ট আইটেম ঢাকার বাহিরে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছেছে। ক্রেতারা যখন কেক খেয়ে বলে টেস্ট অসাধারণ তখন খুব ভালাে লাগে। তারা ক্রেতা থেকে হয় রিপিট ক্রেতা এগুলাে আসলেই অনেক বড় প্রাপ্তি।

যেসব প্রতিবন্ধকতা ছিলােঃ

যে কোন চ্যালেঞ্জিং কাজে বাধা আসবে এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু কেক জিনিসটা খুব চ্যালেঞ্জিং আর আমাদের দেশে ডেলিভারি সিস্টেম এখনও তেমন উন্নত না। তাই শুরুর দিকে ডেলিভারি নিয়ে বিপাকে পড়তে হতাে। তখন নিজেরা যেয়েও ডেলিভারি করেছি। তবে এখন ধীরে ধীরে সেগুলাে থেকে বেরিয়ে এসেছি। শুরুতে পরিবারের কেউ সাপাের্ট বা বাঁধা কিছুই দেয় নি। তবে এখন অনেকেই খুব প্রশংসা করে। তার ভিতর আমার বাবা একজন। অনলাইন বিজনেস এর জন্য টেকনিক্যালি অনেক কিছু জানা প্রয়ােজন। আকর্ষণীয় কনটেন্ট, নিজের প্রােফাইলের ব্যবহার, তথাকথিত সেল পােস্ট বর্জন এগুলাে বিষয়ে আমরা গত ১ বছরে নিজেদেরকে দক্ষ করার চেষ্টা করেছি।

আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনাঃ

সব কিছুরই একটা পরিকল্পনা থাকে। আমাদের উদ্যোগ নিয়েও আছে। আমরা চাই কোয়ালিটি ধরে রেখে ধীরে ধীরে আগাতে। সেবা দিয়ে ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই। তাছাড়া আমাদের পুঁজি বৃদ্ধি করে উদ্যোগ কে আরেকটু সুন্দর করে গুছিয়ে নিতে চাই। নিজেদেরকে আরাে বেশি দক্ষ করতে চাই এই বিষয়ে। তাছাড়া চাই ছােট করে হলেও আমাদের The Sugar Bowls এর একটি অফলাইন পেস্ট্রি শপ হােক। আমাদের তৈরিকৃত কেক ঢাকার প্রায় সব ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক এটাই আমাদের স্বপ্ন।

লেখকঃ উদ্যোক্তা আফিয়া
উদ্যোগঃ The Sugar Bowls