একজন সফল কিশোরী উদ্যোক্তা জুম্মা জাফরিন !

একজন সফল কিশোরী উদ্যোক্তা জুম্মা জাফরিন !
Spread the love

একজন সফল কিশোরী উদ্যোক্তা জুম্মা জাফরিন !

একজন সফল কিশোরী উদ্যোক্তা জুম্মা জাফরিন ! যিনি তার পিঠা তৈরির উদ্যোগ নিয়ে বেশ পরিচিত উই গ্রুপে ৷ এই পর্বে আমরা জানবো তার উদ্যোক্তা জীবন সম্পর্কে !

কিশোরী উদ্যোক্তা জুম্মা জাফরিনঃ

আমি জুম্মা জাফরিন । আমি নবাবগন্জ জেলার মেয়ে । আমি বর্তমানে থাকি ঢাকায় । কাজ করছি ঢাকার জুরাইন থেকে মায়ের ফেইসবুক আইডি উম্মেহানি এবং ফেইসবুক পেইজ “বাহারি পিঠা ঘর” থেকে । প্রথমে উই গ্রুপে আমার মা জয়েন হয়েছিলো। কিন্তুু মায়ের আত্মীয়দের কারনে তার উদ্যোগটি ছেড়ে দিতে হলো । যদিও তিনি তখন হাতের কাজ নিয়ে এসেছিলেন । সময়টা ছিলো ২০২০ সালের জুলাই মাসে । কিন্তুু তিনি তখন তেমন এক্টিভ ছিলেননা ।

যেভাবে উই গ্রুপের প্রতি আকৃষ্ট হলামঃ

আমাকে দিয়ে আমার মা উইয়ে মাঝে মাঝে কমেন্ট করাতেন । আর উইয়ে ছিলো আমাদের উদ্যােক্তা জীবনের শুরু । তারপর জানলাম পেইজ খুলতে হবে । আমরা “বাহারি সেলাই ঘর” নামে একটি পেইজ খুলে ফেললাম । উইয়ের এক ভাইয়া আমার হাতের কাজের ড্রেস দেখে উইতে জয়েন হতে বলেছিলো। সেখান থেকেই আমি উইয়ে জয়েন করি । এ ছাড়াও আমার একটি সেলাইয়ের গ্রুপ ছিলো ।

যেভাবে পিঠার রাণীর পরিচিতি পেলামঃ

একদিন খালামনির বাসায় গিয়ে দেখলাম গোস্তের পিঠা খাওয়া হচ্ছে । তখন মাকে এসে বললাম “মা আপনি না আগে গোস্তের পিঠা বানাতেন ? এবারের কুরবানীর গোস্ত দিয়েও বানান । আমার খুব খেতে ইচ্ছে করছে ।” মা তখন গোস্ত দিয়ে পিঠা বানালো । আমি সেখান থেকে কয়েকটা ছবি সুন্দর করে তুলে উইয়ে পোস্ট করলাম । তারপর কয়েকটা পোষ্ট করার পর এক আপু নারায়নগঞ্জ থেকে পিঠার অর্ডার করে ফেলে । আমিতো ভাবতেই পারিনি কেউ পিঠাও কিনে খায় ?

একজন সফল কিশোরী উদ্যোক্তা জুম্মা জাফরিন !
ছবিঃ গোলাপ পিঠা !

তারপর গ্রামের বাড়ি থেকে চাচীর দেওয়া আতপ চাউল ও কুরবানীর গোস্ত দিয়েই শুরু হয় আমার পিঠা নিয়ে কাজ করা । অসাধারণ ফটোগ্রাফি করি আমি । তাই উইয়ের আপুরা ভালোবেসে আমাকে পিঠাররাণী, পিঠার রাজকুমারী, রাণীমাসহ বিভিন্ন নাম দেওয়া শুরু করলো । আমি সেখান থেকেই প্রতিটি পোস্টে পিঠাররাণী যোগ করে পোস্ট করি উইয়ে ।

যেভাবে পিঠাররাণীর উদ্যোগ বাড়তে লাগলোঃ

এক আপুকে নকশি পিঠা দিয়ে লাখপতি হতে দেখেছি । তাই আমারও ইচ্ছে হলো । আমিও ট্রাই করলাম প্রথম নকশি পিঠার । ব্যাস অর্ডারও পেয়ে গেলাম । তখন অবশ্য অনেক গ্রাহক ই নকশি পিঠা চাইতো কিন্তু দিতে পারতাম না । তারপর আসি গোলাপ পিঠার কথায় । মাকে বলতাম গোলাপ পিঠা করবো । কিন্তু আমার মা রাজি হতো না । উনি বলতো, এইগুলো ঝামেলা । তারপর আমি ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখা শুরু করি । আমার প্রথম গ্রাহক ই পুনঃরায় গোলাপ পিঠারও গ্রাহক হন । তারপর থেকে আমার সবচেয়ে বেশি সেল হয় গোলাপ পিঠা ।

নিজের প্রচেষ্টায় উদ্যোগে নতুনত্ব আনাঃ

সবাই নতুন কিছু চায় । তাই মাথায় আসলো ঝিনুক পিঠার কথা । কিন্তু এটাও পারিনা । তারপর এক খালামনি আমাকে শিখিয়ে দিল । প্রথম প্রথম মোটেও পারতাম না, নষ্ট হয়ে যেত । তারপর আমি ঝিনুক পিঠায় ফুড কালার ব্যবহার করতে শুরু করি । উইয়ে এই পিঠা আমারটাই ছিল প্রথম । তাই সেখানে পোস্ট করার সাথে সাথেই তিন হাজার লাইক চলে আসে । অনেক সাড়া পাই তখন । শুরু হয় আমার সেল পুরোদমে । নকশি পিঠা, গোলাপ, ঝিনুক, গোস্তপুলি, নারিকেল পুলি নিয়ে চলতে থাকে আমার কাজ । তারপর নতুন করে সংযোজন করি নারিকেল চিড়ে, বালাচাও, রসুনের আঁচার,বোম্বাই মরিচের আঁচার । যদিও এই আইটেমগুলো তৈরি করেন আমার মা । আমি শুধু মা কে সাহায্য করি ।

নিজের উদ্যোগের সাথে স্কুল জীবনঃ

দেশের করোনা পরিস্থিতির কারনে স্কুল বন্ধ থাকলেও করতে হয়েছে কুচিং ক্লাস । এমনকি বাসায় টিচারও রাখা হয় । কারন, এস.এস.সি তে ভালো রেজাল্ট আমাকে করতেই হবে । সেই প্রবল ইচ্ছে নিয়ে পড়াশুনা ঠিক রেখে প্রতিটা অর্ডার আমি কমপ্লিট করতাম । বোর্ড পরিক্ষা দিতে যাওয়ার আগেও আমি আমার পার্সেলগুলো কমপ্লিট করে মায়ের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে যেতাম । যাতে ডেলিভারি ম্যানকে আমার মা পার্সেল বুঝিয়ে দিতে পারে । আলহামদুলিল্লাহ, একজন গ্রাহককেও বলতে হয়নি “আমার পরীক্ষা, অর্ডার পরে নিবো ।” বরং আমি সকল পরিস্থিতিতেেই অর্ডার নিয়েও পড়াশোনা চালিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ ।

একজন সফল কিশোরী উদ্যোক্তা জুম্মা জাফরিন !
ছবিঃ নকশি পিঠা !

উদ্যোক্তা হওয়ার কারণে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নঃ

পিঠা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আইডি থেকে সব আত্নীয়দের আনফ্রেন্ড করতে হয়েছে । সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে খুব কাছের মানুষদের সাথে । আমরা মা-মেয়ে কারো সাথেই এখন নাই । উই নিয়েই এখন আমাদের সময় যায় । আমাদের উদ্যােগ নিয়েই এখন ব্যস্ততম সময় কাটে । আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি প্যারাময় আত্নীয়দের থেকে দুরে থেকে ।

আমি গর্বিত যে আমি আজ সবার কাছে পিঠার রাণী । আমি ৬০ টাকার পিঠাও বিক্রি করেছি । কখনো কাউকে তাদের বাজেট থেকে ফিরিয়ে দেইনি । যার যতটা প্রয়োজন তা দিয়েছি । আমি শুধু আমার বা আমাদের মা-মেয়ের একটা পরিচয় চেয়েছি । পুরো বাংলাদেশের মানুষ যে পিঠাররাণীকে চিনে, সন্মান করে তা দেখাতে চেয়েছি । তাই হাজারও অপমান সহ্য করেও লেগে আছি ।

পরিশেষে উই আমাদের জীবন পাল্টে দিয়েছেঃ

“উম্মে হানি” মায়ের আইডি থেকে আমি জুম্মা জাফরিন “বাহারি পিঠা ঘর” থেকে সব সময় ই উইতে থাকতে চাই । সাথে অবশ্যই পড়াশোনাও থাকবে । এবার জিপিএ – ৫ নিয়ে এস.এস.সি শেষ করলাম ঢাকা থেকে । আমি লাখপতি হবো এই স্বপ্ন আমাকে উই দেখিয়েছে ।  তাই আমি স্যালুট করি উইকে ।

 

লেখকঃ জুম্মা জাফরিন
উদ্যোগঃ বাহারি পিঠা ঘর
Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/
Top

You cannot copy content of this page