একজন সফল কিশোরী উদ্যোক্তা জুম্মা জাফরিন ! উদ্যোক্তাদের গল্প কিশোর উদ্যোক্তার গল্প by Jannatun Naime - February 5, 20220 Spread the love একজন সফল কিশোরী উদ্যোক্তা জুম্মা জাফরিন ! একজন সফল কিশোরী উদ্যোক্তা জুম্মা জাফরিন ! যিনি তার পিঠা তৈরির উদ্যোগ নিয়ে বেশ পরিচিত উই গ্রুপে ৷ এই পর্বে আমরা জানবো তার উদ্যোক্তা জীবন সম্পর্কে ! কিশোরী উদ্যোক্তা জুম্মা জাফরিনঃ আমি জুম্মা জাফরিন । আমি নবাবগন্জ জেলার মেয়ে । আমি বর্তমানে থাকি ঢাকায় । কাজ করছি ঢাকার জুরাইন থেকে মায়ের ফেইসবুক আইডি উম্মেহানি এবং ফেইসবুক পেইজ “বাহারি পিঠা ঘর” থেকে । প্রথমে উই গ্রুপে আমার মা জয়েন হয়েছিলো। কিন্তুু মায়ের আত্মীয়দের কারনে তার উদ্যোগটি ছেড়ে দিতে হলো । যদিও তিনি তখন হাতের কাজ নিয়ে এসেছিলেন । সময়টা ছিলো ২০২০ সালের জুলাই মাসে । কিন্তুু তিনি তখন তেমন এক্টিভ ছিলেননা । যেভাবে উই গ্রুপের প্রতি আকৃষ্ট হলামঃ আমাকে দিয়ে আমার মা উইয়ে মাঝে মাঝে কমেন্ট করাতেন । আর উইয়ে ছিলো আমাদের উদ্যােক্তা জীবনের শুরু । তারপর জানলাম পেইজ খুলতে হবে । আমরা “বাহারি সেলাই ঘর” নামে একটি পেইজ খুলে ফেললাম । উইয়ের এক ভাইয়া আমার হাতের কাজের ড্রেস দেখে উইতে জয়েন হতে বলেছিলো। সেখান থেকেই আমি উইয়ে জয়েন করি । এ ছাড়াও আমার একটি সেলাইয়ের গ্রুপ ছিলো । যেভাবে পিঠার রাণীর পরিচিতি পেলামঃ একদিন খালামনির বাসায় গিয়ে দেখলাম গোস্তের পিঠা খাওয়া হচ্ছে । তখন মাকে এসে বললাম “মা আপনি না আগে গোস্তের পিঠা বানাতেন ? এবারের কুরবানীর গোস্ত দিয়েও বানান । আমার খুব খেতে ইচ্ছে করছে ।” মা তখন গোস্ত দিয়ে পিঠা বানালো । আমি সেখান থেকে কয়েকটা ছবি সুন্দর করে তুলে উইয়ে পোস্ট করলাম । তারপর কয়েকটা পোষ্ট করার পর এক আপু নারায়নগঞ্জ থেকে পিঠার অর্ডার করে ফেলে । আমিতো ভাবতেই পারিনি কেউ পিঠাও কিনে খায় ? ছবিঃ গোলাপ পিঠা ! তারপর গ্রামের বাড়ি থেকে চাচীর দেওয়া আতপ চাউল ও কুরবানীর গোস্ত দিয়েই শুরু হয় আমার পিঠা নিয়ে কাজ করা । অসাধারণ ফটোগ্রাফি করি আমি । তাই উইয়ের আপুরা ভালোবেসে আমাকে পিঠাররাণী, পিঠার রাজকুমারী, রাণীমাসহ বিভিন্ন নাম দেওয়া শুরু করলো । আমি সেখান থেকেই প্রতিটি পোস্টে পিঠাররাণী যোগ করে পোস্ট করি উইয়ে । যেভাবে পিঠাররাণীর উদ্যোগ বাড়তে লাগলোঃ এক আপুকে নকশি পিঠা দিয়ে লাখপতি হতে দেখেছি । তাই আমারও ইচ্ছে হলো । আমিও ট্রাই করলাম প্রথম নকশি পিঠার । ব্যাস অর্ডারও পেয়ে গেলাম । তখন অবশ্য অনেক গ্রাহক ই নকশি পিঠা চাইতো কিন্তু দিতে পারতাম না । তারপর আসি গোলাপ পিঠার কথায় । মাকে বলতাম গোলাপ পিঠা করবো । কিন্তু আমার মা রাজি হতো না । উনি বলতো, এইগুলো ঝামেলা । তারপর আমি ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখা শুরু করি । আমার প্রথম গ্রাহক ই পুনঃরায় গোলাপ পিঠারও গ্রাহক হন । তারপর থেকে আমার সবচেয়ে বেশি সেল হয় গোলাপ পিঠা । নিজের প্রচেষ্টায় উদ্যোগে নতুনত্ব আনাঃ সবাই নতুন কিছু চায় । তাই মাথায় আসলো ঝিনুক পিঠার কথা । কিন্তু এটাও পারিনা । তারপর এক খালামনি আমাকে শিখিয়ে দিল । প্রথম প্রথম মোটেও পারতাম না, নষ্ট হয়ে যেত । তারপর আমি ঝিনুক পিঠায় ফুড কালার ব্যবহার করতে শুরু করি । উইয়ে এই পিঠা আমারটাই ছিল প্রথম । তাই সেখানে পোস্ট করার সাথে সাথেই তিন হাজার লাইক চলে আসে । অনেক সাড়া পাই তখন । শুরু হয় আমার সেল পুরোদমে । নকশি পিঠা, গোলাপ, ঝিনুক, গোস্তপুলি, নারিকেল পুলি নিয়ে চলতে থাকে আমার কাজ । তারপর নতুন করে সংযোজন করি নারিকেল চিড়ে, বালাচাও, রসুনের আঁচার,বোম্বাই মরিচের আঁচার । যদিও এই আইটেমগুলো তৈরি করেন আমার মা । আমি শুধু মা কে সাহায্য করি । নিজের উদ্যোগের সাথে স্কুল জীবনঃ দেশের করোনা পরিস্থিতির কারনে স্কুল বন্ধ থাকলেও করতে হয়েছে কুচিং ক্লাস । এমনকি বাসায় টিচারও রাখা হয় । কারন, এস.এস.সি তে ভালো রেজাল্ট আমাকে করতেই হবে । সেই প্রবল ইচ্ছে নিয়ে পড়াশুনা ঠিক রেখে প্রতিটা অর্ডার আমি কমপ্লিট করতাম । বোর্ড পরিক্ষা দিতে যাওয়ার আগেও আমি আমার পার্সেলগুলো কমপ্লিট করে মায়ের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে যেতাম । যাতে ডেলিভারি ম্যানকে আমার মা পার্সেল বুঝিয়ে দিতে পারে । আলহামদুলিল্লাহ, একজন গ্রাহককেও বলতে হয়নি “আমার পরীক্ষা, অর্ডার পরে নিবো ।” বরং আমি সকল পরিস্থিতিতেেই অর্ডার নিয়েও পড়াশোনা চালিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ । ছবিঃ নকশি পিঠা ! উদ্যোক্তা হওয়ার কারণে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নঃ পিঠা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আইডি থেকে সব আত্নীয়দের আনফ্রেন্ড করতে হয়েছে । সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে খুব কাছের মানুষদের সাথে । আমরা মা-মেয়ে কারো সাথেই এখন নাই । উই নিয়েই এখন আমাদের সময় যায় । আমাদের উদ্যােগ নিয়েই এখন ব্যস্ততম সময় কাটে । আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি প্যারাময় আত্নীয়দের থেকে দুরে থেকে । আমি গর্বিত যে আমি আজ সবার কাছে পিঠার রাণী । আমি ৬০ টাকার পিঠাও বিক্রি করেছি । কখনো কাউকে তাদের বাজেট থেকে ফিরিয়ে দেইনি । যার যতটা প্রয়োজন তা দিয়েছি । আমি শুধু আমার বা আমাদের মা-মেয়ের একটা পরিচয় চেয়েছি । পুরো বাংলাদেশের মানুষ যে পিঠাররাণীকে চিনে, সন্মান করে তা দেখাতে চেয়েছি । তাই হাজারও অপমান সহ্য করেও লেগে আছি । পরিশেষে উই আমাদের জীবন পাল্টে দিয়েছেঃ “উম্মে হানি” মায়ের আইডি থেকে আমি জুম্মা জাফরিন “বাহারি পিঠা ঘর” থেকে সব সময় ই উইতে থাকতে চাই । সাথে অবশ্যই পড়াশোনাও থাকবে । এবার জিপিএ – ৫ নিয়ে এস.এস.সি শেষ করলাম ঢাকা থেকে । আমি লাখপতি হবো এই স্বপ্ন আমাকে উই দেখিয়েছে । তাই আমি স্যালুট করি উইকে । লেখকঃ জুম্মা জাফরিন উদ্যোগঃ বাহারি পিঠা ঘর