ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের খেশ শাড়ির জনপ্রিয়তা ! টাঙ্গাইলের তাঁত by Jannatun Naime - August 26, 2021January 28, 20220 Spread the love ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের খেশ শাড়ির জনপ্রিয়তা ! ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের খেশ শাড়ির জনপ্রিয়তা ! রুপ নয় গুনেই যার বাহার ৷ বাঙ্গালীর ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে নানা ধরনের কাপড়ে তৈরি পোশাক ৷ সেই সাথে জড়িয়ে রয়েছে হাজারো গল্প , ইতিহাস ও ঐতিহ্য ৷ অনেকেই হয়তো খেশ নামটি শুনেছেন আবার কারো কারো কাছে হয়তো নামটি নতুন । চলুন জেনে নেই খেশ শাড়ি সম্পর্কে ! পুরোনো সূতি কাপড়কে ছিঁড়ে ছিঁড়ে ছোট সরু দড়ির মত পেছিয়ে পেছিয়ে ফালি করে তা দিয়েই তৈরি করা হয় একেকটি খেশ শাড়ি । একেকটি পুরোনো সূতি শাড়ি থেকে ৮০ থেকে ৮৫ টি লাছি সুতো বেরোয় । আর যে সুতো দিয়ে এই শাড়িগুলো বোনা হয় তা তৈরি হয়ে আসে নবদ্বীপ থেকে । এই শাড়ি বুননে নারীদের অবদান কোন অংশে কম নয় । একেকটি পুরোনো সূতি শাড়ি থেকে ৮০ থেকে ৮৫ টি লাছি সুতো বের করে তা রং করে চরকায় ফেলে সমান করে বসানো হয় ৷ তাঁতেও বোনা হয় সুতির কাপড়ের ফালি । বেশ সময়সাপেক্ষ ও পরিশ্রমসাধ্য এই কাজ । একেকজন শিল্পী সারাদিনে দুই থেকে তিনটি শাড়ি তৈরী করতে পারেন । ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের খেশ শাড়িঃ যেহেতু বাঙ্গালীর ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে জামদানী, মনিপুরী, তাঁত, খাদী, মসলিনসহ নানা ধরনের কাপড়, সেই সাথে মিশে আছে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী ‘খেশ’ ৷ খেশের অতীত ইতিহাস ঘাটলে জানা যাবে খেশের সাথে জড়িয়ে আছে হাজারো গল্প, হাজারো ইতিহাস ৷ আর এই গল্প , ইতিহাস , ঐতিহ্য বাঙ্গালীদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে বহু বছর ধরে ৷ খেশের সাথে জড়িয়ে আছে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম ৷ রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগের ফলেই “বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের” শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় ফুটে উঠে খেশের নান্দনিক ডিজাইন ৷ বীরভূম জেলার তাঁতীদের মতে , বিশ শতকের প্রাথমিক পর্যায়ে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্প সদনে খেশের কাজের হাতেখড়ি দেওয়া হয়েছিল তাদের পূর্ব পুরুষদের ৷ খেশ দিয়ে শুধু শাড়িই তৈরি হয় না ৷ সেই সাথে তৈরি হয় চাদর, ওড়না, ব্যাগ, পর্দা, কুশন ইত্যাদি ৷ একটি সিঙ্গেল বেডের চাদরের জন্য ছয়টি কাপড়ের প্রয়োজন হয় আর ডাবল বেডের জন্য লাগে ১২ টি ৷ খেশ শাড়িগুলো বেশির ভাগ ই এক রঙ্গা হয়ে থাকে ৷ এর মূল বৈশিস্ট্য হলো পুরাতন কাপড় । তবে বর্তমানেও খেশে এসেছে নানান রকমের বৈচিত্র্য ৷ খেশের সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্ক ঠিক কতটুকু ছিল তা একেকজনের কাছে একেক মতামত থাকলেও তার অবদান কখনোই অস্বীকার করা যাবেনা। বরং সব সময় ই রয়ে যাবে ৷ খেশ শুধুমাত্র তার সৌন্দর্য্য বা ঐতিহ্যের দিক থেকে নয়, সেই সাথে পুরাতন কাপড়ের ব্যবহার নিশ্চিত করার ফলেই বর্তমানে বহু তাঁতি খেশ কাপড় তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ! তাই তো দিন দিন খেশের জনপ্রিয়তা ও চাহিদাও বেড়ে চলেছে ৷ আর এভাবেই একদিন খেশের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও পৌছে যাবে ৷ খেশ শাড়ির জনপ্রিয়তাঃ শাড়ি হলো বাঙ্গালী নারীর অবিচ্ছেদ্য অংশ ৷ শাড়ি প্রেমী নারীরা চায় সব সময় ই তার আলমারিতে কিছু শাড়ি গচ্ছিত থাকুক ৷ আর তা যদি হয় খেশ শাড়ি তাহলে তো আর কথাই নেই ৷ বর্তমান সময়ে খেশ শাড়ি জায়গা করে নিয়েছে নারীদের মনে ৷ খেশের নানা সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্যতা মুগ্ধ করেছে সকল শাড়ি প্রেমীদের ৷ এ যেন বৈচিত্র্য ও আভিজাত্যে পরিপূর্ন ৷ তাই এর জনপ্রিয়তাও বেড়েছে দ্বি’গুন ৷ তবে খেশ শাড়ি শুধু দেখতেই সুন্দর নয় পরতেও অনেক আরাম ! যে কোন পরিবেশে, বিয়েতে, পার্টিতে এই শাড়িগুলো বেশ মানিয়ে যায় ৷ এলিগেন্ট লুক চলে আসে ৷ শাড়ির কুছিগুলোও হয় গোছানো ও পরিপাটি ৷ তাই এলোমেলো হওয়ারও সম্ভাবনা খুব কম ৷