কিশোর উদ্যোক্তা রাফি ইসলাম রিশাদ ! উদ্যোক্তাদের গল্প সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তার গল্প by Jannatun Naime - October 4, 2021October 5, 20210 Spread the love কিশোর উদ্যোক্তা রাফি ইসলাম রিশাদ ! উদ্যোক্তাদের গল্প শুধু গল্পই হয় না ৷ রয়েছে হাজারো অনুপ্রেরনা ৷ আজ জানবো এমন ই একজন কিশোর উদ্যোক্তা রাফি ইসলাম রিশাদ এর গল্প । যে কিনা কিশোর বয়সেই শুরু করেছেন তার উদ্যোক্তা জীবন ৷ যেখানে এই বয়সটায় সাধারনত কিশোর-কিশোরীদের জন্য গল্প-গুজব, আড্ডা, খেলাধুলা, হৈ-হুল্লোড় করে সময় কাটানোর সময় ৷ সেখানে এই কিশোর উদ্যোক্তা পড়াশুনার পাশাপাশি শুরু করেছেন তার উদ্যোক্তা জীবন, তার কর্ম জীবন ৷ আজ আমরা জানবো তার ই উদ্যোক্তা জীবনের গল্প ৷ কিশোর উদ্যোক্তা রাফি ইসলাম রিশাদঃ আমি রাফি ইসলাম রিশাদ। উত্তরবঙ্গের একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘দশম শ্রেণি’ তে অধ্যয়নরত। আমার জন্মস্থান দিনাজপুর জেলায় । নবম শ্রেণিতে থাকাকালীন কোভিডের জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে এবছর ই বন্ধের শেষ চারমাসে শুরু করেছি আমার উদ্যোক্তা জীবন । বিজনেসটি চলছে অনলাইনের মাধ্য়মে । এখন স্কুল খোলায় বিজনেস ও স্কুল সব মিলিয়ে দৌড়ের ওপর কাটছে আমার দিনগুলো এবং আমি চাই এই উদ্যোগকে আঁকড়ে ধরেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে । সাড়ে ৪ মাসের যাত্রায় লাখপতির কিনারেঃ চারমাস আগেও কখনো মাথায় আনার সাহস হয়নি যে, নিউ টেনে পড়াশুনায় থেকে অনলাইন বিজনেস করব । অনলাইন বিজনেস সম্পর্কেও কিঞ্চিৎ ধারণাও ছিলোনা আমার । তারপরও আজ আমি লাখপতি হওয়ার পথে আলহামদুলিল্লাহ ! কিশোর উদ্যোক্তা রাফি ইসলাম রিশাদ আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরুর গল্পঃ আজ থেকে প্রায় সারে চারমাস আগে এক প্রাইভেট টিচারের গায়ে প্রথম হ্যান্ডপেইন্ট করা পান্জাবী দেখি । পান্জাবীটা দেখে খুব একটা আগ্রহ হয়নি । কেননা কাজটা ততটাও ভালো লাগেনি । তবুও স্যারকে জিজ্ঞেস করায় স্যার বললো কোন এক স্টুডেন্ট নিজ হাতে করে বানিয়ে গিফ্ট করেছে । তারপর বাসায় এসে অনলাইনে হ্যান্ডপেইন্ট সম্পর্কে বিভিন্ন লেখা, ভিডিও দেখে ভালোই লাগলো । তার আগে কোন ধারণাই ছিলো না যে কখন কোন রং, কোন ক্য়ামিকেল ব্যবহার করতে হয় । তবে আঁকাআকি বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ছিলো আমার । ছোটবেলা থেকেই প্রচুর আঁকাআকি করতাম । একাডেমিতে কোর্সও করেছিলাম । স্কুল থেকে উপজেলা, জেলা এমন কি বিভাগীয় পর্যায়েও অনেক প্রতিযোগিতা করেছি । অনেক খুজে বাজার থেকে রং তুলিসহ প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আমার আর আমার এক বন্ধুর জন্য সেম পান্জাবী বানালাম । তারপর পান্জাবীটি দেখে আমার এক অন্য বন্ধু অনুরোধ করায় তার পারিবারের সকল সদস্যের জন্য মোট ৪ টা পান্জাবী বানিয়ে গ্রুপে দিতেই ব্যাপক সাড়া পাই । আমার উদ্যোক্তা জীবনঃ সবাই জানতে চায় আমার পেইজের নাম কি? কিন্তু আমার তো কোন পেইজই ছিলোনা । আর কখনো এটা প্রফেশনালি করব সেই চিন্তা মাথায়ও আনিনি । কোন চিন্তাভাবনা না করেই পেইজ খুলে ফেললাম । অর্ডার আসতে শুরু করল একের পর এক । শুরুর দিকে কুরিয়ার+মার্কেটিংয়ে অনেক প্রবলেম হতো । টুকটাক কাজ করতে করতে ঈদুল-আযহা চলে এসেছিল । ঈদে এতো বেশি অর্ডার আসবে তা কল্পনাও করতে পারিনি । ঈদ উপলক্ষ্যে প্রায় ৪০-৫০ পিস পান্জাবিতে কাজ করতে হয়েছে । পর পর দুইদিন নির্ঘুম রাত কেটেছে আমার । কাজের এতো প্রেসার নিয়ে ঈদ পার করে প্রায় মাস খানেক কাজ বন্ধ রেখেছিলাম । তারপর আবার শুরু করি । গেলো মাসে আমার পেইজ থেকে প্রায় ২৭,০০০ টাকার অর্ডার কনফার্ম হয়েছে । লকডাউনে বাসায় থাকায় সুবিধা হতো কিন্তু এখন স্কুল, প্রাইভেট খুলে যাওয়ায় স্কুল, প্রাইভেট, পড়া, পেইন্টিং, ডেলিভারি সব মিলিয়ে সারাদিন দৌড়ের ওপর থাকতে হয় । সকাল ৯টা থেকে ২ টা পর্যন্ত টানা স্কুল করে তারপর প্রাইভেট +পড়া +কুরিয়ার সামলিয়ে রাতে কাজে বসে ২/৩ টা পর্যন্ত কাজ নিয়েই চলছে আমার বর্তমান পরিস্থিতি । উদ্যোক্তা রাফি ইসলাম রিশাদ এই পর্যন্ত আমার পেইজ ” নকশীহাট ” এর মোট সেল ৭৩,০০০ হাজার টাকা । ইনশাআল্লাহ সকলের দোয়া সাথে থাকলে খুব শীগ্রই লাখপতির মাইলফলক ছুঁতে পারবো । যে পেইজ খোলা নিয়ে কোন ধারণাই ছিলোনা ! চারমাসে সেই পেইজের ফলোয়ার প্রায় ৩ হাজার । দিন দিন তা বেড়েই চলেছে । আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনাঃ ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় প্রথম সারির স্টুডেন্ট হওয়ায় বাবা-মায়ের প্রবল ইচ্ছে ছেলেকে ইন্জিনিয়ার বানানো । আমারো ইচ্ছে ইন্জিনিয়ার হওয়া । ভবিষ্যতে ইন্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা আছে । পড়াশোনা মেইন ফোকাস হলেও তার পাশাপাশি অবশ্যই নিজের উদ্যোগকে বড় করার পরিকল্পনা সর্বদাই থাকবে । ইনশাআল্লাহ সকলের দোয়া সাথে থাকলে হ্যান্ডপেইন্ট ও ফ্যাশন ডিজাইনিং জগতেও নিজেকে একদিন অন্য মাত্রায় নিয়ে যাব । একজন সফল উদ্যোক্তা হতে কখনো বয়সে থেমে থাকে না বরং প্রয়োজন প্রবল ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য, ও পরিশ্রমী হওয়া । এই তিনটার সমন্বয় সাধণ করতে পারলেই আপনিও হতে পারেন একজন সফল উদ্যোক্তা । কাউকে অনুকরণ নয় বরং অনুসরণ করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে । জীবনের প্রথম উপার্জনের ১৫ হাজার টাকা যেদিন বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলাম ! সেদিন যে কি যে আনন্দবোধ কাজ করেছিলো তা ভাষায় বলে বোঝানো অসম্ভব । কিন্তু আমার পরিবারের একমাত্র কথা যাই করো না কেন, পড়ালেখা ঠিক রেখেই সব করতে হবে । আমার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প পুরোটা পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ । সবাই ভালো থাকবেন এবং আমার ভবিষ্যতের জন্য দোয়া করবেন ! যেন, পড়াশোনার পাশাপাশি সর্বদা আমার উদ্যোগকে চালিয়ে যেতে পারি এবং আরো বড় পরিসরে করতে পারি ! লেখকঃ রাফি ইসলাম রিশাদ উদ্যোগঃ নকশীহাট