জামদানি শাড়িঃ আসল জামদানি শাড়ি চিনবেন কিভাবে ?

জামদানি শাড়িঃ আসল জামদানি শাড়ি চিনবেন কিভাবে ?
Spread the love

জামদানি শাড়িঃ আসল জামদানি শাড়ি চিনবেন কিভাবে ?

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয় জামদানিকে ৷ তাই তো বাঙ্গালী ললনাদের সংগ্রহে জামদানি শাড়ি থাকবেনা, তা কি হয়  নান্দনিক ডিজাইন এবং দামে বেশি হওয়ায় জামদানির সাথে রয়েছে ঐতিহ্য, আভিজাত্য ও রুচিশীলতার এক বৈচিত্র্যময় সম্পর্ক ৷ তাইতো জামদানীকে বলা হয় ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের প্রতীক৷ এই শাড়ির নকশা আর বুননের বৈচিত্র্যতার কারণে ২০১৬ সালে জামদানিকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়৷

নারী মানে শাড়ি আর শাড়ি মানেই জামদানি শাড়ি৷ বাঙ্গালী নারীদের নারী চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে এই শাড়ির কোন জুড়ি নেই৷ প্রায় সকল বয়সী সকল নারীদের ই পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে জামদানি শাড়ি৷ তাই এর অবদান কোন অংশে কম নয় ৷ তবে জামদানিতে এখন আর শুধু শাড়িই তৈরি হয়না ৷ পাশাপাশি জামদানি ল্যাহেঙ্গা, গাউন, ওয়ান-পিছ, টু-পিছ, শেরওয়ানি, কটি, পাঞ্জাবী, স্কার্পও তৈরি হচ্ছে ৷ এ ছাড়াও বিয়েতে পরার জন্য ব্রাইডাল জামদানি শাড়ি, ল্যাহেঙ্গা ও শেরওয়ানিও তৈরি হচ্ছে এবং তা সম্ভব হচ্ছে দুই জন তাঁত শিল্পীর সুনিপুন দক্ষ হাতের পরিশ্রমের ভিত্তিতে ৷ তাদের এই পরিশ্রম, মেধা, দক্ষতা আর চেষ্টার ফলে আমরা পাই নান্দনিক সব ডিজাইনের জামদানি শাড়ি৷

আরও পড়ুনঃ ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও আভিজাত্যে জামদানি শাড়ি !

কিন্তু বর্তমান সময়ে জামদানির চাহিদা অধিক পরিমান বেড়ে যাওয়ায় আজকাল বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে আসল জামদানির নামে বিক্রি হচ্ছে নকল জামদানি শাড়ি৷ ঢাকাইয়া জামদানির নাম উল্লেখ করে বিক্রেতারা ভারতীয় কটন, টাঙ্গাইলের তাঁত, পাবনা ও রাজশাহীর সিল্ক শাড়িগুলো তুলে দিচ্ছেন ক্রেতাদের হাতে ৷ যার ফলে ক্রেতারা ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷ তাই ক্রেতাদেরও জানতে হবে কোনটি আসল জামদানী আর কোনটি নকল জামদানী ৷ তাই সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আজকের এই কনটেন্টটির মাধ্যমে তুলে ধরবো কোনটি আসল জামদানি আর কোনটি নকল জামদানি ৷

আসল জামদানি শাড়ি চেনার সহজ উপায়ঃ

জামদানি শাড়ি কেনার আগে যেই তিনটি বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো – শাড়ির দাম, সুতার মান এবং কাজ বা নকশার সুক্ষ্মতা ৷ আপনি যেই শাড়িটিই কিনতে চাননা কেন সেই শাড়িটির সুতার মান কেমন, নকশার সুক্ষ্মতা কেমন, শাড়ির দাম কেমন এই সবকিছু বিবেচনা করেই কিনতে হবে ৷ তাহলেই বুঝতে পারবেন কোনটি আসল জামদানি শাড়ি ৷ তারপরও আমরা আরো কিছু তথ্য তুলে ধরছি যার মাধ্যমে আপনারা খুব সহজেই আসল-নকল জামদানি চিনতে পারবেন !

১৷ আসল জামদানি শাড়িগুলো হয় হ্যান্ডলুমের আর নকল জামদানিগুলো হয় পাওয়ারলুমে ৷ অর্থাৎ আসল জামদানি শাড়িগুলো ১০০% ই হাতের সাহায্যে বুনা হয়৷ যার ফলে একেকটি শাড়ি তৈরি করতে সময় লাগে সর্বনিম্ন ৭ দিন আর সর্বোচ্চ শাড়ি ভেদে ৬ মাসও লেগে যায়৷ আর নকল জামদানি শাড়িগুলো তৈরি করা হয় মেশিনের সাহায্যে ৷ যার ফলে সপ্তাহে ৮ থেকে ১০টি কিংবা এর চেয়েও বেশি শাড়ি তৈরি করা যায়৷

আরও পড়ুনঃ ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের খেশ শাড়ির জনপ্রিয়তা !

২৷ আসল জামদানি তৈরি করা হয় তাঁত শিল্পীদের দীর্ঘ পরিশ্রমের ফলে আর পাওয়ারলুমের জামদানি শাড়িগুলো মেশিনে তৈরি করা হয় বলে এই শাড়ি তৈরিতে তেমন কোন পরিশ্রম হয় না এবং সময়ও খুবই কম লাগে৷

৩৷ একেকটি শাড়ি তৈরি করতে দুইজন কারিগরের প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা সময় দিতে হয়৷ ডিজাইনভেদে একেকটি শাড়ি তৈরিতে সর্বনিম্ন ৭ দিন সময় লাগে আর সর্বোচ্চ ৬ মাস ৷ কিন্তু পাওয়ারলুমের শাড়ি তৈরিতে কোন কারিগরকে দীর্ঘ সময় ধরে পরিশ্রম করতে হয় না ৷ সেইগুলো মেশিনের সাহায্যেই তৈরি হতে থাকে ৷

জামদানি শাড়িঃ আসল জামদানি শাড়ি চিনবেন কিভাবে ?
ছবিঃ জামদানি শাড়ি !

৪৷ সাধারণত হাতে বোনা বা হ্যান্ডলুমের শাড়িগুলোর দাম শাড়ি তৈরির সময়, সূতার মান, কাজের সুক্ষ্মতার উপর নির্ভর করে ৩,০০০ (৩ হাজার) টাকা থেকে এক লাখ ২০,০০০ (২০ হাজার) টাকা বা তার চেয়েও বেশি হয়ে থাকে ৷ অন্যদিকে পাওয়ারলুমের বা মেশিনের তৈরি শাড়িগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম হয়ে থাকে৷

৫৷ আসল জামদানি শাড়িগুলো তাঁতে বুনা হয় বলে এর ডিজাইনগুলো হয় খুবই সূক্ষ্ম, নিখুঁত ও মসৃণ৷

৬৷ আসল জামদানি শাড়ির দু’টো পিঠই একই রকম হয়ে থাকে৷ এই শাড়িতে উল্টা পিঠ বুঝা যায় না৷ বরং সামনের অংশ এবং পেছনের অংশ প্রায় একই রকম হয়ে থাকে৷ আর মেশিনে তৈরি করা শাড়িগুলোর উল্টা পিঠের সূতাগুলো কাটা থাকে এবং খসখসে ভাব থাকে৷

আরও পড়ুনঃ মানানসই পোশাক নির্বাচন করবেন কিভাবে ?

৭৷ আসল জামদানি শাড়ির বুননে দুই ধরনের সূতা ব্যবহৃত হয়ে থাকে ৷ এক, কটন বা সূতি সূতা ৷ দুই, সিল্ক বা রেশম সূতা ৷

৮৷ জামদানি শাড়ি চেনার আরেকটি বিশেষ উপায় হলো শাড়ির পাড় এবং কোমরে প্যাচানো অংশ ৷ এই শাড়িগুলোর ৫ হাতের শাড়িতে কোন প্রকার পাড় থাকেনা ৷ কিন্তু মেশিনে বুনা শাড়ির পুরোটা জুড়েই পাড় থাকে৷

৯৷ হ্যান্ডলুমে বা হাতে বোনা জামদানি শাড়ি ওজনে হালকা হয়ে থাকে এবং পরতেও অনেক আরাম ৷ খুব সহজেই বহন করা যায় ৷ অন্যদিকে পাওয়ারলুমে বা মেশিনে বুনা শাড়িগুলো কৃত্রিম সুতায় তৈরি হয় বলে এই শাড়িগুলো ওজনে ভারি ও খসখসে হয় ৷

১০৷ আসল জামদানি তৈরিতে কারিগররা প্রতিটি সূতা হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বুনে থাকেন ৷ এতে সূতার কোনো অংশ বের হয়ে থাকে না ৷ কিন্তু মেশিনে বুনা শাড়িগুলোতে শুধুমাত্র জামদানির অনুকরণে হুবহু নকশা সেঁটে দেওয়া হয় ৷ যার ফলে উল্টো পিঠের সূতাগুলো কাটা কাটা অবস্থায় বের হয়ে থাকে এবং খসখসে ভাবও অনুভব হয়৷

তাই জামদানি শাড়ি কেনার সময় অবশ্যই ভালোভাবে জেনে-বুঝে কিনে নিতে হবে ৷ যাতে করে হ্যান্ডলুম শাড়ি ও পাওয়ারলুম শাড়িগুলো খুব সহজেই চেনা যায় ৷

আমাদের জামদানির উদ্যোগ-
Style Icon Fashion.

Avatar
Jannatun Naime
This is Jannatun Naime. I live in Dhaka, Bangladesh area. My hometown is Chandpur District. I am an Entrepreneur ,Teacher, Blogger and Media Activist. Also a freelancer. These are Graphics Design, Digital Marketing, Video Editing, Content Writing, Content Creator, SEO expert etc with 5 years of experience in the field. I always ‍like to read and write any subject. This website is my personal website. I am a woman who always loves to learn new things and spread it through writing. That’s why I started this blog. The main focus of my writing is to know and write about my country, my district, travel story, freelancing, information and communication technology, science, e-commerce, weaving and crafts, entrepreneurs story, our lifestyle, our cuisine etc. https://jannatunnaime.com
https://jannatunnaime.com/
Top

You cannot copy content of this page